লক্ষন বর্মন, নরসিংদী : হত্যাকান্ডের দীর্ঘ ১৮ দিন পর কলেজ ছাত্র মাহফুজের খন্ডিত দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে নরসিংদী মডেল থানা পুলিশ বাদুয়ারচরের হাড়িধোয়া নদীতে ভাসমান অবস্থায় একটি ট্রাভেল ব্যাগ থেকে খন্ডিত দেহটি উদ্ধার করে। এছাড়া হত্যা মামলার অপর আসামী রাজুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে ১৬৪ ধারায় জবান বন্দি দেয়ার পর বুধবার সন্ধ্যায় বিচারক তাকে জেল হাজতে প্রেরন করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাহফুজকে হত্যা করে তার দেহটিকে ৮টি খন্ড করা হয়েছে। মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ২টি পা ৪টি খন্ড করা হয়েছে, ২টি হাত দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। দেহের খন্ডগুলো পচে বিনষ্ট হয়ে গেছে। বুকের পাজর বেরিয়ে গেছে, অন্যান্য খন্ডগুলোর মাংস হাড় থেকে গলে খসে গেছে। তবে মাহফুজের মাথাটি খোজে পাওয়া যায়নি। হত্যাকারী রাবেয়া তার দেহটি বিচ্ছিন্ন করে অন্য জায়গায় ফেলে দিয়েছে বলে জনান।
উল্লেখ্য, গত ২৬ মে নরসিংদী জেলা শহরের বানিয়াছল মহল্লার (বৌয়াকুড় মোড়) আব্দুল মান্নান সরকারের পুত্র। রাঙ্গামাটিয়া মহল্লার প্রবাসী আল মামুনের স্ত্রী রাবেয়া ইসলাম রাবু তাকে বাড়ীতে ডেকে নিয়ে হত্যা করে। পরে তাকে বাথরুমে নিয়ে দেহটিকে ৮টি খন্ড করে পলিথিন ব্যাগে মুড়িয়ে ডীপ ফ্রিজে রেখে দেয়। পরদিন ২৭ মে শনিবার রাতে রাবু তার দেহটি ট্রাভেল ব্যাগে ভর্তি করে গুম করে ফেলে। ঘটনাচক্রে তথ্য ফাঁস হয়ে যাবার পর ১ মে নরসিংদী থানা পুলিশ রাবেয়া ইসলাম রাবুকে আটক করে। কয়েকদিন জিজ্ঞাসাবাদের পর সে পুলিশের নিকট ১৬১ ধারার জবানবন্দীতে মাহফুজ সরকারকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেন। এরপর ৬ জুন রাবেয়া ইসলাম রাবু আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে মাহফুজকে হত্যার ঘটনা বর্ননা করেন। সে জানায় যে মাহফুজকে হত্যা করে তার লাশ বাঞ্ছারামপুরের মরিচাকান্দীতে মেঘনার পানিতে ফেলে দেন। এরপর মাহফুজের পিতা ভাই ও আত্মীয় স্বজনরা মেঘনার পানিতে লাশ খোজাখুজি করেও পায়নি।
বুধবার লোকমুখে জানা যায় যে, নরসিংদী শহর সংলগ্ন হাজীপুর ইউনিয়নের বাদুয়ারচর গ্রামের ঈদগাহ সংলগ্ন হাড়িধোয়া নদীতে লাশ ভর্তি একটি ট্রাভেল ব্যাগ ভাসছে। এ খবর পেয়ে মাহফুজের বড় ভাই এড. রাসেল পুলিশকে জানালে নরসিংদী থানা পুলিশ রাত সাড়ে ৯ টায় স্থানীয় ব্যবসায়ী সুমনের সহযোগিতায় হাড়িধোয়া নদী থেকে মাহফুজের লাশ উদ্ধার করে। পরে পুলিশ লাশের সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করে। হত্যাকারী রাবেয়া ইসলাম রাবু স্বীকারোক্তিতে মাহফুজের লাশ মেঘনা নদীতে ফেলার কথা বললেও বাদুয়ারচর এলাকাবাসী জানিয়েছেন গত কয়েকদিন থেকেই লাশ ভর্তি ব্যাগটি ঘটনাস্থলে ভাসছিল। কিন্তু লোকজন ভয়ে কিছু বলেনি। বুধবার ঘটনাক্রমে বিষয়টি সারা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সাংবাদিকদের মাধ্যমে ঘটনাটি মাহফুজের পরিবারের গোচরীভূত হয়। পরে মাহফুজের বড় ভাই এড. রাসেলসহ অন্যান্য আত্মীয়রা থানা পুলিশের সহযোগিতায় লাশ উদ্ধার এবং সনাক্ত করে। মাহফুজের খন্ডিত দেহের ৭টি অংশ ব্যাগের ভিতর পেলেও মাথাটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে হত্যাকারী রাবেয়া লাশের মাথাটি অন্য কোন জায়গায় ফেলে দিয়েছে। ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিতে লাশ ফেলার সঠিক স্থান্ এবং মাথা কোথায় ফেলেছে তা সঠিক বলেনি।
ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ মাহফুজের খন্ডিত দেহগুলো তার পরিবারের কাছে হস্থান্তর করে। তার লাশ গাবতলী গোরস্থানে দাফন করা হয়।
এব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নুরে আলম হোসাইন জানান, এটি নিহত মাহফুজের লাশ বলে চিহ্নিত করেছে তার পরিবার। লাশ উদ্ধার করে পোস্টমর্টেমর পর পরিবারের কাছে হস্থান্তর করা হয়েছে। লাশের কিছু অংশ ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।