নরসিংদীতে বিক্রির জন্য ৭০ হাজারেরও বেশি পশু প্রস্তুুত করেছেন কৃষক ও খামারিরা। এ মুহূর্তে পশু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। তাদের টার্গেট এ কোরবানি ঈদ।
কোন প্রকার ঔষধ প্রয়োগ না করে প্রতি বছরের মতো এবারো খামারিরা সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মোটাতাজা করেছেন। তবে গোখাদ্যের চড়া দামে পশু লালন পালন করে মহামারি করোনার কারণে ন্যায্য দাম পাবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
খামারিদের আশা, সীমান্ত দিয়ে যদি দেশের বাইরের পশু আমদানি বন্ধ থাকে ঈদের হাটে এসব পশু বিক্রি করে লাভবান হবেন।
এবছর জেলায় স্থানীয় খামারগুলোতে যে পরিমাণ পশু প্রস্তুুত করা হয়েছে, তাতে কোরবানির জন্য পশু আমদানির প্রয়োজন হবে না বলে মনে করছেন জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
নরসিংদী জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলার ৬টি উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ৬ হাজার ৭৬২ জন খামারি ৬০ হাজার ৯১০টি পশু পরিচর্যার করে কোরবানির জন্যে প্রস্তুত করেছেন। এ সকল পশুর মধ্যে রয়েছে ষাড় ৩১ হাজার ৪০৭টি, বলদ ৯ হাজার ৮৫০টি, গাভী ৪ হাজার ৪৯২টি, মহিষ ১ হাজার ৫১৮টি, ছাগল ৯ হাজার ৬৫১টি, ভেড়া ২ হাজার ৯১৮টি ও অন্যান্য ৭৪টি।
এছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে কৃষকসহ গৃহস্ত পশু পালনকারীরা কোরবানির জন্যে বিভিন্ন পশু পালন করছেন ১০ থেকে ১২ হাজার। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের পশু হাটেও এ সব পশু সরবরাহ করা যাবে বলে আশা করছেন খামারিরা।
খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছরই ঈদের ৫ থেকে ৬ মাস আগে বাজার থেকে গরু-মহিষ কিনে দেশীয় খাবার দিয়ে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেন তারা। অনেকে আবার ৮ থেকে ১০ মাস আগে থেকেই দেশের স্থানীয় হাট থেকে গরু-মহিষ ও ছাগল কিনে লালন পালন করছেন।
খামারিরা জানান, প্রতি বছরই ঈদ এলে গরু বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন তারা। ছোট বড় খামারের পাশাপাশি কৃষকরাও ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজা করে থাকেন। অন্যান্য বছর ক্রেতারা কোরবানির একমাস আগে থেকে খামারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন পছন্দের পশুটি কেনার জন্য, এবার করোনার কারণে সে অবস্থাটি নেই। ঈদের বেশি দিন বাকী না থাকলেও ক্রেতাদের তেমন সারা নেই। তাই পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই তাদের।
খামারিরা বলছেন, তাদের পালিত পশুগুলোর বেশির ভাগই ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা মূল্যের। এ পশুগুলোর অধিকাংশই মধ্যবিত্তদের কাছেই চাহিদা পেতো। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে কারণে মধ্যবিত্তরাই রয়েছেন নানান সঙ্কটে। অনেকেই হয়ত এবার কোরবানি নাও দিতে পারেন। ফলে পশুর চাহিদা এবার কম থাকবে বলে মনে করছেন তারা।
রায়পুরা উপজেলা চরমধুয়া এলাকার গ্রিন এগ্রো ফার্মসের মালিক আহসান শিকদার বলেন, এবার আমাদের খামারে দেশি জাতের ৯০টি গরু পালন করা হয়েছে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে এসব গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। তবে কোরবানির পশুর দাম ও বাজার পরিস্থিতি কী হয় এ নিয়ে শষ্কায় আছি।
একই উপজেলার দড়িগাঁও গ্রামের কৃষক খুশি মিয়া বলেন, কোরবানি ঈদের হাটে বিক্রির জন্যে ৫ মাস আগে দুটি ষাড় কিনে লালন পালন করছেন। গো-খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে গরু দুটি পালনে খরচ অনেক বেশি বেড়েছে। ন্যায্য দাম না পেলে লাভবান হওয়া যাবে না।
শিবপুর উপজেলার ইটাখোলা গ্রামের খামারি কিবরিয়া বলেন, প্রতি বছরই এই ঈদকে সামনে রেখেই আমরা পশু লালন পালনে বড় অংকের টাকা বিনিয়োগ করে থাকি। আমার খামারে এবছর ৬০টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এবার দেশের বাইরের গরু আমদানি যদি বন্ধ থাকে তবে এসব গরু বিক্রি করে লাভবান হতে পারব বলে আশা করছি।
রায়পুরার গোপীনাথপুর এলাকার সৃজনারী পশু লালন পালনকারী কৃষক জাকির হোসেন জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রীর দাম বেড়েছে। এতে পশু লালন পালনে আগের বছরের চেয়ে এবার তুলনামূলক বেশি খরচ হয়েছে।
নরসিংদী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান খান বলেন, নরসিংদী জেলায় ৫৫ হাজার কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে।