নিউজ ডেস্ক | নরসিংদী প্রতিদিন-
সোমবার-২০ জুলাই ২০২০:
প্রতিষ্ঠার প্রায় ৬০ বছর পরে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে বরিশাল নগরীর পশ্চিম কাউনিয়ায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) এলাকায়। দীর্ঘ বছরের চলাচল অনুপযোগী জরাজীর্ণ সড়ক, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ চলছে সরকারের এই দপ্তরটিতে। প্রায় ২০ কোটি (ভ্যাট বাদে) টাকা চুক্তি সাপেক্ষে এই কাজের বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
তবে অভিযোগ উঠেছে, সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু’র দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফলে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও স্থানীয় মুখোশধারী ও চিহ্নিত ছিঁচকে চাঁদাবাজরা তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের এই উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের হিতৈষী সেজে চাঁদা দাবি করছে তারা। এমনকি বিসিক শিল্প নগরীর পরিবেশ উত্তপ্ত করতে দিয়ে যাচ্ছে মোটরসাইকেলের মহড়া।
এসব কারণে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। ফলে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। আবার সময় বিলম্বের কারণে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধিতে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। তবে এতো কিছুর পরেও প্রাণ শঙ্কার পাশাপাশি কাজের স্বার্থে আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় এবং বিসিক সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘বরিশাল বিসিক শিল্প এলাকাটি জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজস্ব উদ্যোগে করা একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৬০ সালে কাউনিয়া এলাকায় ১৩১ একর জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল বিসিক শিল্প নগরী বাস্তবায়ন কার্যক্রম। এরপর ১৯৭৫ সালে স্থাপিত হয় বর্তমান বিসিক ভবন। তাছাড়া ১৯৮১ সালের ২৭ মার্চ থেকে শিল্প উদ্যোক্তা, প্রশিক্ষণ এবং শিল্পকারখানা গড়ে তোলার প্রতিষ্ঠান বিসিক এর কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়। এর পর থেকে ধীরে ধীরে বিসিকে শিল্প প্রতিষ্ঠান বাড়লেও বাড়েনি কোন সুযোগ সুবিধা। নানা সমস্যা আর সম্ভাবনায় পতিত হয় বিসিক শিল্প এলাকা।
নগরীর কাউনিয়া বিসিক এলাকার প্রবীণ বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ‘বিসিক শিল্প এলাকা হলেও অপরাধের অভয়ারন্য ছিল এ ক্ষেত্রটি। মাদকের জমজমাট হাট বসতো এখানে। শুধু তাই নয়, অপরাধীদের অভয়ারণ্য নির্জন বিসিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে সন্ত্রাসীদের বন্দুকযুদ্ধের (ক্রস ফায়ার) ঘটনাও রয়েছে একাধিক। ফলে এক সময় বিসিকের নাম শুনলেও আঁতকে উঠতো অন্য এলাকার মানুষ
বিসিক সরেজমিন পরিদর্শনকালে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কাজ শুরুর পরে স্থানীয় কিছু লোক দেশের হিতৈষী, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক প্রতিনিধি সেজে হুমকি-ধমকি দিয়ে হীন স্বার্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। কখনো মোবাইল ফোনে আবার কখনো ব্যক্তি মাধ্যমে চাঁদা চাচ্ছে। তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় উন্নয়ন কাজ কিছু দিন বন্ধ রাখতে বাধ্য করা হয়। শুধু তাই নয়, উন্নয়ন কাজে বাধা সৃষ্টি করতে ওই চাঁদাবাজ বাহিনী প্রায় দিনে এবং রাতে প্রকাশ্যে মোটরসাইকেলে মহড়া দিয়েছে। যা থানা পুলিশকে অবগত করা হলে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনও করেছে। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি থানা পুলিশ।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, কাজ বন্ধ থাকায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নানাভাবে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানকে। কেননা কাজের শুরুতে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য যেমনটা ছিল তা এখন নেই। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে নির্মাণ সামগ্রীর দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। অথচ মূল্য বৃদ্ধি পেলেও নির্মাণ কাজের জন্য বরাদ্দ বাড়ছে না। ফলে এমন পরিস্থিতিতে লাভের মুখ দেখা নিয়েও চিন্তিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
এদিকে বিসিক শিল্পনগরীর উন্নয়ন কাজের দায়িত্বে থাকা প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ও শিল্পনগরী কর্মকর্তা মো. খায়রুল বশার বলেন, ‘উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। গত এপ্রিল থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ শুরু করা হয়। এ কাজ বাস্তবায়নের মেয়াদ ছয় মাস। যা এরই মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়ায় চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে কি কারণে কাজ বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়েছে সে বিষয়ে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, একটু ঝামেলা ছিল তাই দেরি হয়েছে। তবে এখন আর কোন ঝামেলা নেই।
অপরদিকে বিসিক এর শিল্প সহায়ক কেন্দ্রের প্রধান মো. জালিস মাহমুদ বলেন, ‘বিসিকের ১৩১ একর জমিতে মোট ১৭৩টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া আছে। এর মধ্যে ১০১টি প্রতিষ্ঠান চলমান রয়েছে। এদের সমস্যা সমাধানসহ বিসিকের উন্নয়নের লক্ষ্যে সড়ক, ড্রেনেজ, সীমানা প্রাচীর এবং গেট নির্মাণ কাজ চলছে। এ কাজের পিডি’র দায়িত্বে আছেন শিল্পনগরী কর্মকর্তা মো. খাইরুল বাশার। কাজ নিয়ে কোন ঝামেলা আছে বা ছিল কিনা সেটা তিনি ভালো বলতে পারবেন। যদিও নতুন পিডি হিসেবে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে আমি এখনো কাজ বুঝে নিতে পারিনি। কাজ বুঝে পেলে কোন প্রকার সমস্যা বা সম্ভাবনা থাকলে সেটা তখন বলা যাবে।
এব্যাপারে মহানগরীর কাউনিয়া থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) আজিমুল করিম বলেন, ‘মোটরসাইকেল শোডাউনের ঘটনা ঘটেছে। তবে সেটা গত রোজারও আগে। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলাম। কিন্তু কেউ এ বিষয়ে অভিযোগ করতে রাজি হননি। তাছাড়া মৌখিকভাবে কেউ অভিযোগ করলে তার উপর ভিত্তি করা যায় না। অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
-ব্রেকিংনিউজ/এমএইচ