নিউজ ডেস্ক,নরসিংদী প্রতিদিন, সোমবার, ১৯ মার্চ ২০১৮:
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পের ৪০ দিনের কাজে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান প্রকল্পের বরাদ্দের টাকা প্রকল্প ব্যবস্থাপক, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা নয়-ছয় করেছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এছাড়াও তালিকাভুক্ত যেসকল শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর কথা ছিল তার অধিকাংশই কাজ করেনি। কিন্তু কাজের ভাউচার তৈরি করা হয়েছে তালিকাভুক্ত সকলের নামে।
জানা যায়, সদর উপজেলার ঘারিন্দা, গালা ও মগড়া তিনটি ইউনিয়নে রাস্তা মেরামত এবং বাড়ির ভিটি উঁচুকরণ কাজে ১০ লাখ ২৪ হাজার টাকা বরাদ্দ করে সরকার। এই প্রকল্পের কাজ করানোর জন্য প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে শ্রমিকদের নামের তালিকা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা। অভিযোগ উঠেছে, এই তালিকায় রয়েছে নানা দুর্নীতি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ঘারিন্দা ইউনিয়নে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পের ৪০ দিনের কাজে সরকারি তালিকায় যে রাস্তা মেরামত করার কথা উল্লেখ রয়েছে বাস্তবে তার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সেই সাথে দরিদ্র পরিবারদের ঘরের ভিটি উঁচু করার প্রকল্প কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
ঠিক একইভাবে গালা ইউনিয়ন পরিষদের লোক দেখানো কাজ করা হয়েছে। গালা ইউনিয়নের আগবেথইর গ্রামের আর্জিনা বেগমের ভিটি উঁচুকরণ করার কথা থাকলেও কোন কাজ হয়নি। উল্টো আর্জিনা বেগম দুই দিনে চার হাজার টাকা দিয়ে ৭জন শ্রমিক নিয়ে নিজের বাড়ির সামনে থেকে মাটি কেটে ভিটি উঁচু করেছেন। এদিকে মগড়া ইউনিয়নে দিঘীবিল পাকা রাস্তা থেকে হানিফের বাড়ি হয়ে বাবর আলীর বাড়ি পর্যন্ত যে রাস্তার কাজ করার কথা ছিলো তার কিছুই হয়নি।
ঘারিন্দা ইউনিয়নের মাদব সাহার ছেলে লিটন সাহা বলেন, কিছু দিন আগে শুনলাম আমাদের বাসার সামনে যে রাস্তা তা ঠিক করা হবে। যাতে এ এলাকার মানুষ চলাচলে সুবিধা পায়। তারপর তো আর কেউ আসেনি। আর এ রাস্তা আমাদের জায়গার উপর দিয়ে নিজেরাই করে নিয়েছি। মেইন রাস্তা থেকে অটো রিক্সা বাড়ি পর্যন্ত আনার জন্যই মূলত এ রাস্তা করা। একই এলাকার বাবুল মিয়া বলেন, কাজ করলে তো অবশ্যই তা দেখা যেতো।
ঘারিন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন খোকন বলেন, ৪০ দিনের যে কর্মসূচি ছিলো তা সঠিকভাবেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কোথাও কোন রকম দুর্নীতি হয়নি।
ঘারিন্দা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নিলু বলেন, মাধব সাহার বাড়ির সামনে যে রাস্তার কাজ করার কথা ছিল তা করা হয়নি। কারণ ওই বাড়ি থেকে কোন মাটি দেয়নি বলে আমরা কাজ করতে পারিনি। তবে তার পাশেই একটি রাস্তার কাজ করেছি। আর ভিটি উঁচুকরণ ঠিকভাবেই করা হয়েছে।
গালা ইউনিয়নের আগবেথর গ্রামের কয়েকজন বলেন, আর্জিনা খুবই দরিদ্র। তার বাড়ির ভিটি উঁচুকরণ করার কথা থাকলেও সরকারিভাবে কোন কাজ করা হয়নি। তবে আর্জিনা বাড়ির সামনে তার জায়গা থেকে শ্রমিক নিয়ে বাড়ির সামনে একটু জায়গা উঁচু করেছে। ইউপি মেম্বাররা তো কোন কাজ করে নাই।
গালা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য লাল মিয়া বলেন, আমাদের যে কাজ ছিলো তা সম্পূর্ণ কাজ করেছি। তবে ৪০ দিনের কাজের আগেই এ কর্মসূচি সরকার শেষ করে দিয়েছে। তারপরও আমরা কাজ শেষ করেছি। কোথাও কোন দুর্নীতি হয়নি।
গালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজকুমার বলেন, আমি তো জানি সব কাজ সঠিকভাবেই শেষ হয়েছে। তবে ইউপি সদস্যরা এখন কি করেছে তা তো জানি না। আর এ কর্মসূচির সভাপতি আমি না। ইউপি মেম্বাররা এর দায়িত্বে কাজ করেছে। এখানে আমার কোন হাত নেই।
গালা ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য রোকসানা বেগমের সাথে এ বিষয়ে বার বার যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোন কাজ হয়নি।
মগড়া ইউনিয়নের পল্লী চিকিৎসক আবুল কালাম আকন্দ ও লিয়াকতসহ আরো অনেকে অভিযোগ করেন, আমাদের মেম্বার নির্বাচনে জেতার পর এ এলাকায় আর আসেনি। উন্নয়নের কাজ করবে কোথায়। তাকে তো হারিকেন দিয়েও খুঁজে পাই না।