1. khandakarshahin@gmail.com : Breaking News : Breaking News
  2. laxman87barman@gmail.com : laxman barman : laxman barman
  3. shahinit.mail@gmail.com : narsingdi : নরসিংদী প্রতিদিন
  4. msprovat@gmail.com : ms provat : ms provat
  5. hsabbirhossain542@gmail.com : সাব্বির হোসেন : সাব্বির হোসেন
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৬:১০ অপরাহ্ন

বিজ্ঞাপণ দিতে ০১৭১৮৯০২০১০

তেলবাজির রাজনীতি

মতামত ডেস্ক | নরসিংদী প্রতিদিন-
  • প্রকাশের তারিখ | সোমবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২২
  • ৩৬৬ পাঠক

তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সবকিছুর দাম বেড়েছে। কিন্তু তেলের ব্যবহার তাতে কমেনি। এমনকি তেলবাজিও কমেনি। তেলবাজিটা এখন রাজনীতির ময়দানেও জেঁকে বসেছে। আমাদের নেতা-নেত্রীদের চারপাশে পঙ্গপালের মতো ভক্তকুল ঘুর ঘুর করে। একদণ্ডও তাদের একা হতে দেয় না। তাদের শয়নে-স্বপনে-জাগরণে চারদিকে ভক্ত-অনুসারীদের ভিড়।

এই অনুসারীদের মধ্যে কে কার চেয়ে বড় ভক্ত, কে নেতা বা নেত্রীর সবচেয়ে কাছের, সেটা নির্ণয় করা দুঃসাধ্য। কারণ প্রত্যেক অনুসারীই নেতা বা নেত্রীর জন্য জান-কোরবান করতে সারাক্ষণ প্রস্তুত। প্রকৃত বিপদের সময় নেতা বা নেত্রীর জন্য কয়জন জান দেবেন, সে প্রশ্ন থাকলেও মুখে মুখে প্রত্যেকে যেন একেকজন রামভক্ত হনুমান। হৃদয়ে ওই নেতা বা নেত্রী ছাড়া কেই নেই, কিছু নেই। এই যে লোক- দেখানো আনুগত্য, প্রেম, ভক্তি, আমাদের নেতা-নেত্রীরা কি তা জানেন না? নিশ্চয়ই জানেন। না জানার কোনো কারণ নেই। তারাও তো এই সমাজেরই মানুষ। মানুষের স্বভাবচরিত্র কেমন হয়, কেমন করে নিজের স্বার্থের জন্য লেজ নাড়তে হয়, সেটা তারাও ভালো জানেন। কিন্তু তারপরও তারা এই অতিভক্তি রোগে আক্রান্ত বীর হনুমানদেরই কাছে রাখেন। পাশে রাখেন। এদের দেখিয়ে ওই নেতা বা নেত্রীও যে আরও ঊর্ধ্বতন মহলে আশীর্বাদের ধান-দুর্বা বয়ে আনেন!

এই যে লোক-দেখানো ভক্তি, আড়ম্বর, প্রেম- এসবকে সহজে বোঝানোর জন্য সংক্ষিপ্ত শব্দ তেলবাজি বা তৈলমর্দন। বর্তমানে তা একচেটিয়া চলছে। একসময় কানু বিনে কোনো গীত হতো না। সব গানেই থাকত কানু বা কৃষ্ণ-প্রসঙ্গ। এখন রাজনীতিতে তেলবাজি ছাড়া আর কোনো চর্চা নেই। ছোট নেতা তেল মারেন মেজ নেতাকে। মেজ নেতা মারেন সেজ নেতাকে। সেজ নেতা মারেন বড় নেতাকে। বড় নেতায় মারেন তার বড় নেতা এবং তার পিতামহ-প্রমিতামহকে। এভাবে তেলবাজির সাপ্লাই-চেইন অবিরত চলতেই থাকে। অবশ্য তেলবাজি আমাদের সমাজে দীর্ঘদিন ধরেই দোর্দণ্ড প্রতাপে বিরাজ করছে।

এক শতাব্দী আগে পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ‘তৈল’ নামক রচনায় লিখেছিলেন, ‘যে তৈল দিতে পারিবে, তাহার বিদ্যা না থাকিলেও সে প্রফেসর হইতে পারে। আহাম্মক হইলেও ম্যাজিস্ট্রেট হইতে পারে, মাপে না থাকিলেও সেনাপতি হইতে পারে…।’
সুতরাং তেলবাজি নতুন কিছু নয়, প্রাচীন আমল থেকেই চলছে। সেই অবিভক্ত ভারতবর্ষ থেকে শুরু স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পর্যন্ত যত সরকার এসেছে সবাই তেলবাজি করেছে। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের মতো নেতাও গোলাম মোহাম্মদের মতো আমলাকে বরণের জন্য মালা হাতে তেজগাঁও এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়েছিলেন। রাজনীতি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, আদালত থেকে আমলাতন্ত্র– তেলবাজি ছিল, আছে, হয়তো থাকবেও।
তৈলশিল্প অদ্ভুত দারুণ এক শিল্প, পৃথিবীর সব ধরনের শিল্প এর কাছে তুচ্ছ। কোনো এক অখ্যাত ব্যক্তি বলেছেন, ‘তেলবাজিতে ওস্তাদ যারা আকাশে উড়াল দেয় তারা’। কারণ ঘর থেকে বাহির- পুরো দুনিয়া এখন চলে তেলে। যত বেশি দেবেন তেল, ততই আপনার বাড়বে বেইল- এমন থিওরিতে এখন পুরো দুনিয়া চলে।

আমাদের সমাজ থেকে সৎ-ভাবনা, সৎ-চিন্তা, সৎ-কর্ম, বিনয়, ভক্তি, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, সৌজন্য, প্রশংসা- ইত্যাদি শোভন আচরণগুলো একেবারেই উঠে গেছে। এখন কেউ কারও ভালো কাজের প্রশংসা যত না করে, তার চেয়ে বেশি করে তেলবাজি। সত্যিকার অর্থে কারও ভূমিকার জন্য এখন আর কেউ তেমন প্রশংসা করে না। হয় নিন্দা করে। অথবা তেলবাজিতে ভাসিয়ে দেয়।

আমাদের দেশে যে যত বেশি ক্ষমতাবান, তাকে ঘিরে তেলবাজি হয় তত বেশি। ক্ষমতা যখন সেন্ট্রালাইজড হয়ে একবিন্দুতে কুক্ষিগত হয় তখন চারদিকে তৈলমর্দনকারীদের উত্থান হয়। এখন সব সুবিধাবাদি বুদ্ধিমানদের চেষ্টা কী করে ক্ষমতার শীর্ষে যিনি আছেন, তার দৃষ্টিতে পড়া যায়। ক্ষমতাকে একবিন্দুতে কেন্দ্রীভূত করতে আমলাদের জুড়ি মেলা ভার। কারণ এতে তাদের সুযোগ-সুবিধা হয়। আর সেই ক্ষমতার বিন্দুতে যিনি থাকেন তাকে দেবতা বানাতে তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও সুশীলদেরও জুড়ি মেলা ভার। সবাই যেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র বা সম্রাট আকবরের সভাসদ। এ দেশে গণতন্ত্র মাকাল ফল!

আমাদের পুরোনো পাটিগণিতে একটি অঙ্ক কষতে হতো, তৈলাক্ত বাঁশের শীর্ষ ছুঁতে বানর উঠছে, আর সরসর করে নিচে নেমে যাচ্ছে, ফের উঠছে। রাজনীতির অঙ্কেও একই তুলনা মিলবে, শীর্ষ নেতার মন পেতে অধস্তন নেতা-মন্ত্রী-কর্মী-সমর্থকের নিরন্তর স্তুতি। তফাত একটাই, এই স্তাবকতায় কোনো অবরোহণ নাই, শুধুই আরোহণ, অবশ্য যদি না দলই বদলে যায়। একদা অবিসংবাদিত নেতার প্রতি আনুগত্যের প্রশ্নে এক বড় রাজনীতিবিদ বলেছিলেন, ‘আমার নেত্রী যদি ঝাড়ু হাতে নিয়ে ঝাড়ুদারের কাজও করতে বলেন, আমি করব’। তা অবশ্য করতে হয় নাই, কারণ সেই রাজনীতিবিদকে দয়াময় ঈশ্বর তুলে নিয়ে গেছেন! কে কী পাবেন বা হবেন তা পরের কথা, আসল কথাটি হলো: বাংলাদেশের রাজনীতি, ক্ষমতা ও সরকার পরিচালনা, সমস্ত কিছুতেই অনুগামীদের নিষ্প্রশ্ন আনুগত্য, অন্ধভক্তি ও চরম স্তাবকতার ধারাটি চিরবহমান।

এই চর্চাটি দলনির্বিশেষে চলছে। দলনেত্রীর তোষামোদে বড় বা ছোট দলে, স্থানীয় বা কেন্দ্র স্তরে, শাসক বা বিরোধী দলে তেমন কোনো প্রভেদ নেই। এই প্রবণতা ভূগোলনিরপেক্ষও, দেশের উত্তর-দক্ষিণ বা পূর্ব-পশ্চিম তফাত নেই, দলপ্রধানের তুষ্টিতেই অধস্তনদের যাবতীয় মনোযোগ ও ক্রিয়া সমর্পিত। আমাদের দেশে রাজনীতি এখন প্রবাদের মতো দেখনদারি, ব্যক্তিপূজা ও কর্তৃত্ববাদের মিশ্রণে অন্য এক স্তরে উন্নীত। এটা এক সর্বগ্রাসী উপসর্গ— রোগলক্ষণও বলা যেতে পারে। বিপুল জনসমর্থনই হয়তো নেতাকে দল বা সরকারের শীর্ষে বসিয়েছে, খানিকটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই—কিন্তু দেখা যায়, ক্ষমতাসীন হওয়ার পরেই স্তাবক ও পারিষদের দল তাকে ঈশ্বরের মতো তর্কাতীত ও প্রশ্নাতীত করে তোলে। নেতাও তখন আত্মগরিমায় ভুগতে থাকেন, জনমতকে করে নেন আধিপত্য খাটানোর অস্ত্র। তখন সুপ্রশাসন ও জনসেবা আর লক্ষ্য থাকে না, উন্নয়ন ও প্রগতির প্রতিশ্রুতি মুছে যায়, তার জায়গায় স্থান করে নেয় নির্লজ্জ আত্মপ্রচার। জোড়হস্ত মোসাহেবরা তা শতগুণ ফাঁপিয়ে তোলে; নেতা যা পরেন, যা খান, যা বলেন, যা করেন, শুধু তাই যেন দেখার, শুনবার, বুঝবার, তাতেই দেশের কল্যাণ।

এই পদলেহী সংস্কৃতি সুপ্রশাসনের পরিপন্থী। শাসকের ছায়া নাগরিককে ছাপিয়ে প্রলম্বিত হলে, শাসক নিজে তা উপভোগ ও সমর্থন করলে দেশের ও দশের এই মুহূর্তের ও সুদূরপ্রসারী প্রয়োজনগুলো থেকে মুখ ঘুরিয়ে থাকা হয়। তখন বেহাল অর্থনীতি, বেকারত্ব বা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার মতো সমস্যাগুলো পিছু হটে, প্রচারের আলো জুড়ে থাকে কেবল নেতার সযত্নচর্চিত ভাবমূর্তি ও একটি-দুটি উদ্যোগ। আমাদের দেশের আমলা-মন্ত্রী-সান্ত্রী-সেপাই সবাই ভক্তিরসে গদগদ। সবার মুখমণ্ডল থেকে ক্ষমতার প্রধান অধীশ্বরের মহিমাকীর্তন বা ভক্তিগীতি ধ্বনিত হয়। ভক্তিতে অসুবিধা নেই, সমস্যা ভক্তির দেখনদারিতে। নেতার প্রতি প্রশ্নহীন আনুগত্যে এই দেশ নাগরিককে আত্মাহুতি পর্যন্ত দিতে দেখেছে। কিন্তু তা হতে দেয়া কি প্রশাসকের কাজ? চিৎকৃত ভক্তি দেখলে সংশয় জাগে, এটা ক্ষমতার যূপকাষ্ঠে নাগরিক বিচারবোধের বলিদান ছাড়া অন্য কিছু নয়। আর দেবতা হতে চাওয়া যে নেতারা সানন্দে সেই বলি চান, গ্রহণও করেন, তাদের বিষয়ে আর অধিক কী বলার আছে?

বর্তমানে যে রাজনীতি চলছে, সেই রাজনীতিতে যে যত তেল মারতে পারবেন, সে মূল নেতার তত কাছে আসতে পারবেন। কিন্তু ত্যাগীরা তেল মারার মতো এত বড় ‘মহৎ’ কাজটি কখনো করতে পারেন না। তাই তো তাদের এখন সামনের সারিতে দেখা যায় না, দেখা যায় একদম পেছনে। বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক মাঠ এত তৈলাক্ত হয়ে পড়েছে যে, যে কেউ হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি। আগে কোনো নেতার সঙ্গে দেখা হলে শরীরের লোম খাড়া হয়ে যেত আবেগে। কাছে পেলে পায়ে ধরে সালাম করতে ইচ্ছে করত। আর না হলে বুকে বুক লাগিয়ে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করত। আর সেটাও ছিল খুব সহজ। কিন্তু এখন কোনো বড় নেতার সঙ্গে দেখা করতে হলে নেতার চামচাদের আগে তেল মারতে হয়। কয়েক দিন পেছনে পেছনে ঘুরে, সন্তুষ্ট করতে পারলে তবেই সেই নেতার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। আমাদের বর্তমান রাজনীতি পুরোটাই ‘তৈলাক্ত’ হয়ে পড়েছে। এখানে তেল ছাড়া কাজ হয় না। আবার অতিরিক্ত তেলের কারণে চলাফেরাও করতে হয় অত্যন্ত সাবধানে। এই ‘তৈলাক্ত’ রাজনীতির কারণেই অনেক আদর্শবান নেতা-কর্মী দূরে সরে যাচ্ছেন। তেলবাজদের কারণে নেতা-নেত্রীরা এখন প্রকৃত তথ্য জানতে বা শুনতে পারেন না। যা শুনলে তারা খুশি হন, এমন তথ্যই তাদের শোনানো হয়।

প্রশ্ন হলো, তেলবাজির কারণে ‘তৈলাক্ত’ ও অতিতেল ব্যবহারের কারণে ‘পিচ্ছিল’ হয়ে পড়া এই রাজনীতি থেকে আমাদের উদ্ধার করবে কে?

লেখক:
চিররঞ্জন সরকার ,কলামিস্ট

লিখাটি- ১৪ নভেম্বর ২০২২ দৈনিক বাংলা পত্রিকায় মতামত কলামে প্রকাশিত হয়েছে।



সংবাদটি শেয়ার করিুন

এই পাতার আরও সংবাদ:-



বিজ্ঞাপণ দিতে ০১৭১৮৯০২০১০



DMCA.com Protection Status
টিম-নরসিংদী প্রতিদিন এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে শাহিন আইটি এর একটি প্রতিষ্ঠান-নরসিংদী প্রতিদিন-
Theme Customized BY WooHostBD