রক্তিম সূর্য উদিত হওয়ার আগেই পাখির কলরবে চারপাশ মুখরিত হয় পশ্চিম ডাঙ্গাপাড়া। ভোরের আলো স্পষ্ট হতেই বেড়িয়ে পড়ে খাবারের সন্ধানে, নীড়ে ফেরে সেই সন্ধ্যায়। দিনান্তে সাঁঝের মায়ার সাথে তাল মিলিয়ে কিচিরমিচির করতে থাকে পাখিরা। তাদের কলতানে যেন সারাগ্রাম জুড়ে মুগ্ধতা ছড়ায়; অবশ্য গ্রামের বাসিন্দারাও বেশ উপভোগ করেন সকাল-সন্ধ্যা পাখিদের কলরব।
পাখিদের সমবেত বসবাসে অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার পশ্চিম ডাঙ্গাপাড়া গ্রাম। গোধূলির রঙ ডানায় মেখে কলকাকলি করে নীড়ে ফেরে ঝাঁকে ঝাঁকে পানকৌড়ি, ডাউকি (কর্ণক্রেক), লাইট হেরন (লাইট র্যাভেন), কানি বক, গো বক, জাতুয়া বক ও সাদা বক। দিনের ক্লান্তি শেষে দল বেঁধে নিরাপদ আশ্রয় ডাঙ্গাপাড়ায় ফেরে পাখিরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাখিদের অবাধ বিচরণ, খুনশুটি আর কলরবে সারাগ্রাম মুখরিত। পানকৌঁড়ি, সাদা বক ছাড়াও শামুকভাঙা, শালিক, ঘুঘু, দোয়েল, চড়ুই, টুনটুনি, পাতিকূট, শামুকখোলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলকাকলিতে মুখরিত ডাঙ্গাপাড়া এলাকা। বাঁশ বাগানে উপর দিয়ে ডানা ঝাপটে উড়ে বেড়াচ্ছে তারা। পাখিদের কোলাহল চারদিকে দারুণ দ্যোতনার সৃষ্টি করে। সেখানে উপস্থিত হলেই কেবল বোঝা যায়, কি সুন্দর নান্দনিক এক অপরূপ দৃশ্য। তাই তো প্রকৃতিপ্রেমীরা বৈচিত্র্যময় এ দৃশ্য দেখতে ভিড় জমান প্রতিদিন।
আরিফ নামে এক দর্শনার্থী জানান, শুনলাম এই ডাঙ্গাপাড়ায় নাকি অনেক পাখি এসেছে। তাই এই পাখিগুলো দেখার জন্যই এসেছি। একসঙ্গে এতগুলো পাখি এর আগে দেখা হয়নি। দেখে খুবই ভালো লাগলো। তবে পানকৌঁড়ি ও বকের ডানা ঝাপটানোর দাপট না থাকায় একটু খারাপ লেগেছে। পাখিদের জন্য ডাঙ্গাপাড়ার বাঁশ বাগানে জায়গা সংকুলান নয় বিধায় তারা আশপাশের বিভিন্ন বাড়ির আম, জাম, নারকেল কিংবা কড়াইগাছে ঠাঁই নিচ্ছে।
স্থানীয় মিনতি রানী জানান, শুধু গাছে নয়, ঝড়-বাদলে পাখিগুলো বসতঘরে ঢুকে পড়ে। চৌকির আশপাশ দখল করে নেয়। তাড়িয়ে দিলে আবারো ফিরে আসে। তখন এদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়। এই বিপদের সময় পাখিগুলো এমন মায়াভরা চোখে তাকিয়ে থাকে, দেখলে বড্ড কষ্ট লাগে।
মেনহাজ উদ্দিন জানান, নভেম্বর-ডিসেম্বর ও জানুয়ারির দিকে পাখির সংখ্যা অনেক বেশি থাকে। এ সময় শীতকাল হওয়ায় বকের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
বাঁশ বাগানের মালিক শেখ সাহেব বলেন, তিন একর ২০ শতক জমির বাঁশ বাগানের পুরোটাই পাখিদের আবাস। এখানে প্রায় শত বছর ধরে পানকৌঁড়ি ও সাদা বক বাস করছে। আমার দাদার বাবার সময় থেকে এখানে পাখিগুলো আছে। পাখিদের নিজ সন্তানের মতো মনে করি বিধায় বাগানের কোনো বাঁশ কাটি না। তবে, কিছু অসাধু লোক মা পাখিদের শিকার করায় বাচ্চাসহ মা পাখিরা মারা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দিন দিন বাঁশঝাড় কমে যাচ্ছে। অর্থের অভাবে বাঁশঝাড়ে নতুন মাটি দেওয়া যাচ্ছে না। তাই নতুন বাঁশও বাড়ছে না। পাখিদের খাবার কমে যাচ্ছে।
বন বিভাগের ডোমার রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান ব্রেকিংনিউজকে বলেন, পাখি শিকার থেকে বিরত থাকতে প্রচারণা চালাচ্ছি। আমরা বিভিন্ন ক্যাম্পিং করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি আশা করি পজেটিভ ফলাফল আসবে। আর পাখির অভয়ারণ্য করার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে কথা বলবো।