নরসিংদীর মাধবদীতে নারীর গলাকাটা মহরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার (৫ আগস্ট) দুপুরে পাঁচদোনা বাজার সংলগ্ন হাজী বিল্লাল হোসেন এর ভাড়াটিয়া বাড়ি থেকে এ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বলছে, মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ঘরে থাকা একটি বটি দিয়ে ওই নারী আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মারা যাওয়া ওই নারীর নাম লামিয়া আক্তার ওরফে সুমা (৩০)। তিনি ময়মনসিংহ শহরের বাবুখালী এলাকার সুলতান উদ্দিনের মেয়ে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন নরসিংদীর পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজিম ও মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান।
জানা গেছে, প্রায় একযুগ আগে জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার গারোহারী এলাকার মো. আকিরুজ্জামানের সঙ্গে সংসার শুরু করেন লামিয়া আক্তার। এই দম্পতির দুই সন্তান, মাসুম (১১) ও আবদুল্লাহ (৪)। তিন বছর আগে আকিরুজ্জামান মাধবদীর চৈতাব এলাকায় ক্রোমা টেক্সটাইল মিলে কাজ নেওয়ার পর থেকেই পরিবারটি পাঁচদোনা বাজার সংলগ্ন হাজী বিল্লাল হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকছেন।

পুলিশ ও নিহত নারীর স্বজনরা বলছেন, গতরাতে ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১০টা পর্যন্ত বেঘোরে ঘুমাচ্ছিলেন লামিয়া আক্তার। ওই সময় খিদে পাওয়ায় দুই সন্তানকে নিয়ে বাজারে নাস্তা করতে যান তাদের বাবা আকিরুজ্জামান। তারা বেরিয়ে যাওয়ার সময় নিজেই দরোজা বন্ধ করে দেন লামিয়া। প্রায় একঘণ্টা পর বাচ্চাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে কাজে চলে যান তাদের বাবা। মাসুম ও আবদুল্লাহ বাড়িতে ফিরে তাদের মাকে ডাকতে থাকেন। দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকির পর সাড়া না পেয়ে আশপাশের লোকজনকে ঘটনা জানায় তারা। পরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় ঘরের জানালা ভেঙে একটি শিশুকে ভেতরে পাঠানো হয়। ওই শিশুটি দরোজা খুলে দিলে ভেতরে ঢুকে লামিয়ার গলা কাটা লাশ পড়ে থাকতে দেখেন তারা। পরে খবর পেয়ে পাঁচদোনা ফাঁড়ির পুলিশ এসে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

নিহত নারীর বাবা সুলতান উদ্দিন জানান, পাঁচ বছর ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছিল আমার মেয়ে। তাকে অনেকবার চিকিৎসকের কাছেও নেওয়া হয়েছে। হঠাৎ হঠাৎ সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়তো। হয়তো এমন অবস্থাতেই সে আত্মহত্যা করে বসেছে। এই ঘটনায় আমার কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই।
লামিয়া আক্তারের স্বামী আকিরুজ্জামান জানান, তার ছেলেরা বাসায় ফিরে ডাকাডাকি করলেও তাদের মা দরোজা খুলছিল না। পরে জানালা ভেঙে ঘরের ঢুকার পর তার গলা কাটা লাশ দেখতে পেয়ে আমাকে খবর জানানো হয়। অথচ আমি বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তাকে সুস্থই দেখেছিলাম।
পাঁচদোনা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক ইউসুফ আহমেদ জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ওই নারীর লাশ ও রক্তমাখা একটি বটি উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি ওই বটি দিয়ে নিজের গলায় কোপ বসিয়ে দেন। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরে সুরতহাল শেষে তাঁর লাশ ময়না তদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।