দেশের সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি আদায়ে বৃহস্পতিবারের রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছে। শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর নতুন সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানান আন্দোলনরত পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিশেষ বার্তায় এসব তথ্য জানা যায়।
প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে এবং শিক্ষা উপদেষ্টার আহ্বানে বৈঠকে বসছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় সারা দেশে রেল ব্লকেড কর্মসূচি শিথিল থাকবে। বৈঠকের উপর ভিত্তি করে ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ’ এর পরবর্তী কর্মসূচি জানানো হবে।
বার্তায় বলা হয়, ‘‘আজ ১৭ এপ্রিল রোজ বৃহস্পতিবার মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের হস্তক্ষেপে শিক্ষা উপদেষ্টার আহ্বানে বৈঠকে অংশগ্রহণ করবে ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ’। সকল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সিদ্ধান্তক্রমে বৈঠক চলাকালীন সময়ে রেল ব্লকেড কর্মসূচি শিথিল থাকবে। বৈঠকের উপর ভিত্তি করে সারা বাংলাদেশের সকল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের জন্য পরবর্তী কর্মসূচি প্রকাশ করা হবে।’’
গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে সারাদেশে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। আন্দোলনের কারণে সারাদেশের মহাসড়কগুলোতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
পরে রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে আজ বৃহস্পতিবার রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি হলো-
১) জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কতৃর্ক বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবি পরিবর্তন এবং মামলার সাথে সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
২) ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিলসহ উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম নিশ্চিত করে একাডেমিক কার্যক্রম পরবর্তী প্রবিধান থেকে পর্যায়ক্রমিকভাবে সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে চালু করতে হবে।
৩) উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমানের (১০ম গ্রেড) পদ চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) হতে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্নস্থ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪) কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল পদে কারিগরি শিক্ষা বহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোতে অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং সকল শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
৫) কারিগরি শিক্ষায় বৈষম্য ও দুরাবস্থা দূর করার পাশাপাশি দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।
৬) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি, নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নওগাঁ, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক হতে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।