নিউজ ডেস্ক,নরসিংদী প্রতিদিন,রবিবার, ১৫ এপ্রিল ২০১৮: মাথার চুল এখন আর ফেলনা নয়। চুল এখন বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। এক সময় মহিলারা তাদের মাথার চুল আঁচড়িয়ে ফেলে দিত। কিন্তু তখন কি তারা ভেবেছে এই ফেলে দেয়া চুল এক সময় বিদেশে রফতানি হবে? এ ফেলে দেয়া চুলকে ঘিরেই দেশে গড়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠান। মেশিন দিয়ে সাইজ করে পাঠানো হচ্ছে চীন-কোরিয়াসহ বিশ্বের নানা দেশে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে অনেকের।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়ায় গড়ে উঠেছে এমনই একটি চুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র। সেখানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে শতাধিক নারী-পুরুষের। এ প্রতিষ্ঠানের যৌথভাবে মালিক চুয়াডাঙ্গার আবু বক্কর ও স্থানীয় নারিকেলবাড়িয়ার শওকত আলী। দীর্ঘ আট বছর ধরে তারা হকারদের কাছ থেকে চুল কিনে পাঠাচ্ছেন বাইরের দেশে।
আবু বক্কর ও শওকত আলী জানান, হকাররা বিভিন্ন এলাকা থেকে চুল সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করেন। এর মধ্যে মহিলাদের মাথার কালো চুল তারা কেনেন প্রকারভেদে তিন হাজার থেকে চর হাজার টাকা কেজি দরে। আর পেকে যাওয়া চুল কেনেন এক হাজার থেকে ১২’শ টাকায় (প্রতি কেজি)।
এরপর অগোছালো চুল বাছাই করা হয়। বাছাই কাজে সাধারণত মহিলাদের নিয়োগ দেয়া হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম চুল বাছাইয়ের জন্য তাদের দেয়া হয় ২৫ টাকা করে। স্থানীয় অর্ধ শতাধিক নারী এ কাজ করে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন বলে জানা যায়।
নারিকেলবাড়িয়ার ঋষি পাড়ার গৃহবধূ কনিকা (২৩) দু’বছর ধরে চুল বাছাইয়ের কাজ করে আসছেন। তিনি বলেন ‘১০০গ্রাম চুল ছাড়ালি ২৫ টাকা। সংসারের কাজ সাইরে এই কাজ করতি বসি। কোন দিন ১০০ গ্রাম আবার কোন দিন ২০০ গ্রাম ছাড়াতি পারি’।
একই কথা বলেন, কনিকার প্রতিবেশী গৃহবধু সিমলা রানী (২৭), ববিতা রানী (২৫) ও হাসি বালা।
আবু বক্কর ও শওকত আলী জানান, চুল বাছাইয়ের পর মেশিন দিয়ে তা শাট বা সাইজ করা হয়। এর পর চুলের গোছা করে বিক্রি উপযোগী করে কুরিয়ার যোগে ঢাকার উত্তরায় পাঠানো হয়। সেখান থেকে চায়না ও কোরিয়ানরা কিনে নিয়ে যায় তাদের দেশে। এ চুল দিয়ে বিদেশীরা ক্যাপ তৈরি করেন বলে জানান তারা।
নাইরকেলবাড়িয়া চুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে নিজেরা বাদে আট জন শ্রমিক রয়েছে। তাদের বেতন ২০০০ থেকে ৭০০০ টাকা পর্যন্ত। খেয়ে-পরে ভালই আছেন-বললেন, আবু বক্কর ও শওকত আলী।