নিজস্ব প্রতিবেদক,নরসিংদী প্রতিদিন, রবিবার, ১০ জুন ২০১৮: পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সারা দেশের পাইকারি ক্রেতার ভিড়ে মুখর দেশের অন্যতম পাইকারি কাপড়ের বাজার শেখেরচর বাবুরহাট। রোজার দুই সপ্তাহ আগে থেকেই দেশীয় এই কাপড়ের বাজারটিতে বেচাকেনা শুরু হয়। এখন চলছে শেষ সময়ের কেনাবেচা। বাজারটিতে নিয়মিত (শুক্রবার ও শনিবার) সাপ্তাহিক হাটে ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা বেচাকেনা হলেও এ বছর ঈদ উপলক্ষে ১২০০ থেকে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন শেখেরচর বাবুরহাট বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মোশাররফ হোসেন।

গত শুক্রবার সরেজমিন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে অবস্থিত শেখেরচর বাবুরহাটে গিয়ে দেখা গেছে, বাজারটির ছোট-বড় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার দোকানে শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিস, থান কাপড়, বিছানার চাদর, শার্ট পিস, প্যান্ট পিস, পাঞ্জাবির কাপড় ও গামছাসহ দেশীয় প্রায় সব ধরনের কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারের প্রতিটি গলিতে কাপড় আনা নেওয়ায় ব্যস্ত ক্রেতা-বিক্রেতারা। দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানোর জন্য ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ওপর ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে তোলা হচ্ছে শত শত কাপড়ের গাইট (আঁটি)।

ব্যবসায়ীরা জানান, রোজা শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে থেকেই দেশীয় এই কাপড়ের বাজারটিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারি ক্রেতারা আসতে শুরু করায় পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হয়েছে। ক্রেতা চাহিদার কথা বিবেচনা করে প্রতিবছরই ঈদ উপলক্ষে এখানকার কাপড়ের ডিজাইনে আনা হয় বৈচিত্র্যতা। দেশের কাপড় উৎপাদনকারী প্রায় সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব শোরুম রয়েছে এখানে। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ কারখানাও নরসিংদী কেন্দ্রিক। ফলে এখানকার উৎপাদিত কাপড়ের গুণগত মান ভালো ও দামেও সাশ্রয়ী। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানে তৈরিকৃত যাবতীয় কাপড়ের সমারোহ থাকে এখানে। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় ও ন্যায্য দামে চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের দেশীয় কাপড় পাওয়ার কারণে এই হাটকে ঘিরে পাইকারি ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। রাজশাহী, বগুড়া, সিলেট, চট্টগ্রাম, ফেনী, বরিশাল, পিরোজপুর, চাঁদপুর, পটুয়াখালী, জামালপুর, ভোলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জসহ দেশের নানা প্রান্তের পাইকারি ক্রেতাদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে বাজারটি।

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার খুচরা কাপড় ব্যবসায়ী ফয়সাল বাদশা বলেন, বাবুরহাট থেকে রমজানের শুরুতে যে কাপড় কিনে নিয়েছিলাম, তা শেষ পর্যায়ে। তাই আবার আসছি শেষ সময়ের ঈদের বাজারটি ধরতে।

সিলেটের শ্রীমঙ্গল থেকে আসা পাইকারি ক্রেতা হাজি মো. শাহ আলম মিয়া বলেন, বাবুরহাটে লুঙ্গি থেকে শুরু করে সব ধরণের দেশীয় কাপড় সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। একসঙ্গে সব ধরনের কাপড় ও ন্যায্য দাম সুবিধার জন্যই আমরা নিয়মিত এখানে আসি। এ বছর ঈদ উপলক্ষে দোকানের জন্য অতিরিক্ত কাপড় কিনেছিলাম, বিক্রি ভালো তাই আবার আসতে হয়েছে বাবুরহাটে।

কুমিল্লার পাইকারি ক্রেতা সালাহ উদ্দিন রুবেল বলেন, বাবুরহাটকে দেশের কাপড় ব্যবসার নাভি বলা হয়ে থাকে। সারা দেশ থেকে খুচরা কাপড় ব্যবসায়ীরা এখান থেকে কাপড় কিনে থাকেন।

পাইকারি বিক্রেতা ফারুক শিকদার ও সুমন হোসেন বলেন, প্রতিবছরই ঈদে কাপড়ের রং ও ডিজাইনে বৈচিত্র্যতা আনা হয়। ক্রেতারা চাহিদা অনুযায়ী কাপড় কিনতে আগে থেকেই এখানে আসতে শুরু করে। এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় বেচাকেনা সন্তোষজনক বলেও জানান তাঁরা।

শেখেরচর-বাবুরহাট বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, বাজারটিতে নিয়মিত (শুক্রবার ও শনিবার) সাপ্তাহিক হাটে ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা বেচাকেনা হলেও ঈদ উপলক্ষে তা বেড়েছে দ্বিগুণ। এ বছর ঈদ উপলক্ষে ১২০০ কোটি থেকে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকার কাপড় বেচাকেনা হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সন্তোষজক বিক্রির কারণে ব্যবসায়ীরা খুশি। ঈদ উপলক্ষে দিন ও রাতে এই হাটের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারসহ যানজট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

কালের কণ্ঠ, মনিরুজ্জামান, নরসিংদী ১০ জুন, ২০১৮ ০০:০০