নিজস্ব প্রতিবেদক | নরসিংদী প্রতিদিন –
বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০১৯ :
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার শ্রীনিধি এলাকাটি কৃষি প্রধান হওয়ায়। এখানে উৎপাদিত হয় শীত ও গ্রীষ্মকালিন শাক-সবজি। পণ্য পরিবহনে খরচ কম ও অধিক নিরাপদের কারণে ব্যবসায়ীদের পছন্দ রেলপথ। শ্রীনিধি স্টেশন মাস্টার ও অন্যান্য কর্মচারী না থাকায় তিন মাস ধরে তালা ঝুলছে এ রেল স্টেশনে। এতে করে ট্রেন কখন আসবে, কোথায় আছে জানতে পারেন না যাত্রীরা। বন্ধ রয়েছে টিকিট বিক্রি ও মাল বুকিং। এতে যাত্রী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পড়েছে দুর্ভোগে। এছাড়া এ স্টেশনে ব্যবসায়ীদের মাল বুকিং ব্যবস্থা বন্ধ থাকায়। সবজি সহ অন্যান্য পণ্য সড়ক পথে ঢাকাসহ দেশের অন্য স্থানে আমদানি ও রপ্তানি করতে গুনতে হচ্ছে দ্বিগুন ভাড়া। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি দ্রুত এ স্টেশনটি সচলকরা হলে রেল যাত্রীদের ভোগান্তি কমে যাবে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্টেশনটিতে তিনটি লোকাল ট্রেন স্টপেজ দেয় কর্ণফুলি এক্সপ্রেস, ঈশা খাঁ ও সিলেট সুরমা মেইল। স্টেশন মাস্টার বিহীন তালাবন্ধ স্টেশনটিতে ট্রেন আসা-যাওয়ায় বাজে না ঘন্টা নেই সিগন্যাল ব্যবস্থা। অভিযোগ রয়েছে প্ল্যাটফর্মের এক নম্বর লাইলে বদলে স্টপেজের সময় ট্রেন থামে মাঝ লাইলে।ভূমি থেকে ট্রেনের বগির উচ্চতা বেশি হওয়ায় উঠতে ও নামতে গিয়ে প্রায় দুর্ঘটনার শিকার হন যাত্রীরা। চার মাস যাবত স্টেশনের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে যাত্রীসেবা ও বিরুপ প্রভাব পড়েছে স্থানীয় ব্যবসার ওপর।
জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথের নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার ২৭ কিলোমিটার অংশে রয়েছে ছয়টি রেলওয়ে স্টেশন। স্টেশনগুলো হলো- আমিরগঞ্জ, খানাবাড়ি, হাঁটুভাঙ্গা, মেথিকান্দা, শ্রীনিধি ও দৌলতকান্দি। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ন একটি স্টেশন শ্রীনিধি। স্টেশনটি দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রী ট্রেনে করে ঢাকা, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট ও চট্রগ্রামে যাতায়ত করে থাকেন। স্টেশন মাস্টার আক্তার হোসেনকে বদলি করা হয়েছে নরসিংদীর জিনারদীতে। অন্যকোন কর্মচারী না থাকায় স্টেশন মাস্টার রুম, টিকিট কাউন্টার, ওয়েটিং রুম ও পাবলিক টয়লেটগুলো রয়েছে তালাবন্ধ। বসার স্থান না পেয়ে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় যাত্রীদের। টয়লেটের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ সেবাবন্ধ থাকায়। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে যাত্রীদের যেতে হয় স্টেশনের পাশের বাড়ির কোন টয়লেটে।
মো: হবি নামে এক কলা ব্যবসায়ী জানায়, ট্রেনের জন্য তিনি অনেক সময় ধরে অপেক্ষা করছেন। কলা নিয়ে যাবেন নরসিংদী শহরে। স্টেশন মাস্টার না থাকার কারণে ট্রেন আসার সঠিক সময় জানতে পারছেন না। তাই সবার মতো তিনিও নিরুপায়।হবির মতো আরো অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে।এব্যাপারে স্থানীয় সোহেল তাজ বলেন, ট্রেন তিনটি দুই মিনিটেরও কম সময় যাত্রা বিরতি করে। ট্রেন এক নম্বর লাইনের পরিবর্তে মাঝ লাইনে থামায়। ট্রেনের বগি বেয়ে উঠতে ও নামতে গিয়ে গত চার মাসে শ্রীনিধি স্টেশনে ট্রেনে কাটা পড়ে দুই ব্যক্তি মৃত্যু হয়। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত স্টেশন মাস্টার ও অন্যান কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে পুনরায় স্টেশনটি সচল করতে রেল কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান ভোক্তভোগীরা।
এব্যাপারে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার এটিএম মুছা, যাত্রী দুর্ভোগের কথা শিকার করে নরসিংদী প্রতিদিনকে বলেন, শ্রীনিধি স্টেশনে মাস্টার সংকটে যাত্রী সেবা ব্যাহত হচ্ছে। নতুন করে মাস্টার নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত এ দুর্ভোগ থেকে উত্তরণে কোন সম্ভাবনা নেই।
এব্যাপারে রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম নরসিংদী প্রতিদিনকে বলেন স্টেশন মাস্টার ও অন্যান্য কর্মচারী না থাকার বিষয়টি তিনি এতদিন জানতেন না। এ বিষয়ে কেউ তাকে লিখিত অভিযোগও দেয়নি বলে জানান। তিনি আরো বলেন রেলের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যাটি দ্রুত সমাধানের ব্যাপারে আলোচনা করবেন।