কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ভাঙ্গন কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছেনা। সাগরের প্রচন্ড ঢেউ ও পানির স্রোতে সৈকতের বালিয়াড়ি সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙ্গন ঠেকাতে জিওব্যাগ ফেলা অব্যাহত রয়েছে। তাতেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। তাই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত রক্ষা ও টেকসই আধুনিক পরিবেশবান্ধব পর্যটন প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
উক্ত প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭শ ৫০ কোটি টাকা। বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারকে ওই প্রকল্পের ডিজাইন প্ল্যানিং করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্ল্যানিং কমিশনে প্রেরণ করতে। এরপর এটি একনেকে অনুমোদন হলে কাজ শুরু করতে আর কোন বাধা থাকবে না।
গত মার্চ মাসে জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পৌরসভা, বিদ্যুৎ বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের যৌথসভায় উল্লেখিত প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্ট ও কবিতা চত্বর হয়ে লাবনী পয়েন্ট পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার ঝাউবাগান সমুদ্রের ভাঙনে পড়ে উজাড় হয়ে যাচ্ছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ অংশে জিওব্যাগ ফেলা অব্যাহত থাকলেও শেষ রক্ষা করা যাচ্ছে না কিছুতেই।
সাগরের পানির স্রোতে ভেঙে পড়া ঝাউবাগান উপকূল রক্ষার শেষ রক্ষাকবচ। ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের অহংকার পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত খন্ড বিখন্ড হয়ে যাবে। ফলে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের খেতাবটিও মুছে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন কক্সবাজার পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজার শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী একাধিকবার ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
পরিদর্শনের পর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, টেকসই পরিবেশ বান্ধব বাঁধ নির্মাণ করা না গেলে পর্যটন হোটেল- মোটেল জোন, শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সাগরের ভাঙ্গনের কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন।
অন্যদিকে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অবঃ) ফোরকান আহমদ জানান, আধুনিক নির্মাণশৈলী দিয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে সুরক্ষিত করা হলে দেশি-বিদেশি পর্যটক আগমন বছরের ১২ মাসে সমান তালে আসতে থাকবে। সাড়ে পাঁচ শতাধিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস রেষ্ট হাউসকে পর্যটন মৌসুম এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।
পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, পরিবেশবান্ধব টেকসই বাঁধ নির্মাণ, ওয়াকওয়ে নির্মাণ এবং মাঝে মাঝে বিনোদনের ব্যবস্থা ইত্যাদি সুযোগ নিশ্চিত করা হলে আরও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরি হবে। ফলে কক্সবাজারের চিত্র যেমন পাল্টে যাবে, তেমনি নতুন নতুন দেশি-বিদেশি পর্যটনখাতে বিনিয়োগকারীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে।
জেলা প্রশাসক মু কামাল হোসেন বলেন, এই একটি প্রকল্পই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে পারে। দিনের বেলা যেমন পর্যটকে ভরপুর থাকবে রাতের অপূর্ব সৌন্দর্য দেখতে পর্যটকদের আগ্রহ আরও বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। পৃথিবীর উন্নত দেশের পর্যটকরা কক্সবাজারে আসার আগ্রহ দেখাবে, কারণ সমুদ্র সৈকত এর উপরের ঝাউ বাগান ঘেঁষে হবে ওয়াকওয়ে আর মাঝে মাঝে দৃষ্টিনন্দন সিঁড়ি দিয়ে সাগরে নেমে যেতে পারবে পর্যটকেরা। শুধু তাই নয় কক্সবাজার পর্যটনখাত হবে দেশের সবচেয়ে অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান। এমনকি বদলে যাবে কক্সবাজার, বদলে যাবে দেশের অর্থনীতির চাকা।