উৎসবের আমেজে রাজশাহীতে আম পাড়া শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গুটি আম পাড়ছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তবে হাতে গোনা দু-একটি বাগানের আম নামাতে দেখা গেছে। ফলে রাজশাহীর বৃহত্তম বাজার বানেশ্বরে এখনো আম ওঠেনি। গুটি জাতের আম খুব বেশি সুমিষ্ট নয়। জাত আম-খ্যাত রসালো গোপালভোগের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও ১১ দিন। বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী আগামী ১৫ মে গাছ থেকে পাড়া শুরু হবে রাজশাহীর সর্বোচ্চ বিক্রীত সুমিষ্ট জাতের এই আম।
এর আগে রাজশাহীতে আম পাড়ার সময় বেঁধে দেয় জেলা প্রশাসন। অসময়ে আম সংগ্রহ বন্ধ রাখতে গত পাঁচ বছরের ধারাবাহিকতায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগে নির্দিষ্ট আম বাজারে পেলে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। তবে কারও বাগানে নির্ধারিত সময়ের আগেই আম পেকে গেলে তা স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করে বাজারজাত করা যাবে।
বৃহস্পতিবার সকালে পুঠিয়া উপজেলার ভাল্লুকগাছি গ্রামের আবুল হোসেন জানান, তারা প্রথম দিন গুটি জাতের আম পাড়া শুরু করেছেন। সাধারণত এই আমের স্বাদ কম। অনেকটা টক-মিষ্টি স্বাদের। গুটি জাতের এই আম মণপ্রতি বাজারে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হবে। ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি পড়বে। আর এই আম নতুন ফল হিসেবে খুচরা বাজারে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে। মূলত আগামী ১৫ মে থেকে উন্নত জাতের আম গোপালভোগ পাড়া শুরু হবে। এরপর এক এক করে ক্ষীরসাপাত (হিমসাগর), ল্যাংড়াসহ বিভিন্ন নাম ও জাতের আম বাজারে উঠবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, ‘বাজারে নিরাপদ, বিষমুক্ত ও পরিপক্ব আম নিশ্চিত করতে এ বছরও ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ প্রণয়ন করা হয়েছে। নির্দিষ্ট এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী গাছ থেকে আম সংগ্রহ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজশাহীতে এ বছর ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯৮৬টি আমগাছ রয়েছে। এবার জেলায় ৯৫ ভাগ গাছে মুকুল এসেছিল। গত বছর ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমবাগান ছিল। এবার বাগান বেড়েছে ১ হাজার ৬৩ হেক্টর জমিতে। এ বছর হেক্টরপ্রতি ১৩ দশমিক ২০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে জেলায় এ বছর মোট ২ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার আম-বাণিজ্যের প্রত্যাশা করছি আমরা।’
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মো. শামীম আহমেদ বলেন, বুধবার সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বয়ে সভা করে এ বছরের ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে সেই বেঁধে দেয়া সময় মেনে কৃষকরা তাদের গাছের আম পাড়তে শুরু করেছেন। জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের দেয়া আম নামানোর সূচি অনুযায়ী আগামী ১৫ মে দ্বিতীয় দফায় পাড়া হবে গোপালভোগ। এরপর নির্ধারিত সাতটি ধাপে ২০ আগস্ট পর্যন্ত রাজশাহীর বাজারে অন্যান্য জাতের আম নামবে।
বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী গোপালভোগ নামানো যাবে ১৫ মে থেকে। এ ছাড়া লক্ষ্মণভোগ বা লখনা ও রানীপছন্দ ২০ মে এবং হিমসাগর বা ক্ষীরসাপাত ২৫ মে থেকে নামিয়ে হাটে তুলতে পারবেন বাগানমালিক ও চাষিরা। আর ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে ফজলি ও ১০ জুন আম্রপালি এবং ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা ও বারি আম-৪ নামানো যাবে। ১০ জুলাই থেকে গৌড়মতি আম এবং ২০ আগস্ট ইলামতি আম নামানো যাবে।