খন্দকার শাহিন | নরসিংদী প্রতিদিন –
বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০: নরসিংদীতে দিনমজুর হোসেন আলীর ছেলে মেহেদী (২১) প্রবাসে পাড়ি দেয়ার জন্য বন্ধুদের সাথে ঘুরে ফিরে দিন কাটাতে ছিল। কিন্তু বন্ধুদের নিসংশতার বলি হয়ে আজ না ফেরার দেশে পাড়ি জমাল মেহেদী। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) মাধবদী থানার প্রধান ফটকে সামনে লোমহর্ষক ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন ছেলে হারা বাবা হোসেন আলী।
তিনি মেহেদীর মরদেহের বাড়ীতে নেয়ার পূর্বে জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এলাকার কতিপয় কিছু দালালরা, আমার নিরীহ ছেলে মেহেদীকে তার বন্ধুদের দিয়ে নির্যাতন করে ও এসিড খাইয়ে মেরে ফেলেছে। তিনি নরসিংদী প্রতিদিনকে বলেন, গত ২৮ জানুয়ারি স্থানীয় ওয়াজ মাহফিলে বন্ধুদের সাথে দ্বন্দ্ব বাঁধে মেহেদীর, রাতে বাড়ী ফেরার পথে নুরালাপুর ইউনিয়নের মাটিয়ালকান্দা গ্রামের মতি মিয়ার ছেলে আসিফ (১৮),জামাল উদ্দিনের ছেলে সুজন মিয়া (২০), জিরকুটিয়া গ্রামের সফর আলীর ছেলে ইয়াছিন মিয়া (১৯) ও কাঠাঁলিয়া ইউনিয়নের দরিকান্দী গ্রামের কামাল উদ্দিনের ছেলে আব্দুল্লাহ (২০) সহ আরো অজ্ঞাত ৬/৭ জন সংঘবদ্ধ দল তাকে শ্যামতলী ইদগাহ এর সামনে অতর্কিত হামলা চালায়। পরে হত্যার উদ্যেশে তারা মারপিট করে মূখের ভিতর এসিড ঢেলে দিয়ে পালিয়ে যায়।
পরে স্থানীয়রা মেহেদীকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে, আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। মেহেদীর শাররীক অবস্থার অবনতি দেখে চিকিৎসক উন্নতর চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। এসিড জাতীয় ধাতুর কারনে তার গলার মাংস ও পেটের লিভার জ্বলে যায়। এতে ঢামেক চিকিৎসক মেহেদীকে পানি পান করাতে নিষেধ দেন। কিন্তু অসহ্য যন্ত্রনায় মেহেদী পানি পান করতে না পারায় হাসপাতাল থেকে চলে আসতে বাধ্য হয়। গত মঙ্গলবার মেহেদী ও তার বাবা হোসেন আলী মাধবদী থানায় এসে বন্ধুদের নিসংশতার ঘটনার বিবরণ দিয়ে একটি অভিযোগ দেন। তিনি আরো বলেন, মৃত্যুর পূর্বে মেহেদী বলছিলো শুধু আমার পেটের ভিতরের সবকিছু পুড়ে গেছে বলত আর যন্ত্রণায় ছটফট করত, তিনি ছেলে হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।
নরসিংদী জেলা হাসপাতাল এর আরএমও মিজানুর রহমান নরসিংদী প্রতিদিনকে বলেছেন, নিহত মেহেদী ঢামেকের চিকিৎসা নিয়ে ছিল। তার চিকিৎসা পত্র উল্লেখ্য করা আছে লিভার অকেজো হয়ে গেছে। যা এসিড জাতীয় ধাতুর কারণে দ্রুত এই সমস্যা হয়ে থাকে। পুনরায় গুরতর অবস্থায় মেহেদীকে মঙ্গলবার জেলা হাসপাতালে জরুরী বিভাগে নিয়ে আসে তার স্বজনরা, রাতে মেহেদী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান নরসিংদী প্রতিদিনকে জানান, মৃত্যুর পূর্বে মেহেদী নিজেই থানায় এসে অভিযোগ দেয়। অভিযুক্ত আসামীদের মধ্যে ইয়াছিন নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে। মেহেদী মারা যাওয়ার পর বুধবার মেহেদীর বাবা একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বাকী আসামীদের ধরতে আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
#