নিজস্ব প্রতিবেদক | নরসিংদী প্রতিদিন –
সোমবার, ৯ ডিসেম্ববর ২০১৯:
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব পড়েছে উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগ জুড়ে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ক্রমাগত কমতে থাকা, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কাছাকাছি আসায় রংপুরের আট জেলায় শুরু হয়েছে তীব্র শীত। সন্ধ্যার পরপরই কুয়াশার চাদরে বন্দী হয়ে যাচ্ছে বিস্তৃর্ণ জনপদ। শুরু হয়েছে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব। এতে করে শিশু ও বৃদ্ধদের বেড়েছে দুর্ভোগ। ফলে এবার শীতের তীব্রতা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।
এই অবস্থাকে ‘ডেঞ্জার’ উল্লেখ করে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, চলমান আবহাওয়া পরিবর্তন না ঘটলে এবার শীতের তীব্রতা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতে এই বিভাগের হতদরিদ্র মানুষ চরম দূর্ভোগের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন।
এদিকে, ডিসেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। যা নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাস বলছে, ডিসেম্বরের শেষ ভাগে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে একটি বা দুটি মৃদু (৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা) কিংবা মাঝারি (৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা) শৈত্য প্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
সূত্র জানায়, ডিসেম্বরের শুরু থেকেই ক্রমাগতই কাছাকাছি আসছে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। কমছে বাতসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণও। এতে বাড়ছে আদ্রতার শতকরা হার। সর্বোচ্চ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কাছাকাছি আসা এবং সন্ধায় বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবের কারণে এবার আগেই শীতে এসে গেছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান, এবার কার্তিক মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরু থেকেই রংপুরসহ পুরো বিভাগ জুড়ে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কাছাকাছি আসা শুরু করেছে। ফলে শীত ও কুয়াশাও পড়া শুরু হয়েছে আগে থেকেই। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমান ক্রমাগত কমার কারনে শীত অনুভবের পাশাপাশি আগাম কুয়াশা পড়াও শুরু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এবার রংপুর বিভাগ জুড়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম। আবহাওয়ার এই অবস্থার উন্নতি না হলে এবার তীব্রতর শীত পড়বে। যার পদধ্বনি ইতোমধ্যেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শীতের তীব্রতা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করছেন এই আবহাওয়াবিদ।
সরেজমিনে পাওয়া তথ্য মতে, এবার কার্তিক মাসের প্রথম দিন থেকেই বাড়ছে শীতের তীব্রতা। মাগরিবের নামাজের আগেই বিস্তৃণ জনপদে দেখা যায় কুয়াশার চাদর। ফলে এই অঞ্চলের নগর বন্দর, পাড়া মহল্লার আড্ডাস্থলগুলো এখন ক্রমেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। মানুষ শীতের গরম কাপড় পরে চলাফেরা শুরু করে দিয়েছেন। বাসাবাড়িতে লেপ, কাঁথা বের করা হয়েছে। ভোরবেলাতেও কুয়াশার কারণে অনেক পরিবহন হেড লাইট জ্বালিয়ে যাত্রা অব্যাহত রাখছে।
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ জানান, এবার আগাম শীত নেমেছে। কিন্তু সরকারি তরফে শীত প্রচণ্ডভাবে আঘাত হানার পর উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাও প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। ফলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয় অতি দরিদ্র পরিবারগুলোতে। প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটে। এজন্য তিনি সরকারকে এখনই শীত মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতির পরামর্শ দিয়েছেন।
রংপুরের জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা এটিএম আখতারুজ্জামান জানান, চলতি শীত মৌসুমে এখন পর্যন্ত সরকার কোন বরাদ্দ দেয়নি। আমরাও কোন চাহিদাপত্র তৈরি করে পাঠিয়েছি।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সুলতানুল আলম জানান, শীত আগাম আসায় রংপুর বিভাগে নিউমোনিয়া, জ্বর সর্দি কাশিসহ শীত জনিত রোগের মাত্রা বাড়ছে। এমন রোগীর সংখ্যা হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে। এর মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধরাই বেশি বলে তিনি জানান।