নরসিংদীতে মাধবদী সিটি (প্রাইভেট) হাসপাতালের অবহেলায় এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুই লাখ বিশ হাজার টাকা রফাদফা করে স্বজনদের লাশ বুঝিয়ে দেয় বলে জানান ভুক্তভোগীর স্বজনরা। নিহত সোনিয়া আক্তার সদর উপজেলা মাধবদীর মহিষাশুড়া ইউপির বথুয়াদী গ্রামের মো. ইয়ামিনের স্ত্রী।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাধবদী পৌর শহরের প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার সংলগ্ন মাধবদী সিটি (প্রাইভেট) হাসপাতালে চিকিৎসক সুমন কুমার নাথ বলেন, ওই প্রসূতি নারীর অবস্থা মুমূর্ষু ছিলো। স্বজনরা আকুতি করায় অস্ত্রোপচার করা হয়।
গত শুক্রবার থেকে সোনিয়া আক্তার নামে ওই প্রসূতি নারীকে ফলোআপে রেখেছেন সুমন কুমার নাথ। ফোনে যোগাযোগ করেছেন অস্ত্রোপচার করার জন্য। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রসূতি নারীর ব্লাডের হিমোগ্লোবিন কম ছিল, শরীরের অবস্থা সংকটাপন্ন ছিলো। মা ও শিশুর দুজনই ঝুঁকিতে ছিল, তাই বলছি অস্ত্রোপচার করার জন্য।
তিনি বলেন, রোববার রাত ১২টার দিকে প্রসূতি নারীকে নিয়ে আসেন তার স্বজনরা। পরে আমরা বুঝিয়ে বলেছি, তার অবস্থা ভালো না, পরে তাদের অনুরোধে আমরা সিজারিয়ান ডা. শের মোস্তফা সাদিক খানকে খবর দিলে রাত ১টার দিকে এসে অস্ত্রোপচার করে আবার চলে যান তিনি। এ সময় মা-শিশু দুজনেই ভালো ছিলো। হঠাৎ ভোরের দিকে প্রসূতি নারীর অবস্থা সংকটাপন্ন হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরমর্শ দেয়া হয়। পরে তারা না নিয়ে যাওয়ার কারণে প্রসূতি নারীর মৃত্যু হয়।
নরসিংদীর মাধবদী সিটি (প্রাইভেট) হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মো. জাকির হোসাইন বলেন, ডা: শের মোস্তফা সাদিক খান নরসিংদীর সাহেবপ্রতাব সুকন্যা ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি সেবা প্রতিষ্ঠানের মালিক। এ সময় ওই চিকিৎকের ব্যবহৃত মুঠোফোন নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে ঘটনার বিবরণ দেওয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়নি নিহতদের স্বজনদের বক্তব্যের।
নিহতের বাবা আবুল হোসেন ও মা মনোআরা বেগম বলেন, ‘সোনিয়াকে রাত ১১টার দিকে হাসপাতালে আনা হয়। সুস্থ স্বাভাভিক ছিলো। হাসপাতালের ডাক্তার আরো দুইদিন আগে বলে ছিলো সিজার করাতে কিন্তু তার স্বামীর সঙ্গে না বুঝে কেমনে সিজার করাই। তারপর রোববার রাতে এই হাসপাতালে নিয়ে এলে আমার মেয়ে পায়ে হেঁটে দুতলায় উঠে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় দরজার সামনে যাওয়া মাত্র একটা মাইয়া, সোনিয়াকে কাকের মতো টেনে ভেতরে নিয়ে যায়। এর আদা ঘণ্টা পর সনিয়ার সিজার করে ছেলে শিশুকে আমাদের কাছে নিয়ে আসে। এ সময় আমার মেয়ের কথা জানতে চাইলে তারা বলে ভালো আছে।’
পরে যখন অপারেশনের রুম থেকে সোনিয়াকে নিয়ে আসে তথন দেখি সোনিয়া ক্যাগলাইতেছে। এ সময় ডাক্তারকে বলেছি এমন করে কেনো, ডাক্তার বলে ওষুধ দিয়েছি ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ফজরের আজান পর্যন্ত আমার মেয়ে অনেক কষ্ট করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে সনিয়া মারা যায়।
কথা হলে নিহতের স্বামী মো. ইয়ামিন বলেন, আমার স্ত্রীকে তারা মেরে ফেলেছে, আমরা বলেছি অন্য হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে সিজার করাতে। কিন্তু তারা সব জেনেও সোনিয়ার সিজার করায়। আমরা গবির বলে বিচার পাইলাম না। আমাদের সহজ সরল পাইয়া সনিয়ার লাশ বুঝিয়ে দিয়েছে।
এ দিকে এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে হাসপাতালের চেয়ারম্যান তানিম হোসাইন একটা মহলের সুবিধা নিয়ে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা রফাদফা করে সোনিয়ার লাশ বুঝিয়ে দেয় স্বজনদের কাছে।
হাসপাতালের চেয়ারম্যান তানিম হোসাইন বলেন, রোগী নিয়ে আসে তারা শুনেছি তখন বাচ্ছার হার্টবিড কম ছিল। পরে সিজার করানো হয়। প্রথমে ভালো ছিলো, এরপর রোগীর শ্বাস কষ্ট হয়। আমরা পর্যাপ্ত সেবা দিয়েছি। পরে আমরা রোগীর স্বজনদের বলি রোগীকে আইসিউতে রাখতে হবে। কিন্তু তাদের লোক আসতে দেরি হওয়ায় রোগী মারা যায়।
তিনি বলেন, কোনো টাকা পয়সা দিয়ে মিটমাট করা হয়টি। রোগীর স্বজনরা দায় স্বীকার করে লাশ নিয়ে যায়।
হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা নেই, এরপর মুমূর্ষু জেনেও মাধবদী সিটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা হয় প্রসূতি নারীকে। পরে ওই নারী মারা যায় এমন প্রশ্নের জবাবে নরসিংদী সিভিল সার্জন ডা. ফারহানা আহমেদ বলেন, যেহেতু বিষয়টি আপনার মাধ্যমে শুনেছি। আমরা একটি টিম পাঠিয়ে খবর নিচ্ছি। যদি তদন্তে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি থাকে অব্যশই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাধবদী থানার ওসি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, তিনি বিষয়টি অবগত নন।