ডামেক প্রতিবেদক,নরসিংদী প্রতিদিন,শুক্রবার,২৭ এপ্রিল ২০১৮: আড়াইহাজার উপজেলা চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাজালাল মিয়ার পুত্র সুমনের বিরুদ্ধে ওয়ার্কসপ ব্যবসায়ীকে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মারধর করে একটি পা ভেঙ্গে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল বৃহম্পতিবার রাত ৯টায় মোবাইলে ডেকে নিয়ে চেয়ারম্যানের পুত্র সুমন তার ও সাঙ্গপাঙ্গরা ওয়ার্কসপ
ব্যবসায়ী সুমন মিয়াকে একটি পরিত্যক্ত কক্ষে নিয়ে মুখে কস্ট্যাপ পেঁচিয়ে হাত ও পা বেঁধে মারধর করে গুরুত্বর আহত করে। পরে চেয়ারম্যানের গাড়ী চালক রুপচাঁনকে দিয়ে স্থানীয় একটি রাইজ মিলের পাশে তাকে ফেলে দিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় বলে ডামেক প্রতিবেদককে জানান ভোক্তভোগীর পরিবার।
আহত সুমন বলেন, বৃহম্পতিবার রাত ৯টার দিকে থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহজালাল মিয়ার বড় ছেলে সুমন তাকে মোবাইলে ডেকে পাঠান। পরে সে সুমনদের বাড়িতে যায়। বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই তাকে ধরে একটি পরিত্যক্ত কক্ষে নিয়ে মুখে স্কচটেপ পেঁচিয়ে ও দুইহাত ও পা বেঁধে সুমন ও তার ভাই সোহলসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজন মিলে হকিস্টিক দিয়ে ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত দফায় দফায় তাকে বেধরক পেটাতে থাকেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এ সময় হামলাকারীরা আমাকে বলতে থাকেন তোর ভাই রাজু কোথায়? তাঁকে এনে দে, যদি তাঁকে না দিস, তাহলে তোকে মেরে ফেলব। গভীর রাতে বর্বরতার এক পর্যায়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে পড়লে আমাকে চেয়ারম্যানের গাড়ী চালক রুপচাঁনকে দিয়ে চেয়ারম্যানের গাড়ীতে করেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে চিকিৎসকরা আহতের কারন জানতে চাইলে তার বাগবিতন্ডার ঘটনা ঘটে। পরে সামান্য চিকিৎসা (একটি সেলাই) করিয়ে তাকে ফের চেয়ারম্যানের বাড়ি সংলগ্ন ইসলামী ব্যাংকের নিচে নিয়ে আসা হয়। এখানেও আবার চরথপ্পর মারতে থাকে।
এ সময় আড়াইহাজার থানার ওসি এম এ হক সহ আরও তিন জন এসআই পাশেই নীরবে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজালাল মিয়া ও সুমন বলেন, ‘তিন দিনের মধ্যে রাজুকে এনে দিতে না পারলে তোকে লটকাইয়া (ঝুঁলিয়ে) পেটানো হবে।’
এ ব্যাপারে তার ভাই মামুন মুঠোফোনে বলেন, সুমনকে চেয়ারম্যান শাহজালালের ছেলে সুমন তার পা ভেঙে ফেলেছে। রাত ৯টার দিকে তাকে মোবাইলে ডেকে নিয়ে বাড়িতে একটি পরিত্যক্ত একটি কক্ষে নিয়ে তার ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বরতা চালানো হয়েছে।
পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। মামুন আরও বলেন, এমপি সাহেবকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি রোববার এ ব্যাপারে শালিস করার কথা বলেছেন।
স্থানীয় এক যুবক বলেন, সুমনের ভাই রাজুকে না পেয়ে তার ভাই সুমনকে এভাবে মারপিট করা চেয়ারম্যান ও তার ছেলেদের ঠিক হয়নি। এর একটি সুস্থ্য বিচার হওয়ার উচিত। তা না হলে মানুষ আইন হাতে তুলে নিবে।
ওই রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের কর্মরত চিকিৎসক মোশারফ মুঠোফোনে জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সুমনকে জরুরী বিভাগে নিয়ে আসেন। তার সারা শরীরিরেই আঘাতের চিহৃ ছিল। সুমনকে যিনি নিয়ে আসেন তিনি নিজেকে সুমনের ভাই পরিচয় দিয়ে বলেন তাকে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে।
পরে রাত ২টার দিকে ফের সুমনের আত্মীয়স্বজনরা তাকে জরুরী বিভাগে নিয়ে আসলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহজালাল মিয়া এ ঘটনার অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, সুমনের ওপর কোনো প্রকার নির্যাতন চালানো হয়নি। মূলত ওর ভাই আর ও দুজনেই চোর। কয়েকদিন আগে আমার ছেলের মোটর সাইকেল চুরি যায়। এ চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ওর ভাইকে ডাকানোর জন্যই ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাকে কোন নির্যাতন করা নাই।
এ বিষয়ে আড়াইহাজার থানার ওসি এম এ হক বলেন, ঘটনাটি শোনেছি। কিন্তু এ ঘটনায় এখনও কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।