দুবাইয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে ইতিহাস গড়লো পাকিস্তান। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতকে তারা হারিয়ে দিলো ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে।
রোববার আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ১৫১ রান তুলেছিল ভারত। বিরাট কোহলিদের বোলিং-শক্তি বিচারে লক্ষ্যটা তাড়া করা পাকিস্তানের জন্য মোটেও সহজ ছিল না। কিন্তু দুই ওপেনার বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের মসৃণ ব্যাটিংয়ে পাকিস্তান যেন কোনোকিছু টের পাওয়ার আগেই জয় তুলে নিল!
ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচেই ভারতকে হারিয়ে বাবর বুঝিয়ে দিলেন এই বিশ্বকাপে পাকিস্তানও ফেবারিট। অন্যদিকে যশপ্রীত বুমরা, ভুবনেশ্বর কুমার, মোহাম্মদ শামিদের মতো ভুবন কাঁপানো বোলারদের নিয়ে পাকিস্তানের কোনো উইকেট ফেলতে পারেনি ভারত।
ভারতের করা ১৫১ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৫২ বলে ৬৮ রান করেছেন বাবর আজম। বিজওয়ান করেছেন ৫৫ বলে ৭৮। বাউন্ডারিও যেন হিসেব করে মেরেছেন দুজন। বাবরের ব্যাট থেকে আসে ৬ চার ও ২ ছক্কা। রিজওয়ান মেরেছেন সমান ৬ চার। কিন্তু ছক্কা হাঁকিয়েছেন একটি বেশি। ব্যাটিংয়ে এক মুহূর্তের জন্য জড়তা ছিল না। পাওয়ার প্লে’তে রান ৪৩, ১০ ওভারে ৭১। শেষ ১০ ওভারে দরকার ছিল ৮১ রান। মাঝে ২ ওভারে ১৬ ও ১২ রান তুলে কাজটা সহজ করে নেন দুজন। এরপর ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়িয়ে ১৩ বল আগেই লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলেন তারা।
এর আগে পাকিস্তানের বোলিংও ছিল নিয়ন্ত্রিত। শুরুটা করেছিলেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। বল হাতে শুরুর দুই ওভারেই রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুলের উইকেট নেন। শুরুর ধাক্কার পরপরই হাসান আলী তুলে নেন সূর্যকুমার যাদবের উইকেট। কিন্তু ব্যাট হাতে পাকিস্তানের আক্রমণের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তার ৫৭ রানের ঝকঝকে ইনিংসে শেষ পর্যন্ত লড়াকু পুঁজি পায় ভারত।
৪৫ বলে ফিফটি তুলে নেওয়ার পর কোহলি হাত খুলে খেলা শুরু করেন। কিন্তু তার ইনিংসটি বড় করতে দেননি সেই শাহীন আফ্রিদিই। স্লোয়ার বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে টাইমিং মিস করে কোহলি উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। ৪৯ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় সাজান ইনিংসটি।
ভারত নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও রান রেট কখনো ছয়ের নিচে নামতে দেয়নি। পাওয়ার প্লে’তে রান ৩ উইকেটে ৩৬। ১০ ওভারে রান ৬০ রান। রোহিত (০) ও রাহুল (৩) আউট হওয়ার পর যাদব ১টি করে চার ও ছক্কায় ১১ রান করেছিলেন। কিন্তু হাসান আলী তাকে প্রথম ওভারেই আউট করেন।
চতুর্থ উইকেটে কোহলিকে সঙ্গ দেন পান্ত। দুজনের ৪০ বলে ৫৩ রানের জুটিতে রানের চাকা সচল থাকে। পান্ত স্বভাবসুলভ করে ৩০ বলে ৩৯ রান করে আউট হন। এরপর জাদেজা ১৩ বলে করেন ১৩ রান। জাদেজার সঙ্গে ৪১ রানের জুটির ২৭ রান একাই করেন কোহলি।
ভারতের অধিনায়ককে ফিরিয়ে রানের চাকায় লাগাম টেনেছিলেন আফ্রিদি। কিন্তু শেষ ওভারে ১৭ রান খরচ করে নিজের বোলিং ফিগার নষ্ট করেন। ৩১ রানে ৩ উইকেট নেন বাঁহাতি পেসার। ৪৪ রানে ২ উইকেট পেয়েছেন হাসান আলী।
ম্যাচে পাকিস্তানের বোলাররা নিজেদের কাজ ঠিকঠাক মতো করেছেন। আর ব্যাটাররা ছিলেন ধ্রুপদী। দুইয়ে মিলিয়ে পাকিস্তান যেন উড়ল সপ্তমস্বর্গে।
উল্লেখ্য, ৫০ ওভার কিংবা ২০ ওভারের সংস্করণে ভারতকে বিশ্বকাপের মঞ্চে কখনোই হারাতে পারেনি পাকিস্তান। এর আগে ১২বারের মুখোমুখিতে প্রতিবারই ফিরতে হয়েছে হার নিয়ে। আজ সে ইতিহাস বদলাতে পারল পাকিস্তান।