কুমিল্লার দেবিদ্বারেরপরকীয়া ও আপত্তিকর ঘটনা ধামাচাপা দিতেই নিজের ৫ বছরের সন্তানকে হত্যার পরিকল্পনা করে বাবা আমির হোসেন। এমনকি ফাহিমাকে হত্যার পর স্ত্রীকেও হত্যা কিংবা ডিভোর্স দিয়ে প্রতিবেশী লাইলি আক্তারকে নিয়ে সংসার শুরু করার পরিকল্পনা ছিল তার। মেয়েকে খুনের পর বাবা নিজেই নিখোঁজ সন্তানের সন্ধ্যান চেয়ে এলাকায় মাইকিং করেন, বিভিন্ন স্থানে খোঁজা-খুঁজি করেন। থানায় জিডি ও মামলা দায়ের করেন। পরে শিশু ফাহিমার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধারের পর ব্যবহৃত বস্তার সূত্র ধরে বাবা আমির হোসেনসহ মোট ৫ জনকে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১১)।
বুধবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এসব তথ্য জানান র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাবের দাবি, পাশ্ববর্তী লাইলি আক্তার নামে এক নারীর সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল আমির হোসেনের। গত ৫ নভেম্বর লাইলি ও আমির হোসেনকে শিশু ফাহিমা আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে। যা তার মাকে বলে দেওয়ার কথাও জানায় ফাহিমা। সেটিই যেন কাল হয় শিশুটির। লাইলি আক্তার ও আমির হোসেন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এই বিষয়টি যেন কেউ জানতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমির হোসেনকে চাপ দিতে থাকেন লাইলি। তার প্ররোচণায় গত ৬ নভেম্বর ঘাতক আমির হোসেন গ্রেফতার অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে ভিকটিম শিশু ফাহিমা আক্তারকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করেন এবং আমির হোসেন লাইলি আক্তারকে পরিকল্পনা বাস্তাবায়নের বিষয়টি জানান।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানিয়েছেন, ঘটনার দিন ৭ নভেম্বর বিকালে কুমিল্লার দেবিদ্বারে ৫ বছরের শিশু ফাহিমা আক্তার নিখোঁজ হয়। শিশু ফাহিমার পিতা আমির হোসেন দেবিদ্বার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
তিনি আরও বলেন, নিখোঁজের পর ভিকটিমের পিতা আমির হোসেন ৭ ও ৮ নভেম্বর আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে এমনকি গত ৮ নভেম্বর ঝার-ফুঁক দিয়ে মেয়েকে খোঁজার জন্য একজন ফকির-কবিরাজকেও খবর দেন।
র্যাব মুখপাত্র বলেন, পরবর্তীতে গত ১৪ নভেম্বর পুলিশ কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের কাচিসাইর জনৈক নজরুল মাস্টারের বাড়ির সামনে কালভার্টের নিচে সরকারি খালের ডোবা থেকে নিহতের বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার হয়। পরে ফাহিমার পরিচয় নিশ্চিত করে তার পরিবার। ওই ঘটনায় ঘাতক বাবা আমির হোসেন বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
কমান্ডার মঈন বলেন, নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র্যাব-১১ ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন এবং জড়িত বাবাসহ ৫ আসামিকে গ্রেফতারে করে।
ফাহিমাকে হত্যার পর ঘাতক বাবার মাইকিং করে-খোঁজাখুঁজি করে এমন তথ্য দিয়ে র্যাব জনায়, নিজ কন্যা ফাহিমাকে খুঁজে পেতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোম্পানীগঞ্জেও স্ত্রী ও শ্বশুড়-শ্বাশুড়িসহ খুঁজতে যায়। ১৪ নভেম্বর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধারের পর ঘাতক বাবা আমির হোসেন নিজেই বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
র্যবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘শিশু ফাহিমাকে হত্যার পর গরুর খাবারের বস্তা দেখেন র্যাব সদস্যরা। এরপর ইমনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে বেড়িয়ে আসে হত্যার মূল রহস্য। এরপর একে একে গ্রেফর করা হয় বাবা আমির হোসেনসহ বাকি আসামিদের।’
র্যাবের দেওয়া তথ্য মতে, বস্তা দেখে অপরাধীরা শনাক্ত হয়। গরুর খাবারের বস্তার সূত্র ধরে বাবাসহ হত্যাকারীরা শনাক্ত হয়।