নরসিংদীর মাধবদীতে পায়ে থুথু ফেলাকে কেন্দ্র করে মোবারক হোসেন শাহ আলমের হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। নিহত শাহ আলম এবার অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি মাধবদী সতীপ্রসন্ন ইনস্টিটিউশনের শিক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ছিলেন। বুধবার (১৬ নভেম্বর) দুপুর মাধবদী পৌরসভা ভবনের সামনের সড়কে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
মাধবদী সতীপ্রসন্ন ইনস্টিটিউশনের উদ্যেগে এই কর্মসূচীতে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রীদের অংশ নেন, এসময় ইনস্টিটিউশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কিরণ কুমার দেবনাথ বলেন, ‘মাধবদী সতীপ্রসন্ন ইনষ্টিটিউশনের শিক্ষার্থী সদ্য সমাপ্ত এসএসসি পরীক্ষার্থী মোবারক হোসেন শাহ আলমকে যারা নির্মমভাবে জখম করে হত্যা করেছে আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত খুনিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে তাদের ফাঁসির রায় কার্যকর করতে প্রশাসন সহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনোয়ার হোসেন বলেন, এলাকার কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী আমাদের বিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী শাহআলমকে উপর্যুপুরি আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমরা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানাই তারা যেন যত দ্রুত সম্ভব সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত খুনিদের আইনের আওতায় এনে তাদের ফাঁসি কার্যকর করেন।
বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তাহসিন ইসলাম অর্ণব বলেন, আমরা আমাদের বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী মোবারক হোসেন শাহআলম হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই সেই সাথে যারা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদের ফাঁসির রায় কার্যকর করতে পুলিশ প্রশাসন ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করি।
এসময় বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা, পরিচালনা পরিষদের সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক সহ বিদ্যালয়ের চার সহস্রাধিক শিক্ষার্থী হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবীতে বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন ও প্লেকার্ড হাতে মানববন্ধনে প্রতিবাদের স্লোগান তুলেন।
উল্লেখ্য- নরসিংদীর সিমান্তবর্তী এলাকা নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের মৃত নুরুল ইসলাম ছেলে শাহ আলম। সে গত ১০ নভেম্বর শুক্রবার বিকাল চার টার দিকে রিক্সা যোগে বাড়ী ফেরার পথে বাহাদুরপুরে পাকা রাস্তার মাথায় থুথু ফেললে তা ইয়াছিন মিয়া নামে এক কিশোরের পায়ের সামনে পরে। এতে ইয়াছিন ক্ষিপ্ত হয়ে শাহ আলমকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এ নিয়ে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে মারামারি হয়। এছাড়া নিহত শাহ আলম এর সাথে ইয়াছিন এর পূর্ব শত্রুতার বিরোধ ছিল। এই জের ধরে আড়াইহাজার থানাধীন বাহাদুরপুর এলাকায় বিভিন্ন তুচ্ছ ঘটনায় একাধিক বার ঝগড়া বিবাদ ও মারামারি হয় তাদের মধ্যে ।
পূর্বের ঝগড়া বিবাদকে কেন্দ্র করে ইয়াছিন ও তার অপরাপর সহযোগিরা পরিকল্পনা করে শাহ আলমে হত্যার জন্য সুযোগ খুজতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১২ নভেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় মাধবদী থানাধীন দক্ষিন বিরামপুর এলাকায় আউয়াল নামে এক ব্যক্তির চায়ের দোকানের সামনে মোবারক হোসেন ওরফে শাহা আলমকে পেয়ে ইয়াছিন ও অন্যান্য সহযোগিরা পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক প্রকাশ্যে তাদের হাতে থাকা লোহার রড, চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল, ছুরি নিয়ে কিছু বুঝার আগেই শাহ আলম এর উপর অতর্কিতভাবে আক্রমন করে কুপিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত কাটা জখম করে পালিয়ে যায়। ঘটনারদিন রাতে চিকিৎসাধীন অস্থায় হাসপাতালে মারা যায় শাহ আলম। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত এজাহারনামীয় আসামী চার কিশোরকে গ্রেপ্তার করে আদালতে দেয় পুলিশ। পরে আদালত তাদের কারাগারে প্রেরণ করেন।