সরকারের বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে হেলিপ্যাড মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান। এ সময় তিনি জনগণের কাছে নৌকায় ভোট দেয়ার ওয়াদা চাইলে উপস্থিত জনতা সমস্বরে দু’হাত তুলে তার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে।

সমাবেশে আগত জনতাকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ বছরের শেষে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন- সে আবেদনই আপনাদের কাছে জানাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। মা, বাবা, ভাই সব হারিয়েছি। আমি নিঃস্ব, রিক্ত। এদেশের মানুষকে আমার বাবা ভালোবেসেছিলেন। তিনি তার জীবন দিয়ে গেছেন। জীবন দিয়ে গেছেন আমার মা, আমার ভাইয়েরা। আজকে আমি আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন যখন ক্ষমতায় আসে দেশের মানুষের কল্যাণ হয়। মানুষ খেয়েপরে ভালো থাকে। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। নৌকা মার্কায় ভোট দিলেই যে দেশের উন্নতি হয় সেটা আজ সর্বজনবিদিত।

‘১৪ বছরে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’

মিঠামইন, ইটনা, অষ্টগ্রামসহ কিশোরগঞ্জের প্রতিটি সংসদীয় আসনে পর পর তিনটি নির্বাচনে জেলাবাসী নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসনিা।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা। সেই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই এদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে।

‘এই নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই আজ কিশোরগঞ্জ আর অবহেলিত নেই। উন্নত একটি জেলায় উন্নীত হয়েছে এবং প্রতিটি উপজেলা উন্নত হচ্ছে। নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই এদেশের মানুষ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জের সন্তান। কিশোরগঞ্জই সবসময় রাষ্ট্রের প্রধান হয়ে সারা বাংলাদেশ পরিচালনা করছে।’

সমাবেশের মঞ্চে উপস্থিত রাষ্ট্রপতির ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিককে দেখিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত নির্বাচনে রাষ্ট্রপতির ছেলেকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আপনাদের প্রতি কতৃজ্ঞতা জানাই। আগামীতেও একমাত্র নৌকা মার্কা সরকারে এলে আপনাদের উন্নতি হবে, দেশের উন্নতি হবে। এই হাওর অঞ্চলের উন্নয়নে যে সার্বিক কর্মসূচি আমরা নিয়েছি সেগুলো বাস্তবায়িত হবে।

‘নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদেরকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। তাই আপনাদের পাশে আমরা সব সময় আছি।’

আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে অন্য সরকারগুলোর কাজের তুলনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওইসব সরকার লুটপাট, অর্থ পাচার, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মানুষ হত্যা আর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছে। মানুষের ওপর অত্যাচার আর মানুষকে শোষণ করা ছাড়া আর কিছু তারা দিতে পারেনি, পারবেও না।’

তিনি বলেন, ‘সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক স্বৈরশাসক বিএনপি গঠন করেছেন। তারা (বিএনপি) জনগণকে নির্যাতন ও লুটপাট ছাড়া কিছুই দিতে পারে না। কেননা যাদের হাতে এই দলটির সৃষ্টি, তারা কখনও জনগণের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় যায় না, ক্ষমতা দখল করে। যে ক্ষমতা দখলকে উচ্চ আদালতও অবৈধ ঘোষণা করেছে।

‘তাই যখনই এরা ক্ষমতায় এসেছে, এদেশের মানুষের সম্পদ লুট করেছে, বিদেশে পাচার করে এখন আরাম-আয়েশে দিন কাটাচ্ছে।

মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এম এ আফজাল প্রমুখ।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল হক। সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার বৈষ্ণব।