আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় এবার নতুন করে সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ণের দাবি জানিয়েছেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন।
জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২৪ উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা ও সড়ক নিরাপত্তার বিষয়ে আলোকপাত করতে মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে নিসচা।
সংবাদ সম্মেলনে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, “সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ নামে একটি আইন পাস করলেও আইনটি আজও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি এবং আইনটিতে সড়ক ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিত। আমরা বারবার বিগত সরকারকে অনুরোধ করেছিলাম আইনটির নামকরণ ‘সড়ক পরিবহন ও সড়ক নিরাপত্তা আইন’ করা হোক। দুঃখের বিষয় দুষ্টচক্রের চাপে শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তা কথাটি রাখা হয়নি। তাই বর্তমান সরকারের কাছে ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ নামে একটি নতুন আইন প্রণয়নের জোর দাবি জানাচ্ছি।”
দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘রোড সেফটি ইউনিট’ গঠনের পাশাপাশি ‘রোড সেফটি অথরিটি’ গঠনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘রোড সেফটি ইউনিট গঠন করা হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিক্ষাজীবন থেকে নিজেদের জীবন এবং অন্যদের জীবন বাঁচানোর কৌশল রপ্ত করতে পারে। এ ছাড়া সড়ক সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সমন্বয়ে উচ্চপর্যায়ের এই রোড সেফটি অথরিটি গঠন করা হবে যারা রোড ক্রাশমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কাজ করবে।’
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত নিসচাকে বারবার রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে বিব্রত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন ইলিয়াস কাঞ্চন।
তিনি বলেন, ‘সড়ককে নিরাপদ করার দায়িত্ব সরকারের। আমরা হলাম স্টেকহোল্ডার। অতীতে যখন যে সরকার দেশ পরিচালনা করেছে, স্বভাবতই সড়ক নিরাপত্তার দাবি দাওয়া নিয়ে তাদের কাছে যেতে হয়েছে। তার মানে এই নয় যে আমি বা আমার সংগঠন সেই সরকারের অংশ। শুধু আমাদের আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার জন্য একটি অশুভ চক্র সুকৌশলে রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে দিয়েছে। যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে আমাকে বানিয়েছে তাদের বিরোধী দলের লোক। অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কান ভারী করা হয়েছে এই বলে যে, আমি পতিত সরকারের লোক। দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বলতে হচ্ছে, ৩১ বছর ধরে দেশের মানুষের কল্যাণে নিরলস কাজ করে যাওয়া সংগঠনটিকে সব সরকারের কাছে অবহেলিত ও নিগৃহীত হতে হয়েছে।’
জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালন উপলক্ষে মাসব্যাপী সংগঠনের পক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেন ইলিয়াস কাঞ্চন।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ফ্রি হেলমেট বিতরণ, সড়কে যানবাহনে চলাচলের জন্য করণীয় শীর্ষক সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সড়ক ব্যবহারে সচেতন করতে ‘শিক্ষার্থী’ সমাবেশ, মোটরশ্রমিকদের মাঝে সেফটি জ্যাকেট বিতরণ, স্পিড ব্রেকার ও জেব্রা ক্রসিং রঙ করা, যানজট নিরসনে ট্রাফিক ক্যাম্পেইন, সড়ক নিরাপত্তা ইস্যুতে সংবাদ সম্মেলন, শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ কর্মশালা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা, অভিভাবক সমাবেশ, চালক প্রশিক্ষণ কর্মশালা, গোলটেবিল বৈঠক, র্যালি ও সমাবেশ, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময়, সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জনসচেতনতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন, অবৈধ রেল ক্রসিংয়ে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন।
এ ছাড়া বিভিন্ন জেলায় নগর পরিবহন চালুর দাবিতে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রদান, শহরের জনবহুল এলাকায় সড়ক সচেতনতামূলক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে বয়সভিক্তিক রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন ও সেরাদের পুরস্কার বিতরণ, পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন, দুর্ঘটনায় আহতদের স্বেচ্ছায় রক্তদান, দুর্গাপূজার সময় জনবহুল মণ্ডপে যাতায়াতের রাস্তায় ট্রাফিক ক্যাম্পেইন ও যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার কর্মসূচিও নিয়েছে নিসচা।
স্থানীয় ইমামদের নিয়ে সড়ক নিরাপত্তামূলক প্রশিক্ষণ কর্মশালা, বিট পুলিশিং ও হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে মতবিনিময়, যানবাহন মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের কর্মসূচিও রয়েছে মাসব্যাপী পরিকল্পনায়।
সংবাদ সম্মেলনে নিসচার কেন্দ্রীয় মহাসচিব এস এম আজাদ হোসেন, নিরাপদ সড়ক দিবস উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক জুনাইদুর রহমান মাহফুজ, স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর চন্দন কুমার লাহেরী উপস্থিত ছিলেন।