শাহান শাহ আলম বিপ্লব (৩৪) নামে এক ব্যক্তি যিনি একাধিক হত্যা মামলার আসামি এবং মো. মনির হোসেন (৩৪) তার দেহরক্ষী ছিলেন। সড়ক দুর্ঘটনায় নয়, পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে ধানমন্ডি পিবিআই হেড কোয়ার্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থারটির প্রধান বনজ কুমার মজুমদার এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিপ্লব এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলেও কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পেত না। বিপ্লব শুধু খুন করেই থামেননি, যারা তার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতেন তাদের বিরুদ্ধেও তিনি প্রতিশোধ নিতেন। তবে শেষ পর্যন্ত শেষ রক্ষা হয়নি বিপ্লবের। একসময় তার সঙ্গে ডিস ব্যবসা করা মামুন নামে ওই ব্যক্তি অন্যদের নিয়ে বিপ্লবকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। বেশ কয়েকবার হত্যাচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে মাইক্রোবাস চাপায় হত্যার পর সাজানো হয় সড়ক দুর্ঘটনার নাটক। সেই নাটকও ধোপে টেকেনি। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে বেরিয়ে আসে বিপ্লব ও তার দেহরক্ষী মনির হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য। একই সঙ্গে চারজনকে গ্রেফতারও করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন- মো. মাসুম মিয়া, সোহাগ মিয়া, মাসুদ মিয়া ও মামুন মিয়া।
পিবিআই প্রধান আরও বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা হলে গাড়িচালক পালাবে কিন্তু যাত্রী কেন পালাবে? শাহান শাহ বিপ্লব ও তার একজন প্রতিনিধি তার বাড়ি রায়পুরায়, সেখানে তাকে দেখা গেছে। তারা একটি মিটিং করে, সেখানে সিদ্ধান্ত হয় বিপ্লবকে সরাতে হবে। না হলে বিপদ আছে। সেভাবেই তারা কাজ করে।
সব দুর্ঘটনাই দুর্ঘটনা নয়। কিছু দুর্ঘটনার পেছনে রয়েছে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তেমনি এক ঘটনা ২০২১ এ ঢাকা-নরসিংদী মহাসড়কে ঘটে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের কারণ যা উদঘাটন করা হয়েছে। ২০২১ সালের ১২ আগস্ট, রাত ৮টার দিকে ঢাকা-নরসিংদী মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মারা যান দুই ব্যক্তি। হাইওয়ে পুলিশ দুর্ঘটনার মামলাও করে। কিন্তু বাদ সাধে নিহতের ভাইয়ের করা সিআর মামলায়। দুটি প্রশ্নে সন্দেহ হয় তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া পিবিআইয়ের। এরপর আটক করা হয় সন্দেহভাজনদের।
জিজ্ঞাসাবাদে বের হয় থলের বিড়াল। জানা যায়, দীর্ঘদিনের পরিকল্পনাতেই ঘটানো হয় এ হত্যাকাণ্ড। অন্তত চারটি হত্যাসহ দশটি মামলা ও ১১টি ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ছিলেন বিপ্লব ও তার বডিগার্ড মনির। পূর্বপরিকল্পনা মতো সজোরে ধাক্কা দেয় হত্যাকারীদের বহনকারী মাইক্রোবাস। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দুজনের। নিহত বিপ্লবের ভাই সোহাগের করা মামলায় তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে পিবিআই উদঘাটন করে দুর্ঘটনার আদলে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড জানান তিনি।
সবশেষ এ ঘটনায় নয় জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে পিবিআই। এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে চারজনকে। যাদের তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানান পিবিআই প্রধান।