নরসিংদী প্রতিদিন: আমারা রুশ বিপ্লব না বলে অক্টোবর বিপ্লব বলছি এজন্য যে, এই বিপ্লবের মাধ্যমে পৃথিবীব্যাপী একটি পরিবর্তণ এসেছে। ফলে এই বিপ্লবটি ছিলো একটি আন্তর্জাতিক বিপ্লব। পুঁজিবাদের বিরোদ্ধে এই বিপ্লবের জয় হয়েছিল। এরপর থেকে এই বিপ্লবকে আক্টোবর বিপ্লব বলা হয়ে থাকে। এখন পৃথিবী উন্নতি হচ্ছে পাশাপাশি বাংলাদেশেও কিন্তু আজ যত বেশী উন্নত হচ্ছে ততবেশী বৈষম্য সৃস্টি হচ্ছে। এই উন্নতি সাধারন গরীব মানুষের নয়। এই উন্নতি হচ্ছে পুঁজিবাদের উন্নতি। আর এই উন্নতি গরীব মানুষের মাঝে আরো বিভাজন ও বৈষম্য সৃষ্টি করছে। আমরা এই আন্দোলনের মাধ্যমে সারাদেশে সাংস্কৃতিক প্রস্তুুতিটা এগিয়ে নিচ্ছি। কারন জ্ঞানের চর্চা ছাড়া সমাজ পরিবর্তন সম্ভব নয়।
অক্টোবর বিপ্লবের শত বছর উপলক্ষ্যে শুক্রবার বিকেলে নরসিংদী পৌর মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা ও গণ সংগীত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী একথা বলেন।
অক্টোবর বিপ্লবের শত বছর উৎযাপন কমিটি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। উৎযাপন কমিটির আহবায়ক নরসিংদী জেলা সিপিবির সাধারন সম্পাদক কমরেড মীর লোকমান হোসেনের সভাপতিত্বে আরো আলোাচনা করেন, নরসিংদী সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও জেলা উদিচীর সভাপতি প্রফেসর গোলাম মোস্তাফা মিয়া, বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির বিকল্প সদস্য কমরেড জাকির হোসেন, গণ সংস্কৃতি ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান লাল্টু।
উৎযাপন কমিটির সদস্য সচিব নাজমুল আলম সোহাগের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লেখক গবেষক সরকার আবুল কালাম, নরসিংদী জেলা প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি শহিদুল হক সুমন, কবি মহসিন খন্দাকর, আওয়ামীলীগ নেতা আমজাদ হোসেন বাচ্চু, যুবলীগ নেতা রঞ্জন কুমার সাহা প্রমূখ।
আলোচনায় বক্তারা আরো বলেন, ৯৯ বছর আগে ১৯১৭ সালে রুশ দেশে সংঘটিত এই বিপ্লব দিবসের শততম বছর পূর্ণ হয়েছে এবার। শতবর্ষ আগের ১৯১৭ সালের রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের কথাটি জনগণের কাছে বহুলাংশে অজানা থেকে যাচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ৭ই নভেম্বরকে রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব বার্ষিকী হিসেবে পালন করা কখনই বন্ধ হয়নি। কারণ মানব ইতিহাসের এই যুগান্তকারী দিবসটির তাৎপর্য ও প্রাসঙ্গিকতা নিঃশেষ হওয়ার নয়। যুগ যুগ ধরে মানুষ শোষণহীন, সাম্যবাদী সমাজের স্বপ্ন দেখেছে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে ঊনবিংশ শতাব্দীতে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের রূপরেখা তুলে ধরেছিলেন কার্ল মার্কস-ফ্র্রেডারিখ এঙ্গেলস। তাঁদের মতাদর্শকে ধারণ করে কমরেড ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিনের পরিচালনায় ও বলশেভিক পার্টির (কমিউনিস্ট পার্টির) নেতৃত্বে ১৯১৭ সালে, পুরনো জুলিয়ান বর্ষপঞ্জি অনুসারে ২৫ অক্টোবর, আর নতুন গ্রেগোরিয়ান বর্ষপঞ্জি অনুসারে ৭ নভেম্বর, রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। এ কারণে ৭ নভেম্বর সংঘটিত এ বিপ্ল¬বকে অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এই বিপ্লব প্রকৃতই মানব জাতির ইতিহাসে সূচনা করেছিল এক নতুন যুগের।
অক্টোবর বিপ্লবই প্রথম সফল বিপ্লব, যার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছিল শোষণহীন এক নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা। সূচিত হয়েছিল শোষণমুক্ত সমাজের দিকে যাত্রা। এই বিপ্লব পুঁজিবাদের ভিত্তিমূলে বড় রকমের এক ভাঙন ও চিড় ধরিয়েছিল। দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিয়েছিল বিশ্বের বিপুল সংখ্যক মানুষকে। মানুষ পেয়েছিল মুক্তির স্বাদ। কায়েম হয়েছিল শোষিত শ্রমিক শ্রেণির রাজত্ব। পূর্ববর্তী সকল বিপ্লব থেকে অক্টোবর বিপ্ল¬বের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হলো, আগের সব বিপ্লব কেবল শাসকশ্রেণির পরিবর্তন ঘটাতে পেরেছে। কিন্তু সংখ্যালঘিষ্ঠের দ্বারা সংখ্যাগরিষ্ঠের উপর শোষণের অবসান ঘটাতে পারেনি। অন্যদিকে অক্টোবর বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শুধু শোষক-শাসক শ্রেণির ও সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তনই ঘটেনি, সূচনা হয়েছিল মানুষের ওপর মানুষের শোষণের চির অবসানের যুগ। সূচিত হয়েছিল শ্রেণিহীন সমাজ নির্মাণের পথে যাত্রা।
আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব নাজমুল আলম সোহাগ বলেন, একটা মহৎ বিপ্লবের বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়টাই আমাদের উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে একটি শোষণহীন, শ্রেণিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
আলোচনা শেষে বিবর্তন গণসংগীত দলও শিল্পী আবুল হোসেন অলির পরিবেশনায় গণসংগীত পরিবেশিত হয়