বিশ্বব্যাপী চলছে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। এই ভাইরাস প্রতিরোধে দেশে দেশে চলছে গণ টিকাদান কর্মসূচি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের হার শূণ্যে নামিয়ে আনতে করোনা টিকা নেয়ার পাশাপাশি বাড়তি সতর্কতা বজায় রাখতে হবে। নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে টিকা দিয়ে, সব মানুষকে সুরক্ষার কথা ভাবলে উল্টো ফল হতে পারে।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অনুজীব বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল বলেন, ‘করোনা টিকা নিলেই সব করোনামুক্ত হয়ে যাবে, বিষয়টি এমন নয়। সারা পৃথিবীব্যাপী টিকা দেয়ার উদ্দেশ্য সুরক্ষার চেয়ে রোগের তীব্রতা কমিয়ে আনা, অসুস্থার সময়কাল কমিয়ে আনা এবং রোগীদের হাসপাতালে যাওয়ার হার কমিয়ে দেয়া।’ এই অনুজীব বিজ্ঞানী বলেন, ‘টিকা শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারবে না, টিকা নেয়ার পরও মাস্ক পরতে হবে, কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’
দেশের মোট জনগোষ্ঠীর বড় অংশকে টিকার আওতায় আনতে হবে জানিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘করোনা টিকা নেয়ার মাধ্যমে কিছু মানুষ সুরক্ষিত হলো, আর বড় অংশ টিকা পেল না এভাবে সামগ্রিকভাবে পুরো দেশকে করোনা মুক্ত করতে পারবো না। টিকা নিলেও অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। একটি দেশের ৮০ শতাংশ লোক যদি ইমিউনিটি অর্জন না করে, তাহলে ওই জনগোষ্ঠীতে রোগের প্রাদুর্ভাব আবার দেখা দিতে পারে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকা নিলে সে হয়তো ৭৭ শতাংশ সুরক্ষিত থাকবে। আর সে অসুস্থ হলেও তা মৃদু হবে। কিন্তু তার মাধ্যমে অন্য মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।’
এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, ‘আমরা যতদিন সবাইকে পুরোপুরি করোনামুক্ত করতে না পারবো, ততদিন আমাদের মাস্ক পরতেই হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৭ জানুয়ারি ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এরপর টিকার নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব সাইট (www.surokkha.gov.bd) উন্মুক্ত করা হয়। এ সময় ২৬ জন বিভিন্ন পেশাজীবী প্রতিনিধি করোনা টিকা গ্রহণ করেন। এর পরের দিন ২৮ জানুয়ারি রাজধানীর পাঁচ হাসপাতালে আরো ৫৪১ জনকে দেওয়া হয় টিকা। পরে ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পর্যায়ে শুরু হয় টিকাদান কর্মসূচি। সর্বশেষ ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ২০ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৩ লাখ ৭৮ হাজার ৯৩৫ জন। আর নারী সাত লাখ তিন হাজার ৯৪২ জন।