এক সময়ের খরস্রোতে আড়িয়ালা খাঁ নদীর সৌন্দর্য দেখতে নরসিংদীর রায়পুরার রাধাগঞ্জ এসে সময় পার করতেন গ্রামগঞ্জের মানুষ। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এই নদী পারাপারে একমাত্র ভরসা ছিল নৌকা। দিন দিনে এর নাব্য হারিয়ে যাওয়ায়, নদী পারাপারে খরা মৌসুমে নির্মিত হয় বাঁশের সেতু। প্রায় ৪০ বছর আগে নির্মিত বাঁশের সেতুতে টোল দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে ১৫ গ্রামের লাখো মানুষ। আড়িয়াল খাঁর বুকে স্বপ্নের সেতু মিলবে কবে, জানে না কেউ।
সরেজমিন দেখা যায়, রায়পুরা উপজেলার আদিয়াবাদ ইউনিয়নের রাধাগঞ্জ বাজারের উত্তর পাশে প্রায় ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫ ফুট প্রস্থ শত শত বাঁশের খুঁটি দিয়ে তৈরি সেতুটি দাঁড়িয়ে আছে আড়িয়াল খাঁর বুকে। মাঝে রয়েছে বাঁশের নিচে ভাসমান অবস্থায় খালি ড্রাম। পারাপারের সময় ড্রামগুলো পানিতে ঢেউ তোলে। এতে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। এ ছাড়া বাঁশ দিয়ে তৈরি সেতুটি পারাপারের সময় পাঁচ টাকা বাধ্যতামূলক টোল গুনতে হয় সবাইকে।
এদিকে পাকা সেতু হবে, নির্বাচনের আগে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট সংগ্রহ করেন জনপ্রতিনিধিরা। অন্যদিকে এই বাঁশের সেতু নিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতে দিতে ক্লান্ত বলেও মন্তব্য করেন স্থানীয়রা। একই সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের প্রতি ক্ষোভও প্রকাশ করেন তারা।
নদী পারাপারের সময় স্থানীয়রা জানান, এই নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। জনপ্রতিনিধিরা বারবার আশ্বাস দিলেও হয়নি পাকা সেতু। তাই নদী পারাপারে বর্ষায় নৌকা আর খড়া মৌসুমে বাঁশের সেতুই ভরসা করতে হয় তাদের। এ ছাড়া সেতুর পাশেই রয়েছে নয়াচর উম্মুল কুরা ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেনসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই সেতু দিয়ে শিক্ষার্থীরা নদী পার হচ্ছেন ঝুঁকি নিয়ে। বিশেষ করে, সেতুতে যান চলাচলের ব্যবস্থা না থাকায় অসুস্থ শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের পার হতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
সেতুর উত্তর পাশে নয়াচর গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাধাগঞ্জ বাজারে প্রতিদিনই থাকে জমজমাট। এর মধ্যে সপ্তাহে মঙ্গলবার বসে সবচেয়ে বড় হাট। ওই দিনে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পণ্যবাহী গাড়ি নয়াচর ঘাটে রেখে যায়। এতে রাধাগঞ্জ বাজারে মালামাল নিয়ে বাঁশের সেতু পার হতে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
জানা গেছে, রাধাগঞ্জে প্রতি বছর ইজারাদার নিজ উদ্যোগে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেন। তাই প্রতিবার সাঁকোটি পারাপারের সময় জনপ্রতি পাঁচ টাকা ভাড়া দিতে হয়। বর্ষায় নৌকায় এবং শুকনো মৌসুমে সেই সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে টোল দিয়ে পারাপার হতে হয় সবাইকে। তাই বর্ষাকালে নৌকাডুবি, শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনাও ঘটছে।
স্থানীয় বাসিন্দা নাহিম খন্দকার বলেন, শিবপুরের যোশর ও বাঘাব ইউনিয়নের নয়াচর, সৈকারচর, যোশর, মাখাল্লা, কামালপুর, জানখারটেক, লেটাব, দক্ষিণ কামালপুর, কাজিয়ারা এলাকার অনেক কৃষক রাধাগঞ্জ বাজারে সবজি বিক্রি করতে আসেন। সবাই প্রতি মঙ্গলবার পারাপারে ভোগান্তিতে পড়েন। এ ছাড়া আমাদের স্বপ্নের সেতু কবে হবে, সেটা জানি না। তবে শুনেছি এমপি (রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, নরসিংদী-৫) নাকি প্রকৌশলীকে সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করতে ডেকেছেন।
এ বিষয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা হলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলের (এলজিইডি) রায়পুরা উপজেলা প্রকৌশলী মো. শামীম ইকবাল মুন্না বলেন, ‘রাধাগঞ্জ ও নয়াচর এলাকায় আড়িয়াল খাঁ নদীতে সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা প্রক্রিয়াধীন আছে। সেখানে সেতুর সীমানা রয়েছে প্রায় ৭০০ ফুট। নদীর নাব্যসংকটের ফলে সেতুটি ‘খ’ শাখায় নির্মাণ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এমপি রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু বলেছেন, সংসদ অধিবেশন সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাব দেবেন। এ ছাড়া এমপি আশ্বাস দিয়েছেন, এবার উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম কাজ হবে রাধাগঞ্জ সেতু নির্মাণ করে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ দূর করা।’