নরসিংদী প্রতিদিন:
জনগণ যখন যেখানে নাগরিক নয় মনে হয়,
রাষ্ট্রের জিহ্বায় ঝরে প্রতিহিংসার লালা
জংলি কুকুর যেন,
যে-কোনোরকমভাবে শাস্তি দিতে উঠেপড়ে লেগে যায়
যখন শাসকগোষ্ঠী আইনের মারপ্যাঁচে,
উদ্বাস্তু হওয়া ছাড়া যখন সামনে কোনো পথ খোলা নেই,
নেই কোনো ভবিষ্যৎ অন্তর্গত ভাবনায়
আর সীমাহীন আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়ে গোষ্ঠীবদ্ধভাবে
যে-ভাবে হায়েনারা দল বেঁধে ঘিরে ধরে
কিংকর্তব্যবিমূঢ় শিকারকে,
তেমনই দৃশ্য চোখে ভাসে বার্মার বর্বরদের
জাতিগত নির্মূলের অভিযান দেখে!
শুধু মুসলিম আজ উদ্বাস্তু হয়েছে
মেনে নিতে চাচ্ছে না তো মন,
যারা ‘জীবে দয়া করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর’
এইসব আপ্তবাক্য চিরকাল আওড়ায়
যারা বলেছিল: শান্তির ললিত বাণী শোনো,
যারা বলে গেল: অহিংসা, ধর্মের পরম বাণী
আর বুদ্ধ বুদ্ধ বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে,
তারা আজ কৃপাণ ধরেছে কোন-সে শান্তির জন্য ?
ওরাও কি উদ্বাস্তু হয়নি নিজধর্ম থেকে?
মুসলিমগণ উদ্বাস্তু হয়েছে ভিটে ছাড়া হয়ে,
আর বার্মিজরা উদ্বাস্তু হয়েছে ওদেরই ধর্মমত থেকে!
উদ্বাস্তু আমরা হয়ে পড়ি কখনো-বা
রাজনীতিক আদর্শ থেকে;
অং সান সুচি যখন কুলুপ আঁটে মুখে
যখন নেত্রীর সেই সে-দৃঢ়তা দৃশ্যমান নয় সংবাদে,
যখন নিশ্চিত সংশয় দানা বাঁধে অন্তর্গত বোধে
আর ওঁর গণতন্ত্রের মুখোশ খসে পড়ে,
শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর মৌন অবস্থান
জাতিগত আক্রোশের বধ্যভূমি প্রলম্বিত করে,
তখন তো মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে সুচির
প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত আছে রোহিঙ্গাদের নির্মূল অভিযানে!
মুসলিমরা উদ্বাস্তু হলো ভিটে ছাড়া হয়ে,
বর্মি বর্বররা উদ্বাস্তু হয়েছে ধর্মমত থেকে ;
আর অং সান সুচি উদ্বাস্তু হলো শেষমেশ
রাজনীতিক আদর্শ থেকে!
অতন্দ্রিলা ভবন,
মাধবদী।
নভেম্বর ২৬, ২০১৬