বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বাইরের দেশে এখন অনেকেই নগদ মুদ্রা ব্যবহার করতে চান না। সেজন্য ভ্রমণ, চিকিৎসা, শিক্ষা ও ব্যবসার কাজে অনেকেই বিদেশে কার্ডের মাধ্যমে ডলার নিয়ে যাচ্ছেন। সে কারণে কার্ডের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রার লেনদেন বেড়েছে।
কার্ডের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রার লেনদেন আরও বেড়েছে। ২০২২ সালে কার্ডে বিদেশি মুদ্রার লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ১১৯ কোটি টাকা। এটা আগের বছর ২০২১ সালের চেয়ে ১৬৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালে কার্ডের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রার লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার এই হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে কার্ডের মাধ্যমে প্রায় ৬৩৯ কোটি টাকার সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা লেনদেন হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কার্ডের মাধ্যমে ২৫০ কোটি টাকার বিদেশি মুদ্রা লেনদেন হয়েছিল।
প্রায় এক বছর ধরে দেশে ডলারের সংকট চলছে। সোমবার আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের সর্বোচ্চ দর ছিল ১০৭ টাকা। আর সর্বনিম্ন ১০৬ টাকা ৬৫ পয়সা। এক বছর আগে এই ডলারের দর ছিল ৮৫ টাকা ৭০ পয়সা। খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলারের দর বেড়ে ১২০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সবশেষ সোমবার তা ১১২ টাকা ২০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ভ্রমণ, চিকিৎসা, শিক্ষা ও ব্যবসার কাজে অনেকেই বিদেশে কার্ডের মাধ্যমে ডলার নিয়ে যাচ্ছেন। সে কারণে কার্ডের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রার লেনদেন বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো গ্রাহক তার কার্ডে বছরে খরচ করতে পারবেন সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার। গ্রাহকদের কাছে নগদ ও কার্ডে দু’ভাবেই ডলার বিক্রি করে ব্যাংক।
দেশে অনেক আগেই ক্রেডিট কার্ডে বিদেশি মুদ্রা লেনদেনের অনুমোদন দেয়া হয়। আর ২০২০ সালের জুনে ব্যাংকগুলোকে গ্রাহকদের হিসাবের বিপরীতে আন্তর্জাতিক ডেবিট কার্ড ইস্যুর অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ বিষয়ে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে বিদেশে ভ্রমণ বেড়েছে। কোভিডের কারণে মাঝে তা বন্ধই ছিল বলা যায়। এখন আগের মতোই মানুষ ভ্রমণ, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কারণে বিদেশে যাচ্ছে। ফলে বিদেশি মুদ্রার ব্যবহার বাড়ছে। আর এই ব্যবহার এখন নগদের বদলে কার্ডে বেশি হচ্ছে।
‘বাইরের দেশে এখন অনেকেই নগদ মুদ্রা ব্যবহার করতে চান না। ফলে আগের তুলনায় কার্ডের মাধ্যমে মুদ্রার লেনদেন বেড়ে গেছে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, বাংলাদেশের একজন নাগরিক ভ্রমণের জন্য বছরে ১২ হাজার ডলার সঙ্গে নিতে পারেন। চিকিৎসার জন্য অনুমতি ছাড়া ১০ হাজার ডলার এবং শিক্ষার জন্য গ্রেড ১২-এর নিচে বাইরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যত লাগবে তত নেয়ার সুযোগ রয়েছে।