শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৫৫ অপরাহ্ন
করোনার কারণে স্থগিত চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা বাতিলের বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন এক শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) সকালে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে শতাব্দী রায় নামে ওই এইচএসসি পরীক্ষার্থীর পক্ষে নোটিশটি পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছাড়াও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং ৯টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করে এ আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
আগামী ৩ দিনের মধ্যে নোটিশে উল্লেখিত দাবি মেনে না নিলে হাইকোর্টে এ সংক্রান্ত রিট আবেদন দায়ের করা হবে বলে নোটিশে আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে।
শতাব্দী রায় সাভারে মোফাজ্জল-মোমেনা চাকলাদার মহিলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী এবং চলতি বছরের একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী।
তার আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নোটিশে শিক্ষার্থী দাবি করেছেন, জেএসসি ও এসএসসির ফলের ওপর ভিত্তি করে উচ্চ মাধ্যমের ফল প্রস্তুত করলে তিনিসহ অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফল করার প্রস্তুতি থাকার পরও তা থেকে বঞ্চিত হবেন আগের জিপিএ’র কারণে।’
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, জেএসসি ও এসএসসির ফলের গড় করার কারণে একদিকে যেমন অনিয়মিত, একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্য ও প্রস্তুতিহীন শিক্ষার্থীর জন্য সুযোগ তৈরি হবে, তেমনি কোনও কারণে জেএসসি কিংবা এসএসসিতে কম জিপিএ পাওয়া মেধাবী, পরিশ্রমী শিক্ষার্থীরা তাদের প্রচেষ্টা প্রমাণে ব্যর্থ হবে। পূর্বের ফলাফলের গড় করে পরবর্তী পরীক্ষার ফলাফল নির্ধারণ এক ধরণের জোরপূর্বক এবং বেআইনি কাজ। যা দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ আইনত করতে পারেন না।
এর আগে গতকাল বুধবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এবছর সরাসরি এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের জেএসসি ও এসএসসি ফলের ভিত্তিতে গড় করে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফলাফল মূল্যায়ন করা হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই ফল প্রকাশ করা হবে। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
দীপু মনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তায় সার্বিক বিবেচনায় ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষা ভিন্ন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন হবে। যেভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে, তাই বিবেচনা করছি। এ পরীক্ষার জন্য ৩০ থেকে ৩২ দিন সময় দরকার হয়। এক বেঞ্চে একজন করে ছাত্র/ছাত্রী বসানো সম্ভব নয়। আবার এখন কেন্দ্র দ্বিগুণ করার জনবলও নেই।’
তবে গেল কিছুদিন ধরেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়ে আসছিল, এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে। প্রতি বেঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থী বসিয়ে পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। সরকারি ও সাপ্তাহিক ছুটি বাদে প্রতিদিনই পরীক্ষা নেয়া হবে।
গেল ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা জানিয়েছিলেন, ১৫ দিন সময় পেলেই তারা এইচএসসি পরীক্ষা নিতে প্রস্তুত। তবে এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া না-নেয়ার কিংবা তারিখ চূড়ান্তের বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে বলে জানিয়েছিলেন বোর্ড চেয়ারম্যানরা।
করোনা সংক্রমণের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকেই দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। সরকারঘোষিত সবশেষ এই ছুটির মেয়াদ ছিল ৩ অক্টোবর পর্যন্ত। গেল ১ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত ১ এপ্রিল এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। করোনার কারণে তা স্থগিত করা হয়, শেষ পর্যন্ত বাতিল করা হলো।
চলতি বছরের পিইসি ও জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দীর্ঘ দিন ধরেই অনলাইন মাধ্যমে পাঠদান চলছে।
