প্রকাশিত ডেস্ক,নরসিংদী প্রতিদিন,শুক্রবার, ০৬ এপ্রিল ২০১৮:
রাজধানীতে দুই বাসের চাপায় তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেনের হাত দ্বিখণ্ডিত হওয়ার ঘটনাটি মর্মান্তিক। এমন দুর্ঘটনা হৃদয়বিদারক ও অনাকাক্সিক্ষত হলেও বাস্তবতা হল, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের হতাহতের খবর পাওয়া যায়।
বস্তুত চালকের খামখেয়ালিপনা ও নিয়ম না মেনে গাড়ি চালানোর কারণেই অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। এক্ষেত্রেও তেমনটি ঘটেছে। রাজীবকে বহনকারী স্বজন পরিবহনের বাসটি চলছিল বেপরোয়া গতিতে। কারওয়ানবাজারের সার্ক ফোয়ারার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিআরটিসির একটি বাস ঘেঁষে দ্রুত অতিক্রমের সময় রাজীব হোসেনের ডান হাত কনুইয়ের ওপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বেপরোয়া বাস চালনা এভাবেই মানুষের জীবনকে করে তুলেছে ঝুঁকিপূর্ণ।
দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ পরিবহন খাতে বিরাজমান বিশৃঙ্খলা। পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের দাপটে দোষী চালকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায় না। এ বিষয়ে মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যের মদদ রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিভিন্ন মহল থেকে নানা ধরনের পরামর্শ ও সুপারিশ করা হলেও তা যে অরণ্যে রোদনে পর্যবসিত হচ্ছে- কলেজছাত্র রাজীবসহ দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়ত মানুষের হতাহত হওয়ার ঘটনা তারই প্রমাণ। সড়ক-মহসড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সমাধানের অযোগ্য কোনো বিষয় নয়। এজন্য দরকার ইতিবাচক চিন্তা ও সমন্বিত পদক্ষেপ। সড়কপথে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হলে দুর্ঘটনার হার অনেক কমে আসবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
জানা গেছে, পিতৃ-মাতৃহীন রাজীব হোসেন পড়ালেখার পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অপারেটরের চাকরি করে ছোট দুই ভাইসহ নিজের ব্যয় নির্বাহ করত। দুর্ঘটনার ফলে আয়ের পথ রুদ্ধ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। হাইকোর্ট অবশ্য রাজীব হোসেনকে কেন এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। একইসঙ্গে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ ও স্বজন পরিবহনের মালিককে তার সব ধরনের চিকিৎসা ব্যয় বহনের নির্দেশও দিয়েছেন। আমরা মনে করি, দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসার ব্যয় বহনে বাধ্য করা হলে দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে। আমাদের সড়ক ব্যবস্থাপনার চিত্র এককথায় ভয়াবহ। একদিকে যাত্রীদের কাছ থেকে গলাকাটা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে, অন্যদিকে অদক্ষ চালকের হাতে গাড়ি চালানোর ভার দিয়ে অসংখ্য মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় কঠোরভাবে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সড়কপথের সংস্কার ও উন্নয়ন যথাযথভাবে সম্পন্ন না হওয়াও দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ। এ দিকেও কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে।
সূত্র: যুগান্তর, সম্পাদকীয় ০৫ এপ্রিল ২০১৮, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ