অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সব বাধা পাশ কাটিয়ে জনগণের ভোটের ম্যান্ডেট ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।

তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই পথে তারা যতদূত এগিয়ে যাবে ততই দেশের জন্য মঙ্গল।’

বুধবার (১৩ নভেম্বর) রাজধানীর মোমেনবাগে দ্য মিলেনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেমোক্রেসি অডিটোরিয়ামে এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

‘ছাত্র-জনতার বিপ্লবের ১০০ দিন’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে দ্য মিলেনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়। এতে সভাপতিত্ব করেন দ্য মিলেনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রোখসানা খন্দকার।

ছাত্রদের উদ্দেশে মঈন খান বলেন, ‘বাংলাদেশর মানুষের চরিত্র ও মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন আসছে। ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলন বিশ্বের ইতিহাসে স্থান পাবে। বিপ্লব হয়, প্রতিবিপ্লব, প্রতিপ্রতি বিপ্লব হয়। বেশি দূরে যেতে হবে না, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর গেলেই হবে। আলোচনা-সমালোচনা হবে। তার মধ্য দিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। মানুষের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। ঘাত-প্রতিঘাত থাকবে, বাধা-বিপত্তি থাকবে। কিন্তু মানুষের মুক্তির পথের লক্ষ্যে সবাইকে স্থির থাকতে হবে।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজের বৈধতার জন্য নতুন আইন তৈরির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘এই সরকার একটি আইন করতে যাচ্ছে, আমার কাছে মনে হয় এটি একটি ইনডেমনিটি অ্যাক্ট। ১০০ দিন পর এসে কেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এই আইন পাস করতে হচ্ছে? সরকারের মনে কেন ভয় ঢুকল, কেন ইনডেমনিটি আইন করতে হবে? এ আইন নিয়ে আমি শঙ্কিত। এই সরকার জনগণের আকুণ্ঠ সমর্থন নিয়েই ক্ষমতায় আছে। এখানে আইনের প্রশ্ন বাধ্যবাধকতা মাত্র।’

আব্দুল মঈন খান আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১০০ দিন ও ছাত্র-জনতার বিপ্লবের ১০০ দিন সম্পূর্ণ ভিন্ন। ৫ আগস্ট বাংলাদেশে একটি অভূতপূর্ব বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। গত ৫ আগস্ট গণভবন দখল করে দেশের মানুষ তার অধিকার পুনরায় ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে। ৫ আগস্ট ছিল জনগণের বিপ্লব।’

আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে সরকার গঠনের সময় আমরা একটি ভুল করেছিলাম। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে মিলেমিশে বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চেয়েছিলাম। তখন একটি রাজনৈতিক দল সাড়া দেয়নি। সেই একই রাজনৈতিক দল বিগত ১৫ বছর লুণ্ঠন করে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছে। আজকে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে দেশে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আবারও নতুনভাবে উদ্ভাসিত হয়েছে। ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে।’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘রাজনীতিকে আগে রিস্টোর করতে হবে। ফ্যাসিস্ট থেকে গণতন্ত্র তৈরি করতে যা যা করা প্রয়োজন তা করা দরকার। সব সংস্কারই অন্তর্বর্তী সরকার করতে হবে কেন? অধিকাংশ সংস্কার করবে নির্বাচিত সরকার।’

সর্বশেষ তিন উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া ‘ছেলেখেলা’র মতো মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘দেশকে ফ্যাসিবাদ থেকে গণতন্ত্রে রূপান্তর করতে হলে ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা উচিত।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোই ছাত্রদের ভূমিকার স্বীকৃতি দিয়েছে। বর্তমান সরকার আমাদের সরকার, এর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কিছু নেই। এ সরকার আমাদের প্রতিপক্ষ না।’

নির্দিষ্ট সংস্কার শেষে অন্তর্বর্তী সরকার বিদায় নেবে- এমন আশা ব্যক্ত করে সাকি বলেন, ‘সরকার ব্যর্থ হলে আমরা ব্যর্থ হব। কেবল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দিয়ে সরকার পরিচালনা করলে জনগণের সঙ্গে দিন দিন দূরত্ব তৈরি হবে।’

গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণফোরামের কো-চেয়ারম্যান সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।