ধর্ম ডেস্ক,নরসিংদী প্রতিদিন: মহাশিবরাত্রি বা শিবরাত্রি হচ্ছে হিন্দু শৈব সম্প্রদায়ের নিকট একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। এই মহাশিবরাত্রি ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে পালিত হয়। মহাশিবরাত্রি হল হিন্দুধর্মের সর্বোচ্চ আরাধ্য দেবাদিদেব মহাদেব ‘শিবের মহা রাত্রি’। অন্ধকার আর অজ্ঞতা দূর করার জন্য এই ব্রত পালিত হয়। অগণিত ভক্ত এইদিন শিবলিঙ্গে গঙ্গাজল, দুধ, বেলপাতা, ফুল দিয়ে পূজা করে থাকে।
সব ব্রতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হল এই মহাশিবরাত্রি। ব্রতের আগের দিন ভক্তগণ নিরামিষ আহার করে। রাতে বিছানায় না শুয়ে মাটিতে শোয়া হয়। ব্রতের দিন তারা উপবাসী থাকে। তারপর রাত্রিবেলা চার প্রহরে শিবলিঙ্গকে দুধ, দই, ঘৃত, মধু ও গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করানো হয়। তারপর বেলপাতা, নীলকন্ঠ ফুল, ধুতুরা, আকন্দ, অপরাজিতা প্রভৃতি ফুল দিয়ে পূজা করা হয়। আর ‘ওঁ নমঃ শিবায়’ এই মহামন্ত্র জপ করা হয় । সেদিন রাত্রি জাগরণ করা হয় ও শিবের ব্রতকথা, মন্ত্র আরাধণা করা হয়।
তবে মহা শিবরাত্রি নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে পুরাণে। একটি মত বলে, সমুদ্র মন্থনের সময় এই দিনই সমুদ্রগর্ভ থেকে উঠে আসা তীব্র বিষ হলাহল পান করে সৃষ্টিকে রক্ষা করেছিলেন শিব। মহাদেবের সেই ত্যাগকে সম্মান জানাতেই মহা শিবরাত্রিতে তাঁর পুজো করা হয়।
আরেকটি মতে, এই দিন শিবপার্বতীর বিয়ে হয়েছিল। মহাদেব এবং মহাগৌরীর মিলনের শুভক্ষণকে স্মরণ করতেই মহাশিবরাত্রির উৎসব। এই দিন গঙ্গায় স্নান করলে পুণ্যার্জন হয় বলে বিশ্বাস অনেকের। মহা শিবরাত্রিতে দিনভর উপবাসী থেকে রাতে চার প্রহর ধরে মহাদেবের পুজো করা হয়।
গঙ্গাজল, ঘি, মধু, দুধ, ভস্মে অভিষেকের পর বিল্বপত্র, লাল ফুল, রক্ত চন্দন, আকন্দ ফল অর্পণ করা হয় শিবকে। যদিও পুরাণে কথিত, বৈরাগী মহাদেব শুধু জল আর একটি বিল্বপত্রেই সন্তুষ্ট। কিন্তু ধর্মভীরু ভক্তরা তা মানতে রাজি নয়। তাই এই দিন শিবের আশিস পেতে দুধ, ঘি, ফল, মিষ্টিতে ভরে ওঠে প্রায় সব শিবমন্দির চত্বরই।
শিবমহাপুরাণ অনুসারে, অতি প্রাচীনকালে বারাণসী তথা কাশীধামে এক নিষ্ঠুর ব্যাধ বাস করত। সে প্রচুর জীবহত্যা করত। একদিন শিকারে বেরিয়ে তার খুব দেরী হওয়ার ফলে সে জঙ্গলে পথ হারিয়ে রাতে হীংস্র জন্তুর ভয়ে এক গাছের উপর আশ্রয় নেয় । কোনো শিকার না পেয়ে সে হতাশ হয়ে গাছ থেকে একটা করে পাতা ছিঁড়ে নীচে ফেলতে থাকে । সেই গাছটি ছিল বেলগাছ । আর সেই বেলগাছের নীচে একটি শিবলিঙ্গ ছিল। সেদিন ছিল শিবচতুর্দশী অর্থাৎ মহাশিবরাত্রি। আর ব্যাধও ছিল উপবাসী। তার ফেলা বেলপাতাগুলো শিবলিঙ্গের মাথায় পড়ে এর ফলে তার শিবচতুর্দশী ব্রতের ফল লাভ হয় তার অজান্তেই। পরদিন ব্যাধ বাড়ি ফিরে এলে তার খাবার সে এক অতিথিকে দিয়ে দেয়। এতে তার ব্রতের পারণ ফল লাভ হয়।
এর কিছুদিন পরে সেই ব্যাধ মারা গেলে যমদূতরা তাকে নিতে আসে। কিন্তু শিবচতুর্দশী ব্রতের ফল লাভ হেতু শিবদূতরা এসে যুদ্ধ করে যমদূতদের হারিয়ে ব্যাধকে নিয়ে যায়। যমরাজ তখন শিকার করেন যে শিবচতুর্দশী ব্রত পালন করে এবং শিব বা বিষ্ণুর ভক্ত যেই জন, তার ওপর যমের কোনো অধিকার থাকে না। সে মুক্তিলাভ করে। এইভাবে মর্ত্যলোকে শিবচতুর্দশী ব্রতের প্রচার ঘটে।