নরসিংদী প্রতিদিন : অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে মাত্র দুই শতাংশ জমি রেজিষ্ট্রি করে না দেয়ার কারনে রাশিদা আক্তার নামে এক গৃহবধূ তার স্বামী আলী হোসেনের বিরুদ্ধে আদালতে ধর্ষনের মামলা দায়ের করেছে। এ চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে নরসিংদী সদর উপজেলার পৌলানপুর গ্রামে। সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা গেছে, ওই গ্রামের মো: উমেদ আলীর কন্যা ও স্থানীয় পাঁচদোনা স্যার কেজি গুপ্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী রাশিদা আক্তারের সাথে একই উপজেলার বাগহাটা গ্রামের মো: হাবিজ উদ্দিনের পুত্র আলী হোসেন এর মন দেয়া নেয়ার কাজ চলে আসছিল। ঘটনাটি জানাজানি হয়ে গেলে উভয়পরে অভিভাবকদের মতামতের ভিত্তিতে গত ১৭ এপ্রিল সোমবার রাশিদা আক্তারের সাথে আলী হোসেনের ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী বিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু রাশিদা আক্তারের বয়স কম থাকায় স্থানীয় কাজী হাবিবুর রহমান বিয়ের কাবিন রেজিষ্ট্রি না করে স্থানীয় জামে মসজিদের ইমামকে দিয়ে বিয়ে পড়ানো হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে ৪০ জন বরযাত্রীকে কনের অভিভাবকরা লোকেরা ভালভাবে আপ্যায়ন করে। এ সময় কনের প থেকে আলী হোসেনকে নগদ ৩০ হাজার টাকা এবং এক ভরি স্বর্ণালংকার প্রদান করা হয়। বিয়ের পর থেকে রাশিদা আক্তার তার শ্বশুর বাড়িতে খুব সুখেই দাম্পত্য জীবন যাপন করে আসছিল। ইতো মধ্যে রাশিদা আক্তার ৩ মাসের অন্তসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিভিন্ন সময় রাশিদা বেগম তার স্বামীর নিকট বিভিন্ন জিনিসপত্র দাবী করত। আলী হোসেন পেশায় ছিল একজন অটোরিক্সা চালক। তাই অনেক সময় সে তার স্ত্রীর চাহিদা পূরন করতে ব্যর্থ হয়। এ নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অনেক সময় মনমালিন্যও হতো। বিষয়টি রাশিদার পিতা উমেদ আলী জানতে পেরে রাশিদাকে তার শ্বশুর বাড়ি থেকে নিজ বাড়ি নিয়ে আসে। একদিন পর আলী হোসেন তার স্ত্রীকে নিতে আসলে তার শ্বশুর তাকে পরিস্কারভাবে জানিয়ে দেয় যে, তার স্ত্রীকে নিতে হলে রাশিদা আক্তারের নামে দুই শতাংশ জমি সাফকবলা রেজিষ্ট্রি করে দিতে হবে এবং ৩ লাখ টাকার কাবিন দিতে হবে। তা না হলে রাশিদাকে ঘর সংসার করতে দেয়া হবেনা। বিষয়টি আলী হোসেন তার পিতা-মাতাকে জানালে তারা তাদের পুত্রবধূকে আনার জন্য রাশিদার পিতার বাড়িতে আসে এবং ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাশিদার পিতা জানায় যে, তাদের দাবী পুরন করতে না পারলে তিনি তার কন্যা রাশিদাকে স্বামীর বাড়িতে দেয়া হবেনা। আলী হোসেনের পিতামাতা এ বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করলে রাশিদার পিতা তাদেরকে বাড়ি থেকে অপমান করে বের করে দেয়। পরবর্তীতে এলাকার কতিপয় কুচক্রী মহলের পরামর্শে গত ১৭/১০/২০১৭ইং তারিখে রাশিদা আক্তার বাদী হয়ে তার স্বামী আলী হোসেনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নরসিংদী আদালতে একটি মিথ্যা ধর্ষনের মামলা দায়ের করে। যাহার মামলা নং-৫০৬/১৭। ধারা: নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী-২০০৩) এর ৯ (১) ধারা। মামলায় উল্লেখ করা হয়ে যে, গত ৬ মাস পূর্বে আসামী আলী হোসেন রাশিদা আক্তারকে বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ২ ঘন্টা আটক রেখে ধর্ষন করে। বর্তমানে ভিকটিম রাশিদা আক্তার ৩ মাসের গর্ভবর্তী। এ ব্যাপারে রাশিদা আক্তারের সাথে আলাপ করলে সে জানায়, আলী হোসেনের সাথে আমার বিয়ের ২ বছর পূর্বে প্রেম ছিল এবং তাদের বিয়েও হয়। আমি এখন তিন মাসের অন্তসত্ত্বা। আমি স্বামীর সংসার করতে চাই। কিন্তু পিতা-মাতার দাবী পুরন করে আমাকে নিতে হবে। স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষনের মামলা করেছেন কেন জানতে চাইলে রাশিদা আক্তার জানায়, তার পিতা-মাতার পরামর্শে সে মামলা করতে বাধ্য হয়েছে। তবে সে তার গর্ভের সন্তানের পিতৃ পরিচয় চায়। রাশিদার পিতা উমেদ আলী জানায়, তার মেয়ের কোনদিন বিয়ে হয়নি। রাশিদাকে আসামী আলী হোসেন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষন করেছে। তিনি ঘটনার ন্যায় বিচার চান। বিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত কাজী হাবিবুর রহমান জানায়, বিয়ে হয়েছে সত্যি। কিন্তু কনের বয়স কম থাকায় তিনি বিয়ের কাবিন রেজিষ্ট্রি করেননি। স্থানীয় মসজিদের ইমামকে দিয়ে বিয়ে পড়ানো হয়েছে। এছাড়া আলী হোসেন ও রাশিদা আক্তারের বিয়ের ঘটনাটি এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বারসহ সর্বস্তরের জনগণ জানে। এদিকে স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর মিথ্যা ও সাজানো ধর্ষনের মামলাটি এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে এবং এলাকাবাসীর মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আলী হোসেন ও তার পরিবারের লোকেরা সংশিষ্ট্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপরে নিকট ন্যায় বিচারের দাবী জানিয়েছেন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিকট সহযোগিতা কামনা করেছেন।
#