লক্ষন বর্মন, নরসিংদী: নরসিংদীর মনোহরদীতে সাধু বেশে এক প্রতারক এলাকায় এসে দুই হিন্দু পরিবারের সকলকে অচেতন করে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা পয়সা লুট করে নিয়ে গেছে। মঙ্গলবার রাতে উপজেলার খিদিরপুর ইউনিয়নের বীর আহমদপুর মোদক বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। প্রতারিত সকলে অচেতন থাকায় লুটকৃত মালামালের পরিমাণ জানা যায়নি।
অচেতন ব্যক্তিরা হলেন, নির্মল চন্দ্র মোদক (৫৫), তার স্ত্রী সবিতা মোদক (৪০), তার তিন মেয়ে আখি মোদক (১৫), শ্রাবন্তী মোদক (১২), তোরা রাণী মোদক (৫), অখিল চন্দ্র মোদক (৫৫), তার স্ত্রী লুনা মোদক (৪০)। এদের মধ্যে ৫ জনকে আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক মাস ধরে জনৈক সাধু চালাকচর মোদক বাড়ীর শ্রী গুরু আশ্রমে মাঝে-মাঝে আসা-যাওয়া করতো। এক পর্যায়ে এলাকাবাসী তার ধর্মীয় কথাবার্তায় আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। এলাকার সনাতন ধর্মীয় লোকজন ধর্মীয় গুরু হিসেবে তার কাছ থেকে দীক্ষা গ্রহণ করতে থাকে। বিগত এক সপ্তাহ ধরে মোদক বাড়ীর শ্রী গুরু আশ্রমে স্থায়ীভাবে অবস্থান করে আসছে। তার কাছ থেকে দীক্ষা নেওয়ার জন্য স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সরল বিশ্বাসে তাকে নিমন্ত্রন করে পালাক্রমে একেক দিন একেক বাড়ীতে নিয়ে যায়। মঙ্গলবার রাতে নির্মল মোদক তার বাড়ীতে সাধুকে নিমন্ত্রন জানায়। সাধু ঐ রাতে নির্মল মোদকের বাড়ীতে গিয়ে প্রসাদ তৈরী করে নির্মল মোদক ও প্রতিবেশী অখিল মোদকের পরিবারের সবাইকে খেতে দেয়।
কিছুক্ষণ পর দুই পরিবারের সকলেই অচেতন হয়ে পড়লে প্রতারক সাধু নির্মল মোদক ও অখিল মোদকের বাড়ী থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়। পরদিন সকালে প্রতিবেশীরা তাদেরকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক অচেতন পাঁচজনের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাদেরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। বাকী দুজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
বিকাল ৫টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অচেতন কারো জ্ঞান ফিরেনি।
শ্রী গুরু আশ্রমের সভাপতি ডা. নারায়ণ চন্দ্র মোদক জানান, খবর পেয়ে আমরা ওই বাড়িতে গিয়ে আহতদের হাসপাতালে পাঠিয়েছি। তবে পরিবারের সকলে অচেতন থাকায় লুটকৃত মালামালের পরিমাণ জানতে পারিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা প্রশাসক ডা. মো. শফীকুল আলম বলেন, প্রসাদের সাথে মাত্রারিক্ত ঘুমের ওষধ ব্যবহার করায় সকলেই অচেতন হতে পারে বলে আমার ধারণা।
মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম ফরাজী বলেন, প্রতারক সাধু দেয়া প্রসাদ খেয়ে দুই পরিবারের সাত সদস্য অচেতন হওয়ার সংবাদ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য ঘটনাস্থানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।