চট্টগ্রামের আনোয়ারায় তিন ফসলি জমি ও পরিবেশকে বিপন্ন করে গড়ে ওঠেছে একাধিক অবৈধ ইটভাটা। পরিবেশ ছাড়পত্র ও ইটভাটার অনুমোদন ছাড়াই স্থাপন করা হয়েছে এসব ইটভাটা। এ কারণে প্রায় ৫ শতাধিক কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে আনোয়ারায় শাহ্ মোহছেন আউলিয়া ব্রিকস (এমবিএম) নামে একটি ইটভাটা উচ্ছেদ করার জন্য জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুরাইয়া ইয়াছমিনের নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের যৌথ দল অভিযানে আসে। পুলিশ, র্যাব, ফায়ার সার্ভিস, স্কেভেটরসহ সাজোয়া বহর নিয়ে এসেও উচ্ছেদ না করে শুধু জরিমানা করেই তারা ফিরে যান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইটভাটা উচ্ছেদের সব রকমের প্রস্তুতি নিয়ে গেলেও হঠাৎ করেই সব আয়োজন থেমে যায়। এলাকার স্থানীয়রা আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু গুঁড়িয়ে না দিয়ে ইটভাটাটিকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করেই অভিযান শেষ করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুরাইয়া ইয়াছমিন। এসময় পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. আফজারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সড়ক সংলগ্ন তিন ফসলি জমিতে ইট তৈরির কাজ চলছে। উর্বর জমির পাশে এই ইটভাটার কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এলাকার পাঁচ শতাধিক কৃষক। স্থানীয়রা এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে বার বার অভিযোগও দিয়েছেন। কিন্তু জরিমানা দিয়ে পার পেয়ে যায় ইটভাটার মালিক।
স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, প্রশাসন তো দেখছে ইটভাটাটি অবৈধ ও ইট তৈরির প্রক্রিয়াও অবৈধ। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং সুবিধা নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে।
এ বিষয়ে ইটভাটাটি নিয়ম মেনে স্থাপন করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মালিক সামশুল আলম বলেন, এসব বিষয়ে আপনি ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে কথা বলুন। এ কথা বলেই ফোন কেটে দেন তিনি।
অভিযান প্রসঙ্গে জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুরাইয়া ইয়াছমিন বলেন, পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় শাহ মোহছেন আউলিয়া ব্রিকসকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এর আগেও কয়েকবার একই অপরাধে ইটভাটাটিকে জরিমানা করা হয়েছে, তাছাড়া ইটভাটার পাশের জমি তিন ফসলি। এরপরও উচ্ছেদ না করা প্রসঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট সুরাইয়া ইয়াছমিন বলেন, এবার শেষ সুযোগ। তিনমাসের মধ্যে কাগজপত্র ঠিক না করলে পুনঃরায় অভিযান চালানো হবে।
চট্টগ্রাম আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ্উদ্দীন লিপু বলেন, ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া ইট প্রস্তুত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে কৃষিজমি ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষেধ। অথচ কৃষি জমিতেই করা হয়েছে ইটভাটা।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ চট্টগ্রামের সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে সাত দিনের সময় দেন।
আদালতের আদেশে একইসঙ্গে বৈধ ইটাভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার ও কৃষিজমি বা পাহাড়ের মাটি কেটে ব্যবহারকারীদের তালিকাও দাখিল করতে বলা হয়েছে। এরপর থেকে চট্টগ্রামের অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করে পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসন।