নরসিংদী প্রতিদিন, বুধবার ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮: নরসিংদীর চরাঞ্চলে যে কোনো সময় বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা। নরসিংদীর চরাঞ্চল শ্রীনগরে প্রতিপক্ষকে গ্রাম ছাড়া করতে হত্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। নৌকার মাঝি আশকর আলী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছে গ্রামজুড়ে।
অন্যদিনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিহত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জড়িয়ে হত্যা মামলা দায়ের করায় ফুসে উঠেছে গ্রামবাসী। অভিযোগ উঠেছে এলাকার আধিপত্যা নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য একটি পক্ষ নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে। এদিকে স্বজনরা ঘটনাটি হত্যাকাণ্ড দাবি করে থানায় ৩২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। তবে স্থানীয় চিকিৎসক বলছেন, স্ট্রোক জনিত কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। আর পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনেই ঘটনাটি হত্যা না স্বাভাবিক মৃত্যু তা উদঘাটিত হবে।
এদিকে, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে চরাঞ্চল শ্রীনগরে। মুখোমুখি অবস্থানে দুই পক্ষ নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ায় যে কোন সময় বড় ধরনের সংঘাতের আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দুই পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।
সরেজমিনে চরাঞ্চল শ্রীনগরে গিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেঘনা নদীবেষ্টিত চরাঞ্চল করিমপুর ইউনিয়নের শ্রীনগর গ্রামে গোষ্টিগত দাঙ্গা ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ফজুর বাড়ী ও বদলী বাড়ির লোকজনের মধ্যে দ্বন্ধ দীর্ঘদিনের।
এ কারণে উভয় পরিবারের লোকজনদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ আগস্ট সকালে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এ সময় প্রতিপক্ষের ছোড়া ইটের টুকরার আঘাতে আশকর আলী আহত হয়। স্বজনরা তাকে বাড়ি নিয়ে গেলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে স্বজনরা স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক আলমগীর সরকারের নিকট নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই সময় স্বজনরা নিহতের লাশ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পথিমধ্যে সিদ্ধান্ত পাল্টে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
গ্রামের পল্লী চিকিৎসক আলমগীর সরকার বলেন, চেম্বারে নিয়ে আসার পর শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাইনি। তবে নিহতের মেয়ে আমাকে জানিয়েছেন তাঁর বাবা স্টোক করেছে। তারপর আমি পরীক্ষা করে দেখি তিনি মৃত।
নৌকার মাঝি শাহাবুদ্দিন মিয়া বলেন, নিহত আসকর আলীর মেয়ে ঘাটে এসে আমাকে বলল বাবা স্টোক করেছে, হাসপাতালে যেতে হবে। মাঝ নদীতে গিয়ে দেখি তিনি মারা গেছে। পরে ঘাটে ফিরে আসি। তখন তারা ফোনে কথা বলে আবার সদর হাসপাতালে পোস্টমর্ডান করানো সিদান্ত নেয়। ‘তখন তাকে বললাম, আরেকটা পাপ লাগাচ্ছিস। এই সব করে গ্যারামে আরেকটা ঝগড়া বাধাবি। ‘
ইউপি সদস্য কামাল মিয়া বলেন, একটি স্বাভাবিক মৃত্যুকে হত্যা বানিয়ে তাঁরা থানায় মিথ্যা মামলা করেছে। সেই মিথ্যা মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ফাঁসানো হয়েছে। আসলে তাঁরা বিএনপির এজেন্ট হয়ে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে। সঠিকভাবে তদন্ত করলেই সব বেরিয়ে আসবে।
এই ঘটনায় ৩২ জনের নাম উল্লেখ করে নরসিংদী সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী হেলেনা আক্তার। আসামিদের মধ্যে করিমপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবুল হোসেন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জজ মিয়া, সাবেক সভাপতি সেন্টু মেম্বর অন্যতম। এজাহারে বিভিন্ন আসামীর নাম উল্লেখ করে ধারালো অস্ত্র, লাঠি ও ইটের আঘাতে তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার বাদী হেলেনা আক্তার বলেন, আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। যারা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
মামলার তদারককারী কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) শাহারিয়ার আলম জানান, নিহতের শরীরে কোন ধারালো অস্ত্রের আঘাত পাওয়া যায়নি। তবে মাথায় ও বুকে ছোড়া ইটের আঘাত ছিল। সেই আঘাতের কারণে নাকি শারীরিক ভাবে অসুস্থ্য হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। এখন ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে সেটা বোঝা যাবে। এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশকে সতর্ক রাখা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন, এল/বি