চট্টগ্রামের এক ঐতিহাসিক নিদর্শন ‘সাহেববিবি মসজিদ’। যেটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ৮শ’ বছরের ইতিহাস। রাউজান পৌরশহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হাঁড়িমিয়া চৌধুরীর বাড়িতে এটির অবস্থান।
জানা যায়, আরাকান রাজসভার অন্যতম কবি মহাকবি আলাওলের একমাত্র মেয়ে ছিলেন সাহেববিবি। তার নাম অনুসারে এ মসজিদের নামকরণ করা হয়। সাহেববিবির বিয়ে হয়েছিল রাউজানের প্রসিদ্ধ জমিদার হাঁড়িমিয়া চৌধুরী বংশের আমির মোহাম্মদ চৌধুরীর সঙ্গে। তাদের দুই মেয়ে হলেন- আলাকা বানু ও মালকা বানু।
আলাকা বানু বাংলাদেশের এক ঐতিহাসিক ও কালজয়ী চরিত্র। মালকা বানু চট্টগ্রামের বাঁশখালীর জমিদার মনু মিয়ার প্রেমে পড়েন ও বাঁশখালীতে বসবাস করেন। মালকা বানু ও মনু মিয়াকে নিয়ে হয়েছিল চলচ্চিত্র। সেই ঐতিহাসিক মালকা বানুর মা সাহেববিবির নামে করা ‘সাহেববিবি মসজিদ’ কালের সাক্ষী হয়ে আছে রাউজানের বুকে। এটি শুধু রাউজান নয়, পুরো চট্টগ্রামের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন।
৩০ শতক জমির ওপর নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটি বিভিন্ন কারুকাজ সম্বলিত টেরাকোটার ইট ও চুন-সুরকির গাঁথুনিতে তৈরি। মসজিদের পাশে ও সামনে রয়েছে প্রায় চার ফুট উঁচু গেট। পুরো স্থাপনা আটটি পিলার, তিনটি দরজা, দুটি জানালা ও একটি গম্বুজ বিশিষ্ট। কারুকাজে দারুণভাবে ফুটে উঠেছে শৈল্পিক রূপ। আগে দেয়াল ছিল চমৎকার কারুকাজ খচিত। পরে রূপগত পরিবর্তন করে লাগানো হয়েছে টাইলস।
মসজিদের পাশে রয়েছে একটি বিশাল দীঘি, যেটি সবার কাছে শাহী পুকুর নামে পরিচিত। এছাড়াও রয়েছে ঈদগাহ মাঠ। দুই ঈদে জামাত হয় সেখানে।
স্থানীয়দের মতে, প্রসিদ্ধ জমিদার আমির মোহাম্মদ চৌধুরীর স্ত্রী ও আলোচিত মালকা বানুর মা সাহেববিবি এ মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা। মসজিদের পাশে রয়েছে ফুলবাগান সম্বলিত কবরস্থান। সেখানেই শায়িত আছেন সাহেববিবি।
স্থানীয় মো. জামাল উদ্দিন বলেন, সাহেববিবি মসজিদ আমাদের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। এটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ৮শ’ বছরের ইতিহাস। চট্টগ্রামে বিশেষ করে মুরুব্বিদের মধ্যে খুব কম মানুষই আছেন যারা আলাকা বানু ও মালকা বানুর নাম শোনেননি। তাদের মা সাহেববিবির নামেই এ মসজিদটি গড়া।
জামাল উদ্দিন আরো বলেন, যতটুকু শুনেছি বাদশাহ মুহাম্মদ শাহর আমলে ২২টি গ্রামে একই ধরনের মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। এরমধ্যে সাহেববিবি মসজিদ প্রথম নির্মাণ করা হয়। এ মসজিদের ভেতর প্রায় শতাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। এছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে মসজিদটি দেখতে আসেন।