শীত মৌসুমে বয়স্করা শরীরে নানা ধরনের ব্যথার কথা প্রায়ই বলে থাকেন। আর এর অন্যতম প্রধান কারণ এ সময়ে পরিবেশের আর্দ্রতা কমে যায় এবং কমে যায় বায়োমেট্রিক চাপও। ফলে শরীরের কোষ বা টিস্যুগুলো আমাদের স্নায়ুর ওপর চাপ দেয়। এ ছাড়া ঠাণ্ডা আবহাওয়ার প্রভাব পড়ে সন্ধি ও পেশিতে। পেশির নমনীয়তা কমে। হাড়ের সংযোগস্থলগুলোও শক্ত হয়ে যায়। ফলে সেখানে ব্যথা বাড়তে পারে।
বয়স্কদের মধ্যে যারা আগে থেকে বিভিন্ন রকম আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত (যেমন রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, গাউটি আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি), শীতে তাদের হাঁটুর ব্যথা বেড়ে যায়। এ ছাড়া শীত মৌসুমে তরুণদের ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, ফুটবল ইত্যাদি খেলাধুলায় হাঁটুর লিগামেন্ট ও মিনিসকাস ইনজুরিতে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। শীতকালে শরীরে ভিটামিন ডি-ও কমে যায়। ফলে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়।
করণীয়
* হঠাৎ হাঁটুতে আঘাত পেলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও বরফের সেঁক দিতে হবে। প্রয়োজনে ব্যান্ডেজ বেঁধে বালিশের ওপর হাঁটু উঁচু করে রাখতে হবে। খেলাধুলার শুরুতেই ভালোভাবে ওয়ার্মআপ (প্রস্তুতিমূলক ব্যায়াম) করতে হবে। তাহলে অনেকাংশে লিগামেন্ট বা মিনিসকাস ইনজুরি প্রতিরোধ করা যাবে।
* শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কারণ ওজন বেশি থাকলে হাঁটুর ব্যথা বাড়ে। অতিরিক্ত ওজনের চাপ হাঁটু নিতে পারে না। ফলে ব্যথা হয়। এ জন্য শীতেও রোজ কিছুটা ব্যায়াম করতে হবে। গরম সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যাবে। দীর্ঘদিনের ব্যথায় গরম সেঁক দিন। গরম সেঁক হাঁটুর আশপাশের পেশির নমনীয়তা বাড়ায়, রক্তনালি প্রসারিত করে বলে রক্ত চলাচল বাড়ায়। তাতে হাঁটু সচল হবে।
* হাঁটুব্যথার কারণ অনুযায়ী ফিজিওথেরাপি নিতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা করুন (প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট)। শরীরচর্চা আপনার রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, যা হাঁটুব্যথা কমায়। নিয়মিত ব্যায়াম হাড়ের ঘনত্ব বাড়িয়ে সন্ধিসংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করে।
* প্রতিদিন ৩০ মিনিট শরীরে রোদ লাগানো ও ধূমপান বর্জন অত্যন্ত জরুরি।
* আর ভীষণ প্রয়োজনীয় খাবারের তালিকায় ভিটামিন সি ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবার; যেমন সামুদ্রিক মাছ, টুনা মাছ, বাদাম, তিসি যোগ করতে হবে।
* ব্যথা বাড়লে ফিজিওথেরাপিস্ট ও রিউম্যাটোলজিস্টের পরামর্শ অত্যাবশ্যকীয়।
লেখক: ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ