নিজস্ব প্রতিবেদক,নরসিংদী প্রতিদিন,মঙ্গলবার,২৯ মে ২০১৮: নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধে জেরে আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলবে ও ব্যালট যুদ্ধে ধরাশায়ী হবার সম্ভাবনার কথা বলেছেন আড়াইহাজার উপজেলার প্রবীন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা।
এছাড়াও আড়াইহাজার উপজেলা আওয়ামীলীগের মাঠকর্মীদের অভিযোগ রয়েছে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সহজেই এক মঞ্চে কিংবা এক কাতারে আনা যাচ্ছেনা বা দেখা যায় না। যার দরুন দীর্ঘদিন ধরেই সাংগঠনিক কর্মকান্ডে স্থবরিতা ও অচলবস্থা সৃষ্টি হয়ে আছে।
পরিণতিতে আওয়ামীলীগসহ অঙ্গসংগঠনসমূহের অগোছালো লেজেগোবরে পরিস্থিতি গড়ে উঠেছে। সংগঠনের এরকম অগোছালো, দৈন্যদশা ও বেগতিক চেহারা আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য অশনিসংকেত বলে অবহিত করেছেন নির্ভরযোগ্য সূত্রসমূহ।
নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, যে পরস্পরবিরোধী অভিযোগ ও আত্মকলহে মেতে আছেন উপজেলার আ’মীলীগের বেশীরভাগ নেতৃত্ব। পুরনো দিনের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য বিরোধের কথা বাদ দিয়ে বর্তমান কার্যকারণ দিকগুলো চিহ্নিত করে দেখা যাচ্ছে যে,কেউ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান’ হালচাল।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেকেই নমিনেশন প্রত্যাশী রয়েছেন। তারা সবাই হেভিওয়েট প্রার্থী, এদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবু, জেলা আ’মীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইকবাল পারভেজ,সাবেক এমপি এমদাদুল হক ভুইয়া, সাবেক রাষ্ট্রদূত মমতাজ হোসেন, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশনের মহাসচিব ডঃ মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোল্লা, তাদেরকে ঘিরেই একাদশ সংসদ নির্বাচনে নানামূখী বাক বিতন্ডা বিরোধ ও নানা কোন্দল বাড়ছে। নিজস্ব স্বার্থ, আধিপত্য,পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে দ্বান্ধিক পরিস্থিতির কুহাওয়া বইছে আড়াইহাজার উপজেলার গোটা দলের অভ্যন্তরে। যার যার অবস্থান থেকে তাদের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগানোর চেষ্টার পাশা পাশি মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন।
আগামী সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হতে চান এধরণের নেতাদেরকে ঘিরে বর্তমান সাংসদের মধ্যে তৈরি হয়েছে প্রচন্ড বৈরী অবস্থা, এধরণের অশান্ত ঘূর্ণায়মান পরিবেশে যোগ হয়েছে দলের মধ্যে কেউ কাউকে না মানার সংস্কৃতি।
যেখানে বিএনপিসহ অপরাপর সংগঠনগুলো সর্বত্রই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্র¯ু‘তি নিচ্ছে রীতিমত ঢাকঢোল পিটিয়ে সেখানে আড়াইহাজার আওয়ামীলীগ নিজেদের মধ্যে বিভেদ-কোন্দল থেকে বের হতে পারছেনা।
বিরোধী পক্ষ হিসেবে যেখানে বিএনপিকে গন্য করার কথা না, সেখানে নিজ দলের একাধিক প্রতিপক্ষকে সামাল দিতে রীতিমত হিমসিম খেতে হচ্ছে স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও সাংসদ সদস্যকে।
উপজেলা আ’মীলীগ বিভিন্ন মেরুতে বিভক্ত থাকায় অঙ্গসংগঠনসমূহের নেতাকর্মীরাও রয়েছেন বেকায়দায়।
প্রবীন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা আড়াইহাজারের বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাদের পর্যবেক্ষণ ভিন্ন আঙ্গিকে তুলে ধরেছেন এভাবে যে, পুরনোরা নিজেদের প্রার্থীতাকে সুনিশ্চিত করা বা আধিপত্যকে ধরে রাখতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন।
আড়াইহাজারের তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দলের ভেতরে আন্তঃ কোন্দল নিত্য বাড়ছেই। তাছাড়া মূল সংগঠনের পাশাপাশি অঙ্গসংগঠনসমূহের অবস্থাও খুব নাজুক। জনে জনে বিরোধ, গ্রুপিংয়ে গ্রুপিংয়ে সয়লাব আড়াইহাজার উপজেলার গোটা আওয়ামী পরিবার। বয়োজষ্ঠ্যরা যদি হানাহনির মধ্যে থাকে অন্যান্য সদস্যরা তখন দিশেহারা অবস্থায় কাটায়।
এমন পরিস্থিতির মাঝে পড়ে গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নির্বাচনী কাজে সক্রিয়ভাবে মাঠ গোছানোর জন্য সম্পৃক্ত হতে পারছেন না। এ সকল সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠার জন্য আগামীদিনে আ’মীলীগের জেলার নেতৃত্ব কি ধরণের পদক্ষেপ নেন তার জন্য অপেক্ষায় আড়াইহাজা উপজেলার আ’মীলীগ নেতা-কর্মীরা।
জেলা আ’মীলীগ এর সিনিয়র যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আ’মীলীগের হাই কমান্ড চাচ্ছেন, যাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও সাংগঠনিক দক্ষতা এবং দায়ীত্বজ্ঞান অনেকের চেয়েই বেশী, যারা দলের নেতা কর্মীদের প্রকৃত মূল্যায়ন করেন, যারা সংসদীয় এলাকার কোন মানুষের সঙ্গে অসাদাচরন কিংবা কোথাও কখনো গনবিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত নন কেবল এধরনের আন্তরিক ও চৌকস নেতাকেই নমিনেশন দেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, আগামী নির্বাচনে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দিকটার প্রতি বেশী বিবেচনা করবেন তা হচ্ছে প্রতিটি জেলায় শুদ্ধি অভিযানের মধ্য দিয়ে একেবারেই নিরেট ক্লিন ইমেজ অর্থাৎ ঘষামাজা করে প্রার্থী বাছাই করা। যাদের গায়ে কোন দুর্নীতি, ভূমিদস্যুতা, সন্ত্রাস, হত্যা-খুন, দলবাজি কিংবা অসামাজিক কর্মকান্ডের কালিমা নেই।
জেলা আ’মীলীগ এর সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান বাচ্চু বলেন, বৈশ্বিক রাজনীতিতে শেখ হাসিনার অবস্থান মর্যাদাকর ও সুদৃঢ় করতে তাঁর দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদীহিতার প্রসঙ্গটি বেশ জোড়ালো হচ্ছে। অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার মাধ্যেমে আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনকে বিশ্ববাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলে ধরার জন্য তিনি প্রত্যয়ী।
গণবিচ্ছিন্ন কোন নেতার জায়গা নেই আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
দল ও সাধারণ মানুষের কাছে যারা অধিকমাত্রায় জনপ্রিয় ও গ্রহনযোগ্য তারাই হবেন আগামী দিনের দলের নির্ভরযোগ্য সংসদ প্রার্থী।