লক্ষন বর্মন, নরসিংদী প্রতিদিন: নরসিংদীতে আরেকটি জজ মিয়া নাটক সাজাতে উঠে পড়ে লেগেছে আইন শৃংঙ্খলা বাহিনির সদস্যরা। হত্যার রহস্য উন্মচন করতে না পেরে মাকে হত্যার দায় চাপাচ্ছে একমাত্র শিশু সন্ত্রানের উপর। পুলিশের টর্চার সেলে নজির বিহিন নির্যাতন করে দায় স্বীকারে বাধ্য করছে শিশুটিকে। গনমাধ্যমের কাছে এমন দাবী করেছেন নিহত দিপ্তি ভৌমিকের স্বামী প্রদিপ ভৌমিক। তিনি বলছেন,পরিকল্পিত ভাবে আমার স্ত্রীকে হত্যার পর আমার ছেলেকে ফাঁসিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। নয়তো পুলিশ আমার শিশু সন্তানকে ইলেকট্রিক শর্ট ও প্রানে মেরে ফেলার ভয় দেখাচ্ছে কেন ? সবকিছু মিলিয়ে আমি নিরাপত্তা হিনতায় ভূগছি।
গত মাসের ৮ তারিখ দুপুর ২টার দিকে পৌর শহরের মধ্যকান্দাপাড়া মহল্লার গোপীনাথ জিউর আখড়াধাম সংলগ্ন এলাকায় নিজ বাসায় খুন হয় দিপ্তি ভৌমিক (৪৭)। দিপ্তি ভৌমিক শহরের হরিপদ সাহার বহুতল ভবনের পঞ্চম তলায় স্ব-পরিবারে ভাড়ার থাকতেন। তার স্বামী প্রদীপ ভৌমিক শেখেরচর বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করেন। ঘটনার দিন সকালেই স্বামী প্রদীপ ভৌমিক তার ব্যবসার কাজে বাড়ী থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর পরই তার ছেলে পরিক্ষা দিতে স্কুলে চলে যায়। দুপুর ১টার পর বাসায় ফিরে মায়ের জবাই করা লাশ দেখতে পায়।
ঘটনরা ২৬ দিনের মাথায় চাঞ্চল্যকর দিপ্তি হত্যামামলার দায় স্বীকার করে নিহতের সন্তান প্রিতম নরসিংদী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করেছেন । জবানবন্দিতে নিহত দিপ্তি ভৌমিকের ছেলে প্রিতম উল্লেখ করেছেন, সে সাঠির পাড়া কালি কুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেনীর ছাত্র। ঘটনার দিন তার ইংরেজী পরিক্ষা ছিল। পরিক্ষা দিয়ে বাসায় ফেরার পর নিহত মা দিপ্তি ভৌমিক (৪৭) পরিক্ষার কেমন হয়েছে জানতে চায়। পরিক্ষা ভালো না হওয়ায় মা তার ছেলে প্রিতমকে গালমন্দ করেন। এক পর্যায়ে প্রিতমকে মারধোর করতে থাকেন। ওই সময় নিহত দিপ্তি ভৌমিক ছেলেকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এতে প্রিতম উত্তেজিত হয়ে রাগ হয়ে যায়। পরে রান্না ঘর থেকে বটি এনে মা’কে জবাই করে হত্যা করে। কিছু ক্ষন পর তার বোন জামাই ও মামালার বাদী নয়ন সাহাকে মায়ের মুত্যুর সংবাদ জানাই। তাকে বলা হয়, কে-বা কারা-যেন মাকে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে গেছেন।
নিহতের দিপ্তি ভৌমিকের স্বামী প্রদিপ সাহা বলেন, পুলিশের ব্যর্থতাকে ডাকতে পরিকল্পিত ভাবে আমার স্ত্রীর হত্যাকান্ডের সাথে আমার একমাত্র ছেলেকে ফাঁসিয়ে দেয়া হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন প্রিতমকে পিটিয়ে ও ইলেকট্রিক সর্ট দেয়া সহ নানা ধারনের নির্যাতন করা হয়। তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আদালতে জবানবন্দী দিতে বাধ্য করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৮ টায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোস্তাক আহমেদ মোবাইল ফোনে প্রীতম কথা বলার জন্য থানায় ডেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তাকে আর বাড়ী ফিরতে দেয়নি। তাকে কোর্টেও চালান দেয়নি। ৫ দিন আটকে রেখে তার উপর অমানুসিক নির্যাতন চালানো হয়। দুই হাতের কব্জী, বাম হাতের আঙ্গুলে ইলিকট্রিক শক দিয়ে নিপীড়নমুলক কায়দায় তার উপর বর্বরোচিত নির্যাতন চালায়।
মামলার বাদী ও নিহতের মেয়র জামাই নয়ন সাহা বলেন, হত্যার একমাসেও কোন রহস্য বের করতে পারেনি পুলিশ। কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পুলিশের উপর চাপ কমাতেই হত্যার দায় ছেলের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। নয়তো ৫ দিন আটকিয়ে রেখে কেন তাকে নির্যাতন করা হলো ? আমাদেরকে বিশ্বাস করাতো হলো ফরেনসিক রিপোর্ট দেখাতে হবে। একই সাথে তার উপযুক্ত প্রমান দিতে হবে। শুধু তাই নয় এসআই মোস্তাক আহমেদ আমাকে থানায় ডেকে নিয়ে ক্রস ফায়ারের ভয় দেখানো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাবসায়ী বলেন, এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। রাস্তার উপর দাড়িয়ে প্রকাশ্যে মাদকদ্যব্য বিক্রি করছে। এতে এলাকার যুব সমাজ মাদকাশক্ত হচ্ছে। আর মাদকের টাকা জোগাড়ে প্রায়ই ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। রাজনিতি নেতাদের ছত্র-ছায়া থাকে বলে পুলিশ তাদেরকে কিছু করতে পারেনা। আবার পুলিশ ধরে নিয়ে গেলেও নেতারা তাদের নিজ স্বার্থ হাসিল করতে আদালত থেকে জামিনে বের করেন।
নির্যাতনে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মামলার তদন্ত কারী কর্মকর্তা মোস্তাক আহাম্মেদ ও জেলা গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুর রহমান। জানান, ছেলে প্রীতম কে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে এনে প্রথমে তার মার রক্তাক্ত লাশের ছবি দেখানো হয়। এই ছবি দেখে সে অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। পড়ে কৌশল প্রয়োগ করে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় কেন মাকে হত্যা করেছে। এতে সে অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। প্রথমে সে অস্বীকার করলেও একটা সময় সে সব স্বীকার করে হত্যার বর্ণনা দেয়। তারপর তাকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে আদালতে পাঠানো হয়। আদালতে সে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ছেলে প্রীতম বিভিন্ন ধরনের নেশা করতো। যার ফলে সে উগ্র মন-মানসিকতার হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।
পুলিশ সুপার আমেনা বেগম বলেন, হত্যাকান্ডের যথেষ্ট প্রমান রয়েছে। হত্যাকান্ডের সময় পাশের রুমে তার দুই বন্ধু উপস্থিত ছিল। জিজ্ঞাসাবাসে সে আদালতে তা স্বীকারও করেছে। পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের আরো বলেন, ছেলে মাকে হত্যা করতে পারে বিষয়টি অভাবনীয়। চুরি, ডাকাতি,শত্রুতা বিভিন্ন বিষয়কে মাথায় রেখে তদন্তে নামে পুলিশ। তবে কোন ধরনের মোটিভেই এই হত্যার রহস্য ধরতে পারছিলনা। সে কারনে আমরা পরিবারের সদস্যদের গতিবিধির উপর নজর রাখছিলাম। বিভিন্নভাবে তদন্তের এক পর্যায়ে তার ছেলে কে সন্দেহ করি আমরা। তারপর কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে ঘটনার সাথে জড়িত বলে স্বীকার করে। নরসিংদীতে ঘটে যাওয়া আভাবনীয় এই হত্যাকান্ড যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে আমাদের সমাজের পারিবারিক অশান্তির ভয়াবহ রুপ দেখিয়েছে। পারিবারিক সুদৃড় বন্ধন ও মাদকের প্রভাবের ফলেই এমন ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।