মো: শাহাদাৎ হোসেন রাজু, নরসিংদী প্রতিদিন: গতকাল সকাল থেকে গভীর রাত পযর্ন্ত নরসিংদী জেলা শহরসহ মাধবদী ও উপজেলা সদরের বিভিন্ন শপিংমলগুলোতে ক্রেতাদের উপড়ে পড়াভিড় । নরসিংদীর ঈদবাজারে এবার দেশি কাপড়ের চাহিদা বেশি। এরই মধ্যে শহরের মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোতে চলছে গভীর রাত পর্যন্ত ঈদের কেনাকাটা। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, খেটে খাওয়া মানুষ সাধ্যমতো ঈদের কেনাকাটা করছেন। বড় বড় বিপণিবিতানের পাশাপাশি ফুটপাতের দোকানদাগুলোতেও কেনাকাটায় মানুষের ঢল নেমেছে। ফুটপাতের দোকানগুলোতে সাধারণত রিকশা চালক, দিনমজুরসহ সাধারণ মানুষের ভিড় বেশি। শহরের সিএ বি রোডের সিটি সেন্টার, নয়ন তারা প্লাজা, কাজী সুপার মার্কেট, সদর রোডের ইন্ডেক্স প্লাজা, সুলতান শপিং কমপ্লেক্স, স্টেশন রোডের নিয়াজ মার্কেটসহ আশপাশে অন্যান্য মার্কেট গুলো এবং নরসিংদী বাজারের পুরাতন পোস্ট অফিস রোড, কালীবাড়ী রোডের বিভিন্ন বিপণী বিতানগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতারা। এবার ঈদ মার্কেটে এসেছে হরেক রকম বাহারী ডিজাইনের রঙ-বেরঙের পোশাক। বিক্রেতারা জানান, এবছর বিদেশি পোশাকের চেয়ে দেশি পোশাকের প্রতি ক্রেতাদের ঝোঁক বেশি। তরুণীদের পছন্দের কিছু ভারতীয় পোশাক বিক্রি হওয়ার বাইরে বিদেশি পোশাকের প্রতি তেমন কোনো আগ্রহ নেই ক্রেতাদের।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শহরের বিভিন্ন শপিং সেন্টার ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। তরুণ-তরুণীরা ব্যস্ত হাল-ফ্যাশনের পোশাক ক্রয়ের জন্য। তরুণ- তরুণীদের পছন্দের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে সিটি সেন্টার, নয়ন তারা প্লাজা, কাজী সুপার মার্কেট, ইন্ডেক্স প্লাজা, সুলতান শপিং কমপ্লেক্স, কালীবাড়ী রোডের বিভিন্ন বিপণী বিতানগুলে। এসব মার্কেট ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে বিক্রির শীর্ষে রয়েছে মেয়েদের থ্রি-পিস। এবার ঈদ বাজারে পাখি, কিরণমালাসহ বাহারী নামে পোশাক এলেও তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে বাহুবলী-২, দেবসেনা ও রাখীবন্ধন।
বিপণী বিতানের ব্যবসায়ীরা জানান, তরুণীদের বিভিন্ন বাহারী নামের পোশাকের মধ্যে দেবসেনা সাত থেকে আট হাজার, সাহো-রে তিন থেকে সাড়ে ছয় হাজার, বাহুবলী-২ পাওয়া যাচ্ছে আড়াই হাজার থেকে ছয় হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। মহারানী ২৫শ’ থেকে সাড়ে চার হাজার, গোল জর্জেট ২৫শ’ থেকে চার হাজার, গাউন ১৫শ’ থেকে তিন হাজার, লেহেঙ্গা তিন থেকে আট হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন পাড়ায় গজিয়ে উঠা শপিং মল গুলোতে নতুন-নতুন দোকানে পাওয়া যাচ্ছে অত্যাধুনিক গার্মেন্টস আইটেমের পোশাক।
নয়নতারা প্লাজাা ও কাজী সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, একেকটি দোকান সাজাতে কোটি টাকার বেশি পোশাক দোকানে তুলতে হয়েছে। সিএ বি রোড, সদর রোড ও সুলতান শপিং কমপ্লেক্সের বড় নামি-দামি শো-রুমগুলোতে বিপুল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করে পোশাক তোলা হয়েছে ঈদকে কেন্দ্র করে। তারা ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছেন বলে চোখের আলোকে জানান।
রুচিশীল ক্রেতারা তাদের ছেলে- মেয়েদের একটু দামি পোশাক কেনার জন্য ভিড় করছেন দর্জিবাড়ী, কটন ফ্যাশন, লোটো, ম্যানস্ জোন, রং , ভ্ূঁইয়া ফ্যাশনসহ শহরের বিভিন্ন নামি-দামি শো-রুমগুলোতে। এ সব শো-রুমগুলোতে ছেলেদের জন্য এবার এসেছে বিভিন্ন ডিজাইনের পাঞ্জাবি। নগরীর বিপণী বিতানসহ শিশুদের পোশাকের দোকানগুলোতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। ক্রেতাদের ভিড়ে দোকানের কর্মচারীদের কথা বলার কোনো ফুসরত নেই।
সিএন্ডবি রোডের শরীফ ম্যানসনের মৃধা ক্লথ স্টোরের দোকানী জানান , তুলনামূলকভাবে গতবছরের চেয়ে এ বছরে পোশাকের দাম কিছুটা কম রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন নামে বিক্রি হওয়া তরুণীদের পোশাকগুলোর দাম একটু চড়া। বাকি পোশাক স্বল্প দামের কারণে ভালো বিক্রি হচ্ছে। তরুণ-তরুণীদের কেনাকাটার পাশাপাশি বেশিরভাগ নব-বিবাহিত নারীরা ভিড় করছেন শাড়ির দোকানে। এখানকার শাড়ির বাজার দীর্ঘদিন একচেটিয়া দখল করে রেখেছেন সুলতান শপিং কমপ্লেক্স ও সিএন্ডবি রোডের কয়েকটি নামি-দামি শাড়ি কাপড়ের শো-রুমগুলো।
এবারের ঈদ মার্কেটে কাতান শাড়ি বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে, জামদানি বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে, সিল্কের শাড়ি ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা, বালুচরী পাঁচ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাহারী নামের শাড়ির মধ্যে ইমন নামের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া শাড়িটির মূল্য পাঁচ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকার মধ্যে। এ ছাড়াও সুলভ মূল্যে শাড়ি ও যাকাতের কাপড় বিক্রি করছেন নরসিংদী বাজারের জিন্নাহ পার্কের আশপাশের কাপরের দোকান গুলো।
একটি সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা আব্দুল হাই বলেন, মূলত ঈদে পোশাক কেনাকাটার আনন্দই আলাদা। তবে গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় সিরিয়াল ও মুভির বিভিন্ন চরিত্রের নামের সাথে মিল রেখে পোশাকের কদরই বেশি দেখছি।
ছেলেদের পাঞ্জাবির বাইরে বাহারি ডিজাইনের প্যান্ট, শার্ট ও ফতুয়া বিক্রি হচ্ছে । ছেলেদের একচেটিয়া পোশাক বিক্রি করছে সদর রোড ও স্টেশন রোডের বেশ কয়েকটি শো-রুম ।
নরসিংদীর বানিজ্যিক এলাকা হিসেবে পরিচিত মাধবদী শহরের বিভিন্ন বিপনী বিতানগুলোতে নারী-পুরুষ ও শিশু কিশোরদের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। জেলার উপজেলা শহর গুলোতেও একই চিত্র দেখে গেছে।
এদিকে ঈদকে সামনে রেখে ব্যাপক ব্যস্ত সময় পার করছেন নগরীর টেইলার্সগুলোর দর্জিরা। সময়মত পোশাক ডেলিভারি দেয়ার চিন্তায় তারা দিন-রাত সমানতালে কাজ করে যাচ্ছে। দর্জিরা জানান, ১৫ রমজানের পর আর কোনো নতুন অর্ডার নেওয়া হয়নি। কিন্তু যে অর্ডার তারা নিয়েছে তা সময় মত ডেলিভারি দিতেই তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
#এলবি