নিউজ ডেস্ক | নরসিংদী প্রতিদিন-
বৃহস্পতিবার,২৮ নভেম্বর ২০১৯:
রমজান মাস। শবে কদরের রাত। ২০১৬ সালের পহেলা জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলায় ২৪ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে ছিলেন পাঁচ হামলাকারীও। জঙ্গিদের হাত থেকে জাপানি সহায়তা সংস্থা জাইকার কর্মকর্তা থেকে অন্তঃসত্ত্বা নারীও সেদিন রেহাই পাননি। সেদিন নিহত ২৪ জনের মধ্যে ১৭ জনই বিদেশি। এর মধ্যে নয়জন ইতালির নাগরিক, সাতজন জাপানি ও একজন ভারতীয় নাগরিক। এছাড়া একজন বাংলাদেশ- আমেরিকার দ্বৈত নাগরিক, দুজন সাধারণ নাগরিক, হলি আর্টিজানের দুই কর্মচারী ও দুই পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন নিহতদের তালিকায়।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টা ১৭ মিনিটে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বহুল আলোচিত এ হামলা মামলার রায় হয়। এ হামলা মামলায় গ্রেফতারকৃত আট আসামির মধ্যে ৭ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন মিজানুর রহমান।
সেদিন নিহত ইতালীয় নাগরিকরা হলেন- ফেডো ট্রেডিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিসেস ক্লাওদিয়া মারিয়া ডি এন্তোনা (৫৬), সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা মিসেস সিমোনা মন্টি (৩৪), স্টুডিও টেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিসেস নাদিয়া বেনেডেট্টি (৫১) ও সুপারভাইজার মার্কো টোনডাট (৪১), একটি টেক্সটাইল গ্রুপের মাননিয়ন্ত্রক ব্যবস্থাপক মিসেস আদেলে পুগলিসি (৫৫), ক্রিশ্চিয়ান রসি (৪৭), একটি টেক্সটাইল কোম্পানির মালিক ক্লাদিও ক্যাপেলি (৪৫), মিসেস ভিনসেনজো ডি অ্যালেস্ট্রো (৪৫) ও মিসেস মারিয়া রিবোলি (৩৩)।
নিহত জাপানি নাগরিকরা হলেন- মেট্রোরেল প্রকল্পের সমীক্ষা কাজে নিয়োজিত হিরোশি তানাকা (৮০), কোয়ো ওগাসাওয়ারা (৫৭), ইয়োকি সাকাই (৪২), নোবুহিরো কোরুসাকি (৪৯), মাকোটো ওকামুরা (৩২), রুই সিমোডাইরা (২৯) ও হিডেকি হাশিমোটো (৬৫)।
নিহত ভারতীয় নাগরিক হলেন ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার ছাত্রী তারিশি জৈন (১৮)।
নিহত বাংলাদেশিদের মধ্যে বাংলাদেশ ও আমেরিকার দ্বৈত নাগরিক রাজধানীর গুলশান-২ এর ৫০ নম্বর রোডের বাসিন্দা মো. এহসানুল কবিরের মেয়ে অবিন্তা কবির (২০) এবং ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ আইয়াজ হোসেন (২০) ছিলেন।
ঘটনার শুরুতেই জঙ্গিদের বোমার আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে মারা যান বনানী থানার ভারপাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন খান ও ঢাকা মহানগর (উত্তরের) গোয়েন্দা পুলিশের এডিশনাল কমিশনার রবিউল করিম।
হলি আর্টিজান বেকারির দুই স্টাফ শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার কুলকাঠি গ্রামের হাসেম চৌকিদারের ছেলে সাইফুল চৌকিদার (৪০) ও নারায়ণগঞ্জ সদর থানার একরামপুর গ্রামের আব্দুল সাত্তার সরকারের ছেলে জাকির হোসেন শাওন (২২)।
এছাড়া সেনাবাহিনী পরিচালিত ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট-এ পাঁচ জঙ্গি নিহত হন। তারা হলেন- বনানী ডিওএইচএসের মীর হায়াত কবিরের ছেলে মীর সামহ মোবাশ্বের, লালমাটিয়ার এসএম ইমতিয়াজ খান বাবুলের ছেলে রোহান ইমতিয়াজ, উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের নজরুল ইসলামের ছেলে নিবরাস ইসলাম, বগুড়া জেলার শাহজাহানপুর থানার আবুল হোসেনের ছেলে খায়রুল ইসলাম পায়েল ও বগুড়ার ধুনট থানার বদিউজ্জামান বদির ছেলে শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ওরফে বিকাশ।
জঙ্গিদের লাশ তাদের পরিবার গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- হামলার পরিকল্পনাকারী, হামলাকারীদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহ ও হামলায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, নব্য জেএমবির প্রশিক্ষক ও গুলশান হামলায় জড়িতদের প্রশিক্ষণ ও প্ররোচনাদানকারী রাকিবুল হাসান রিগ্যান ওরফে রাফিউল ইসলাম রাফি ওরফে রিপন ওরফে হাসান ওরফে অন্তর, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান হাসান ওরফে হাতকাটা সোহেল মাহফুজ, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন সরদার ওরফে রাশেদ ইসলাম ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যাশ, হামলাকারীদের মেস ভাড়া করে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা, অর্থ লেনদেন, অস্ত্র-গ্রেনেড সরবরাহ ও হামলায় সহায়তাকারী হাদিসুর রহমান সাগর, হামলার পরিকল্পনাকারী, হামলাকারীদের প্রশিক্ষণ, প্ররোচনা দেয়া শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও হামলার পরিকল্পনাকারী এবং অস্ত্র সরবরাহকারী মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন।
এর আগে গত বছরের ২৩ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়। পরে হাসনাত করিমকে অব্যাহতি দেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েস।