নরসিংদীর শিবপুরে মাদক ও জুয়ার টাকা জোগাড় করতে এক কিশোরকে হত্যার পর তার অটোরিকশা ছিনতাই করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এছাড়া এক আসামি পলাতক রয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- নাহিদ শেখ, মো. হুমায়ুন, লিটন খান, জুবায়ের হাসান অমি, শাজিদুল ইসলাম হাসিব, রাকিবুল ও জুয়েল। এদের মধ্যে নাহিদ, হুমায়ুন, লিটন, জুবায়ের ও হাসিব আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। নরসিংদী পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. এনায়েত হোসেন মান্নান।
তিনি জানান, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আসামিরা অটোচালক রবিউল ইসলামকে টার্গেট করে। এরপর বন্ধুরা মিলে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে তার অটোরিকশাটি ভাড়া করে। এরপর নরসিংদীর শিবপুর থানা এলাকার বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে নির্জন স্থানে নিয়ে যায় অটোরিকশা চালক রবিউলকে। সেখানে তাকে হত্যার পর অটোরিকশাটি ছিনিয়ে নেয় তারা।
পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন জানান, গত বছরের ২৯ অক্টোবর সকালে নরসিংদীর শিবপুর থানার সাতপাইকা পাঁকা রাস্তার পাশে ধানক্ষেত থেকে অজ্ঞাত এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। খবর পেয়ে নরসিংদীর পিবিআই ও ক্রাইম সিন দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরপর তথ্যপ্রযুক্তি ও স্থানীয়দের সহায়তায় ভুক্তভোগীর পরিচয় শনাক্ত করা হয়। পরে ভুক্তভোগী রবিউল ইসলামের মা বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
গুরুত্ব বিবেচনায় মামলাটি গ্রহণ করে নরসিংদী পিবিআই। তদন্তে জানা যায়, ভুক্তভোগী একজন অটোরিকশাচালক। তিনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন না। ঘটনার কোনো ক্লু না থাকায় শিবপুর অঞ্চলে যাদের বিরুদ্ধে চোরাই অটো বাইক/গাড়ি ক্রয়-বিক্রয়ের অভিযোগ রয়েছে তাদেরই একজন রাকিবুলকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে অটোরিকশাটি নাহিদের মাধ্যমে বিক্রয়ে সহায়তা করেছে স্বীকার করে বলে জানায় রাকিবুল। কিন্তু হত্যার বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি সে।
পরে তার দেওয়া তথ্যে নাহিদ শেখকে গ্রেফতার করা হয়। যে গ্যারেজে অটোরিকশাটি বেচাকেনা হয়েছিল সেটি শনাক্ত করে দেয় আসামি নাহিদ। এরপর একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে আসামি মো. হুমায়ুনকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মো. লিটন খানের গ্যারেজ থেকে ছিনতাই হওয়া অটোরিকশাটি উদ্ধার করা হয়।
পিবিআইয়ের এ কর্মকর্তা বলেন, গাড়িটি যেন কেউ চিনতে না পারে সেজন্য গাড়ির রঙ ও কিছু পার্টস পরিবর্তন করে অভিযুক্তরা। পরবর্তীতে গ্যারেজ মালিক মো. লিটন খান অটোরিকশাটি ৩০ হাজার টাকায় কেনেন। আসামি নাহিদকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বাকি অভিযুক্তদের নাম জানান।
নরসিংদী পিবিআইয়ের এসপি বলেন, হত্যাকারী দুজনসহ গাড়ি ক্রয় বিক্রয়, রং ও মডেল পরিবর্তন ও সংরক্ষণের সংশ্লিষ্ট মোট ৫ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, ভুক্তভোগী রবিউল হত্যাকাণ্ড ও অটোরিকশা ছিনতাইয়ে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামি অমি, নিহাল, হাসিব এক সঙ্গে চলাফেরা করতো। তারা নিয়মিত মাদক সেবন করতেন ও অনলাইনে জুয়া খেলতো। এক পর্যায়ে আসামিরা মাদক ও জুয়ার টাকা সংগ্রহের জন্য অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে।
তারা সহজ সরল অটোচালক রবিউল ইসলামকে চিনতো। তাই তাকেই টার্গেট করে। ঘটনার দিন দুপুর ২টার দিকে আসামি অমি, নিহাল, হাসিব শিবপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ভুক্তভোগী রবিউল ইসলামকে পেয়ে তার অটোরিকশা নিয়ে বিকাল ৪টার দিকে আসামি শাজিদুল ইসলাম হাসিবের বাড়ির সামনে থাকতে বলে। আসামি অমি ও নিহাল বিকেল ৪টার আগেই আসামি হাসিবের বাড়ির সামনে উপস্থিত হয়।
ভুক্তভোগী রবিউল ইসলাম বিকাল ৪টার দিকে হাসিবের বাড়ির সামনে আসলে অভিযুক্তরা রবিউল ইসলামের অটোরিকশা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি করে আড্ডা দেয়। একপর্যায়ে শিবপুর থানাধীন সাতপাইকার ঘটনাস্থলে পৌঁছে ১০ থেকে ১৫ মিনিট আড্ডা দেয়। আড্ডা শেষে বাড়ির দিকে রওনা হওয়ার কথা বলে আসামিদের দুইজন পেছনে এবং একজন সামনের আসনে চালক রবিউল ইসলামের পাশে বসে। পরে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, হাসিব ও নেহাল রবিউলের হাত পা জাপটে ধরে রাখে। এ সময় আসামি অমি চাপাতি দিয়ে রবিউলের গলায় কুপায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় রবিউল। এরপর আসামিরা তার মরদেহ ধানক্ষেতে ফেলে দিয়ে অটোরিকশাটি নিয়ে পালিয়ে যায়।
এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, আসামি অমির দেওয়ার তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতিটি উদ্ধার করা হয়। পলাতক আসামি নেহালকে ধরতে অভিযান অব্যাহত।