নরসিংদীতে বৃহত্তর রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ বাজারের অদূরে প্রত্যন্ত গ্রাম হাসনাবাদ এলাকায় অবস্থিত ছন্দা সিনেমা হল। আধুনিক যুগে মানুষ মোবাইলে বেশি বিনোদন উপভোগ করছে। সিনেমা মুখী হচ্ছে না মানুষ। দিন দিন গুনতে হচ্ছে লোকসান।
এদিকে একজন মুসলিম পরিবারের সদস্য ওই ছন্দা নামে সিনেমা হলটির মালিক। মালিক মারা যাওয়ার পর থেকে ভালো স্থানে হলটি বিক্রির জন্য চেষ্টা করেন মালিকের পক্ষের লোকজন। অবশেষ পাপমুক্তি ও দোয়া পাওয়ার আশায় ছন্দা সিনেমা হলের দেয়ালঘেঁষে নির্মিত হওয়া ইদরিসিয়া দারুল কোরআন মাদরাসায় কাছে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে হলটি।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৯০ দশকে নির্মিত হওয়া প্রেক্ষাগৃহ পরিচালক কাজী হায়াৎ নির্মিত ও জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের অভিনীত বাংলা ছায়াছবি ‘আইন-আদালত’ দিয়ে পথ চলা শুরু করে প্রেক্ষাগৃহটি। আজ বিবেকের আদালতে আটকে গিয়ে ‘ছন্দা’ সিনেমা হলটি দ্বীনি শিক্ষার জন্য মাদরাসা কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে এটা অনেক আনন্দের বিষয়।
স্থানীয়রা আরো জানান, সিনেমা হল নির্মাণের এক যুগ পর নির্মিত হয় মাদরাসাটি। সামাজিকভাবে ওয়াকফা করে দেওয়া জমিতে গড়ে ওঠা মসজিদ মাদরাসার পাশে সিনেমা হল নিয়ে প্রায় বিরূপ মন্তব্যে পড়ে যায় ছন্দা সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ। অবশেষে হলটি সেই মাদরাসার কাছে বিক্রি করে দিতে বায়না চুক্তি হয়।
এ সময় বিক্রি হওয়া সিনেমা হলটিতে গিয়ে দেখা যায়, জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সাকিব খান অভিনীত বাংলা ছায়াছবি ‘রাজকুমার’ প্রদর্শন করা হচ্ছে। আর ওই চলচিত্রের পোস্টারে ঢেকে রাখা হয়েছে হলে সামনের দিক। এদিকে হলের পাশে তিন রাস্তার মোড়ে টানানো হয়েছে ইদরিসিয়া দারুল কোরআন মাদরাসা কর্তৃপক্ষের ব্যানার। এতে লিখা আছে আলহামদুলিল্লাহ, ছন্দা সিনেমা হলটি মাদরাসার জন্য বায়না করা হয়েছে। চুক্তি মূল্য ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। বায়না মূল্য ২০ লাখ টাকা।
এদিকে সিনেমা হলটি মাদরাসা হওয়ায় ব্যাপক খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে সামর্থ্য অনুযায়ী নগদ অর্থ দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। অর্থের যোগান দিতে কেউ কেউ স্বর্ণালঙ্কার সদকা হিসেবে মাদরাসায় দিচ্ছেন। দ্রুত যেন হল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে চুক্তি সম্পাদন করে নিয়ে মাদরাসা নির্মাণের কাজ শুরু করেন।
মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মোহাম্মদ মোকারম হোসেন বলেন, অনেক দিন ধরে শুনে আসছি মালিক পক্ষ হলটি বিক্রি করে দিবে। অনেক সাহস ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে সমাজের মানুষ পরিকল্পনা করেন মাদরাসার জন্য সিনেমা হলটি কিনে নেবেন। মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা মূল্যে ও ২০ লাখ টাকায় বায়না দলিল করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৩ লাখ টাকা জমা পরেছে। সবার সহযোগিতা নিয়ে মাদরাসাটির নামে ওই স্থাবর সম্পত্তি ৩৩ শতক জমি ওয়াকফ দলিল করা হবে। আশা করি, স্থানীয় বিত্তবানদের সহযোগিতায় দ্বীনি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে।
হলটি ভাড়ায় চালাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ সুলতান মিয়া। তিনি বলেন, করোনাকালীন সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ছন্দা হলটি তিনি ভাড়া নিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত তিনি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত। এদিকে মাদরাসার কাছে মালিক পক্ষ হল বিক্রি করে দিয়েছে। এটা ভালো কথা, আমি মুসলিম এই ব্যবসা করতে আর মন চায় না। আল্লাহ চাইলে এই ব্যবসা ত্যাগ করে অন্য কিছু করবো। তবে মালিক পক্ষ যেন আমার ক্ষতির দিকটা বিবেচনা করেন।
ছন্দা সিনেমা হলের পৈত্রিক সূত্রে মালিক সায়মা নাজনীন ছন্দা বলেছেন, তার বাবা মৃত্যুর আগে অনেক চেষ্টা করেছেন সিনেমা হলটি বিক্রি করতে। আমাদের বলে গেছেন ভালো জায়গায় বিক্রি করে দিতে। এখন মাদসার কাছে চুক্তি হয়েছে। এতে আমাদের বাবাও দোয়া পাবেন।