টানা ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরে আকস্মিক বন্যা হয়েছে। এতে জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ীর উপজেলার ২০টি ইউনিয়নে প্রায় ১ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। বন্যার পানিতে ডুবে এরই মধ্যে নারী, বৃদ্ধ ও কিশোরসহ ৫ জন মারা গেছেন। অন্যদিকে কুড়িগ্রামে টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে জেলার বড় নদ-নদীর পানির উচ্চতা বাড়তে শুরু করেছে।
শেরপুরে প্রবল পানির তোড়ে ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ, কাঁচা ঘরবাড়ি, গাছগাছালি, গবাদি পশুসহ বিধ্বস্ত হয়েছে কয়েকটি মহাসড়কসহ অসংখ্য গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়ক। কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অনেক এলাকা। সংকট তৈরি হয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার পর থেকে শুরু হয় টানা ভারী বর্ষণ। রাতভর বর্ষণের ফলে বিপৎসীমার ওপরে উঠে যায় জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। এসব নদীর বাঁধ উপচে এবং অসংখ্য স্থানে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে বানের পানি ঢুকে গেছে। সকালেই বাড়িঘর, রাস্তা-ঘাট সব তলিয়ে যায়। আকস্মিক বন্যায় মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েন। পানিতে তলিয়ে যায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান। এতে ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদ ও সদর বাজারসহ অন্তত ৭টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি ইউনিয়নগুলো ছাড়াও নদী তীরের অন্যান্য ইউনিয়ন ও নিম্নাঞ্চলের ইউনিয়নগুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে। শুক্রবার রাত থেকে পাহাড়ি নদীগুলোর পানির তীব্রতা কিছুটা কমে এলেও ভাটি অঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করে। সব মিলিয়ে অন্তত ১০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয় এ উপজেলার। অন্যদিকে শ্রীবরদী উপজেলায় তিনটি ইউনিয়ন পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে উপজেলার অভয়পুর গ্রামের বাছির উদ্দিনের ছেলে হাতেম আলী (৩০) ও সহোদর আলমগীর (১৬) চেল্লাখালী নদীর ভেঙে যাওয়া পানির স্রোতে নিখোঁজ হয়। পরে শনিবার পানি কিছুটা কমে আসায় বিকেল ৪টার দিকে কুতুবাকুড়া গ্রামের ধানখেত থেকে ওই দুই সহোদরের লাশ উদ্ধার করা হয়। একইভাবে শুক্রবার বন্যার পানিতে ডুবে মারা যান উপজেলার বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের মানিক মিয়ার স্ত্রী ওমিজা বেগম। একই দিন সন্ধ্যায় খলিসাকুড়া গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে মারা যান বৃদ্ধ ইদ্রিস আলী। এ ছাড়া আরও একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত তার নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন আরও একজন।
বানভাসি মানুষকে উদ্ধারে শুক্রবার থেকেই কাজ করছে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, বিজিবি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। শনিবার দিনভর স্পিডবোট, নৌকা, ভেলা, টিউব ইত্যাদি নিয়ে চলে বন্যায় আটকেপড়াদের উদ্ধার অভিযান। এ ছাড়াও শুকনা খাবারসহ অন্য খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে বানভাসিদের মাঝে। এসব কাজে অংশ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুজ্জামান খান বলেন, ‘পানি নেমে গেলে মহারশি, চেল্লাখালী ও ভোগাই নদীতে ভাঙন অংশগুলো মেরামত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ জেলা কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘পানিতে ধান ও সবজিখেত নিমজ্জিত রয়েছে। তবে পানি নেমে যাওয়ার পর পরিদর্শন করে কৃষকদের পরবর্তী সময়ে সহযোগিতা করা হবে।’
জেলা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘সড়কের যেসব জায়গায় বেশি ভেঙে গেছে সেগুলো পানি নেমে যাওয়ার পর যতদ্রুত সম্ভব মেরামত শুরু করা হবে।’ জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, শেরপুরের বন্যাপরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। তবে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা এখনই জানা যাচ্ছে না।
কুড়িগ্রামে টানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগে মানুষ, বাড়ছে নদ-নদীর পানি
কুড়িগ্রামে গেল ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় ১৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে জেলার রাজার হাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষাণাগার। এদিকে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে খেটে খাওয়া ও দিনমজুর শ্রেণির মানুষজন। ভারী বর্ষণের কারণে ব্যাহত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
এদিকে টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে জেলার বড় নদ-নদীর পানির উচ্চতা বাড়তে শুরু করেছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে নদ-নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে এখনো বিপৎসীমার নিচে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, টানা বৃষ্টিপাতের কারণে জেলার সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপাতত বন্যার শঙ্কা নেই।