শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইকবাল হোসেন সিকদারের ৪ মাসের শিশু আলী ইনজামের আর বাবা ডাকা হলো না। বাবাকে চেনার আগেই বাবা সকলকে ফাকি দিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। নিখোঁজ ইকবাল সিকদারের স্ত্রী পুতুল বেগম ইকবাল সিকদারের ছবি হাতে ও কোলের শিশু আলী ইনজামকে কোলে নিয়ে শুধুই আহাজারি করছেন। বুধবার দুপুরে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং নামক স্থানে পদ্মা নদীতে ঝড়ের কবলে পড়ে স্পীডবোর্ড উল্টে ডুবে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় ইকবাল সিকদার। স্ত্রী পুতুল বেগম বলেন, আমার তিন সন্তান কাকে বাবা ডাকবে।
জানা যায়, ঢাকা থেকে বাড়ি আসার জন্য মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ফেরী ঘাট থেকে বেলা অনুমান ১টায় একজন শিশু সহ ২০ জন যাত্রি নিয়ে মালেক মাঝির স্পীড বোডের চালক আঃ হালিম শরীয়তপুরের মাঝির ঘাটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। পথিমধ্যে স্পীড বোর্ডটি ৩ বার বিকল হয়ে যাওয়ায় পাড়ে আসতে দেরী হয়। এরই মধ্যে বেলা অনুমান আড়াইটায় হঠাৎ আকাশে মেঘ জমে প্রচন্ড বেগে ঝড় আসে। ঝড়ের কবলে পড়ে স্পীড বোর্ডটি উল্টে গিয়ে ২০ জন যাত্রি পানিতে পড়ে গেলে ১০ জন যাত্রি সাতরে তীরে উঠতে পারলে ও বাকিরা যাত্রির নিখোঁজ হয়ে যায় বলে শোনা যায়। এর মধ্যে জাজিরা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইকবাল হোসেন সিকদার রয়েছে। কিছুক্ষণ পরে শিমুলিয়া ফেরীঘাট ও মাঝিরঘাট থেকে খবর পেয়ে অন্যান্য স্পীড বোর্ড নিয়ে উদ্ধারের জন্য লোকজন এগিয়ে যায়। ততক্ষনে পানির ঢেউতে ৫ জনের লাশ তীরের কাছাকাছি গেলে লোকজন পানিতে নেমে খোজাখুজির সময় ৫জনের লাশ দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে। এ সময় স্পীড বোর্ডের মালিক মালেক মাঝিসহ লোকজন চিকিৎসার নাম করে ঐ ৫জনের মধ্যে ৪ জনের লাশ ঢাকার কথা বলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে। ইকবাল সিকদারের নিখোঁজ সংবাদ পাওয়ার পর স্ত্রী পুতুল বেগম, মা রহিমা সহ বোনেরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। তাদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। কান্নার শব্দ শুনে আশে পাশের শতশত লোকজন ইকবাল সিকদারের বাড়িতে এসে ভিড় জমায়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অর্ধশতাধিক নৌকা ট্রলার নিয়ে ইকবালের লাশ খোজাখুজির জন্য স্বজনেরা পদ্মা নদীতে চষে বেড়াচ্ছে। কোথাও যেন মিলছেনা লাশ। পরিবারের অভিযোগ যে ৪ টি লাশ ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে গুম করা হয়েছে, হয়তোবা তাদের মধ্যে ইকবাল সিকদারের লাশ থাকতে পারে। নিখোঁজ ইকবাল সিকদার তিন সন্তানের জনক। বড় মেয়ে ঐশাত মেঝ মেয়ে বেনজির ও ৪ মাসের শিশু পূত্র আলী ইনজাম। এ ছাড়া ইকবাল সিকদার সহ তিন ভাই ও ৯ বোন রয়েছে। ইকবাল সিকদারের স্ত্রী পুতুল বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলছেন আমার তিন সন্তান কাকে বাবা ডাকবে। ছোট্র শিশু আলী ইনজাম বাবাকে চেনার আগেই তার বাবা নিখোঁজ হয়ে গেলেন। আমি আমার স্বামীর লাশটা চাই। ইকবাল সিকদারের মা রহিমা বেগম সন্তানের শোকে এখন নির্বাক। সে কোন কথাই বলছেনা। শুধু শুধু নির্বাক চোখে চেয়ে থাকে। তাদের বাড়িতে যেন স্বজনের কান্নায় আকাশ বাতাশ ভারি হয়ে উঠছে।
এব্যাপারে দূর্ঘটনায় কবলিত স্পীড বোর্ডে থেকে উদ্ধার হওয়া জাজিরা গোপালপুরের নুর ইসলাম রাড়ি বলেন, বুধবার বেলা অনুমান ১ টায় শিমুলিয়া ঘাট থেকে একটি স্পীড বোর্ডে চড়ে ২০ জন যাত্রি শরীয়তপুরের মাঝির ঘাটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। পথিমধ্যে ঝড়ের কবলে পড়ে স্পীড বোর্ডটি উল্টে গিয়ে বেশীর ভাগ লোক নিখোঁজ হয়ে যায়। আমি স্পীড বোর্ডের কানিস ধরে সাতরে তীরে উঠি।
এদিকে ইকবাল হোসেন সিকদার সর্ম্পকে জাজিরা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি হাজী মোজাম্মেল হক মিন্টু ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ বলেন, ইকবাল সিকদার দলের জন্য একজন নিবেদিক প্রাণ ছিল, আমরা তাকে হারিয়ে একজন ভাল সহকর্মীর অভাবে ভুগবো, যা পূরণ হবার হয়। এছড়াও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম লিটন ও জাজিরা উপজেলা আহবায়ক আলমগীর হোসেন বলেন, ইকবাল সিকদারের হারানো কোন ভাবেই মানতে পারছি না।