লক্ষন বর্মন★নরসিংদী প্রতিদিন,সোমবার,১৮ জুন ২০১৮: ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে নরসিংদীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে এখন দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। ঈদের আনন্দকে আরো বেশি স্মরণীয় করে রাখতে শিশুদের পাশাপাশি বড়রাও মেতে উঠেছে আনন্দের জোয়াড়ে।
রবিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে গড়ে উঠা নরসিংদীতে মাধবদীর চৈতাব এলাকার অত্যাধুনিক ও দৃষ্টি নন্দন বিনোদন পার্ক ড্রিম হলিডে পার্কে এখন দর্শনার্থীদের উপচে পাড়া ভিড়।
ছোট থেকে বড় সাবই যেন মেতে উঠেছে ঈদ উচ্ছ্বাসে। তেমন কোনো বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় শিল্পসমৃদ্ধ জেলা নরসিংদী বরাবরই ছিল পিছিয়ে।বিনোদন পিপাসীদের যেতে হতো ঢাকাসহ দূর দূরান্তে। তাই আধুনিক ও দৃষ্টি নন্দন এই বিনোদনের ক্ষেত্র তৈরী হওয়ার শিল্পসমৃদ্ধ জেলার সাথে যোগ হলো নতুন মাত্রা।
সরকারীভাবে এখানে কোনো বিনোদন পার্ক গড়ে না উঠলেও আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা নিয়ে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠেছে বিনোদন পার্ক ড্রিম হলিডে। ঈদ উপলক্ষে আধুনিক সব এইডস এর পাশাপাশি মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে স্ব-পরিবারে সময় কাটাতে পার্কে এসেছে হাজারো বিনোদন পিয়াসু।
এদিকে নরসিংদীতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে ছোট ছোট লাল মাটির টিলা (পাহাড়) সোনাইমুড়ি পার্ক, রায়পুরার মেঘনা নদীর পাড়ে প্রান্তশালায় ছোট ছোট বিনোদন পার্ক ও মনোহরদী বগাদীতে পার্ক বৈশাখী বেলা পার্কগুলোতেও দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় চোখে পরার মত।
জানা যায়, ২০১১ সালের শেষের দিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে পার্কটি চালু করা হয়। ছোট-বড় সবার জন্যই আলাদা সব রাইড রয়েছে। ৬০ একর জমির উপর নির্মিত এই পার্কে রয়েছে নাগেট ক্যাসেল, হেলিপ্যাড, এয়ার বাইসাইকেল, অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ইমু পাখী, মায়াবীস্পট, কৃত্রিম অভয়ারন্য, ডুপ্লেক্স কটেজ, পার্কে শিশু কিশোরদের জন্য একাধিক রাইডস, সুবিশাল লেক, সাফারি পার্ক, হংসরাজ প্যাডেল বোট, ভূতের বাড়ি, নাইন-ডি, ক্যাবল কার, বাম্পার কার, ওয়াটার পার্ক ও জেটফাইটার বোটসহ নানান বরকমের রাইড। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ বেষ্টিত নয়নাভিরাম ক্যানেল, রকিং হর্স, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ও সরকার প্রদত্ত নিরাপত্তা কর্মীর তত্ত্বাবধানে সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ পরিবেশ।
কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে আসা মাহফুজ সরকারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, পরিবার নিয়ে এসে মফস্বল শহরের নির্জন পরিবেশ ভিন্ন সাধ ও অত্যাধুনিক রাইডে চড়ে ঈদের আনন্দ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
তবে কিছু কিছু রাইড আছে যা আমাদের মধ্যবিত্তদের সাধ্যের বাহিরে। ভূতের বাড়ি প্রতিজন ১শ টাকা যা আমাদের জন্য পরিবার নিয়ে ঘুরে আসা খুব কষ্ট হয়েছে। যদি এটি ৫০ টাকা হত তাহলে ভাল হত। তারপরও পরিবারকে নিয়ে এক সাথে নিয়ে ঘুরতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে।
কথা হয় ঢাকা থেকে আসা শান্তিরঞ্জন দাস এর সাথে। তিনি বলেন, ঈদের ছুটি পেয়ে পরিবারে ড্রিম হলিডে পার্কে এসে অন্যদের মত আমরাও ঈদ আনন্দ উপভোগ করছি। পরিবারকে নিয়ে এক সাথে ঘুরা অন্য রকম মজা। পার্কটি আমাদের কাছে খুবই ভাল লেগেছে। আগামীতে আবার আসব চিন্তা করছি।
ড্রিম হলিডে পার্কের ভূতের বাড়ির সামনে কথা হয় ছোট মা-মনি আয়েশার সাথে। তার কাছে ভূতের বাড়ি দেখতে কেমন লেগেছে জানতে চাইলে সে বলে, প্রথমে আমি খুব ভয় পেয়েছি। ভয়ের জন্য আমি চোখ বন্ধ করে ছিলাম।
শুধু তাই নয় এর ভেতর জীবিত চারটি ভুত দেখেছি। সে ভূতগুলো খুব ভাল। আমি যখন ভয়ে কান্নাকাটি করছি তখন ওই ভূতেরা আমাকে বলেছে ভয় পেয় না আমরা খারাপ ভূত না। আমরা ভাল ভুত। আমরা কখনও মানুষকে মারি না। তারা আমাকে আদর করে দিয়েছে। তারপর আমি কোনো ভয় পায়নি।
ড্রিম হলিডে পার্ক এর এম ডি প্রবীর কুমার সাহা বলেন, ২০১১ সালে শেষের দিকে ৬০ একর জমির উপর আনুষ্ঠানিক ভাবে পার্কটি চালু করা হয়। তবে বাণিজ্যিক ভাবে মুনাফা অর্জন করা আমার লক্ষ নয়।
শিশুদের নির্মল আনন্দ দেয়ার জন্যই এই পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। আমি চেষ্টা করছি এই ড্রিম হলিডে পার্ককে আন্তর্জাতিক মানের পার্ক করার। বিভিন্ন রকমের রাইডের ব্যবস্থার পাশাপাশি দর্শনার্থীর জন্য একটু প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘুরাঘুরির জন্য নতুন একটি সাফারি পার্ক করেছি। আমি আশা করি কোনো দর্শনার্থী এখানে এসে নিরাশ হবে না। আমি সাধ্য মত চেষ্টা করছি দর্শনার্থীদের সকল কিছু এসে যেন এক সাথে পায়।
দর্শনার্থীর নিরাপত্তার চিন্তা করে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ও সরকার প্রদত্ত নিরাপত্তা কর্মীর তত্ত্বাবধানে সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলেছি। তবে শিশু ও কিশোরদের পাশাপাশি বিনোদন পিয়াসী সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের আনন্দের খোরাক যোগাবে এই পার্ক এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।