নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার সকালে উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন মিলনায়তনে ওই ইউনিয়ন মানব পাচার প্রতিরোধ কমিটির সঙ্গে এ মতবিনিময় সভ অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন দুপ্তারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহিদা মোশারফ, অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ) এর আড়াইহাজার অঞ্চলের ফিল্ড অফিসার মো. আমিনুল হক, ইউপি সচিব জাহাঙ্গীর আলম, ওকাপ ফিল্ড অর্গানাইজার ছোবাহান আলী, কমিউনিটি মবিলাইজার হাবিবা আক্তার, নাজনীন আক্তারসদস্য ওসমান গনি, মোতালিব মিয়া, মনিরুজ্জামান মনু, এমরান মোল্লা, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রিপন কুমার কর, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাফুজুর রহমান, খালেদ বিন আমিনসহ কমিটির সদস্যবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, সভ্যতা বিবর্জিত জঘন্য অপকর্ম ‘মানব পাচার’ একটি সামাজিক ব্যাধি। কোনো ব্যক্তিকে তার দেশের অভ্যন্তরে বা বাইরে বিক্রি বা পাচারের উদ্দেশ্যে লুকিয়ে রাখা, আশ্রয় দেয়া, অন্যকোনভাবে সহায়তা করা হলে মানবপাচার হিসাবে গণ্য হয়। দেশের অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়ায় এই মানবপাচারের ঘটনা বেড়ে চলছে। জীবন-জীবিকার তাগিদে এসব মানুষ মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে মরণযাত্রায় পা দিচ্ছে দালালদের খপ্পরে পড়ে। মানবপাচারকারীদের নেটওয়ার্ক/টার্গেট হচ্ছে দারিদ্র্যপীড়িত, সুবিধাবঞ্চিত, পশ্চাৎপদ, অনগ্রসর এলাকার লোকজন। দালালদের মাধ্যমে ওইসব এলাকা থেকে অসহায় ও নিরুপায় মানুষদের সংগ্রহ করে তাদের পাচার করা হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। সমুদ্রগামী এসব দরিদ্র ও অসহায় মানুষ তাদের শেষ সম্বল জমিজমা, ভিটেমাটি বিক্রি করে; কেউ চড়া সুদে ঋণ নিয়ে অধিক উপার্জনের আশায় বিদেশে যাওয়ার জন্য দালালদের খপ্পরে পড়ে। এদের মধ্যে মুক্তিপণ দিয়ে কেউ রক্ষা পায়, পক্ষান্তরে মুক্তিপণ না দেয়ায় কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করে। তাই মানব পাচার রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে দারিদ্র্যের কারণে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা এবং বেকারদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। বৃদ্ধি করতে হবে তরুণদের দক্ষতা। একইসাথে যারা বিদেশে যেতে আগ্রহী তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। কোনো নাগরিক যাতে অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার নামে আত্মহননের পথ বেছে না নেয় তার দিকে নজর দিতে হবে। সীমান্ত বা জল-স্থল ও আকাশ পথে নজরদারি বাড়াতে হবে।
অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ) এর আড়াইহাজার অঞ্চলের ফিল্ড অফিসার মো. আমিনুল হক বলেন, কোভিড-১৯-এর কারণে চাকরিচ্যুত হয়েছেন লক্ষাধিক অভিবাসী।করোনা সংকটের কারণে অনেকেরই কর্মস্থল বন্ধ হয়ে গেছে, অনেকে আকামা, ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন করতে পারছেন না। দেশের অর্থনীতির চাকা যেখানে অচল হয়ে পড়ার দিকে ধাবিত হচ্ছিল, তখনও ঠিকই ভূমিকা রেখে চলেছেন রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। তাই সরকারের উচিত প্রবাসীদের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের সঙ্গে কথা বলা। চাকরিচ্যুত না করে সমঝোতার মাধ্যমে সুষ্ঠু ফলাফল বের করা। আকামার মেয়াদ দীর্ঘমেয়াদি করার পাশাপাশি বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে মেয়াদোত্তীর্ণদের মেয়াদ বৃদ্ধি করে প্রবাসীদের দুর্ভোগ লাগবে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবী জানান।