প্রাইভেট কারের ভেতর গামছা, স্কচটেপ আর ধারাল অস্ত্র নিয়ে প্রতি রাতে যাত্রীবেশে ফাঁদ তৈরি করে তারা। এই ফাঁদে পা দিয়ে ইতোমধ্যেই অর্থসম্পদ হারিয়েছে অসংখ্য সাধারণ মানুষ। লুটেরা চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে দাবি করেছে নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
সোমবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আল-আমিন মিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সম্প্রতি এক ব্যাংকার ও আরেক ডাক্তারকে প্রাইভেট কারে উঠিয়ে সর্বস্ব ছিনতাইসহ এটিএম কার্ডের মাধ্যমে বুথ থেকে টাকা উত্তোলনের ঘটনায় জেলাজুড়ে বিশেষ নজরদারি বাড়ায় পুলিশ।
ওই দুই ভুক্তভোগীর মামলায় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল রোববার চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হলো বরগুনার আমতলী থানার বলইবুনিয়া গ্রামের নজরুল মৃধা, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার দক্ষিণ নগর গ্রামের আবদুর রাজ্জাক, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাধাকানাই গ্রামের তারেক মিয়া ও দিনাজপুরের চিরিরবন্দর থানার রফিকুল ইসলাম। তাদের সবাই গাজীপুরে বিভিন্ন বাড়িতে ভাড়া থাকত।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে পূবালী ব্যাংকের কর্মকর্তা ভুক্তভোগী আল-মামুন ভৈরবের দুর্জয় মোড় থেকে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশে একটি প্রাইভেট কারে ওঠেন। ওই প্রাইভেট কারে চালকসহ যাত্রীবেশে চার ছিনতাইকারী ছিল।
কিছু দূর যাওয়ার পর ছিনতাইকারীদের একজন ‘বমি বমি লাগছে’ জানিয়ে মামুনকে জানালার পাশের আসনটি ছেড়ে দিতে অনুরোধ করে। তার কথায় মামুন জানালার পাশের সিট ছেড়ে মাঝখানে বসার কিছুক্ষণ পরই গামছা দিয়ে তার হাত-পা ও চোখ বেঁধে ফেলে যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীরা।
এ অবস্থায় হত্যার হুমকি দিয়ে মামুনের সঙ্গে থাকা মানিব্যাগ, মোবাইল ফোন ও পূবালী ব্যাংকের একটি এটিএম কার্ড নিয়ে নেয় তারা। পরে মারধর ও ভয় দেখিয়ে কার্ডের পিন নম্বর নিয়ে মোট ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা উত্তোলন করে মামুনকে নরসিংদীর বাবুর হাট শেখেরচর বাজার এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় নরসিংদী মডেল থানার মামলা করেন আল-মামুন।
এ ছাড়া জেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালে কর্মরত ডা. হেলাল আহমদ ৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় পারিবারিক প্রয়োজনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাওয়ার পথে ইটাখোলা থেকে একটি প্রাইভেট কারে ওঠেন। সেদিনও প্রাইভেট কারে থাকা ড্রাইভারসহ যাত্রীবেশে চার ছিনতাইকারী ছিল ওই গাড়িটিতে।
কিছুক্ষণের মধ্যে কৌশলে এটিএম কার্ডসহ সব ছিনিয়ে নিয়ে বেলাব থানাধীন নারায়ণপুর এলাকায় রাস্তার পাশে চোখ বাঁধা অবস্থায় হেলালকে ফেলে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় তিনিও শিবপুর মডেল থানায় একটি মামলা করেন।
এই দুটি অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে প্রায় ৪৮টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণসহ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশ।
গ্রেপ্তারের সময় ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত প্রাইভেট কারসহ লুণ্ঠিত অর্থের কিছু অংশ এবং তাদের বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, পূবালী ব্যাংক কর্মকর্তাকে ছিনতাইয়ের ঘটনায় পলাতক আসামি জুয়েল হাওলাদার অন্য একটি ছিনতায়ের ঘটনায় ময়মনসিংহের কোতয়ালি থানায় গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে ছিল। চুরি, ডাকাতি, ছিনতায়ের ৪টি মামলা থাকায় জুয়েলকে ওই মামলায় শিগগিরই শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হবে।
এ ছাড়া গ্রেপ্তার হওয়া নজরুলের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও নারী নির্যাতনের অভিযোগে ৪টি মামলা ও আসামি রাজ্জাকের বিরুদ্ধে ১টি মামলা রয়েছে।
সোমবার গ্রেপ্তার চারজনকেই আদালতে তোলা হয়।