নির্বাচন কমিশন গঠনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠিত সংলাপে মোট তিনটি প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। সোমবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় টানা ২ ঘণ্টা সংলাপ শেষে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে গণমাধ্যমকে এমন তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আন্তরিকভাবে বিস্তারিত আলাপ আলোচনা হয়েছে। আমাদের তরফ থেকে আমরা তিনটি প্রস্তাব দিয়েছি।’

জি এম কাদের বলেন, আমরা যে তিনটি প্রস্তাব করেছি তার একটি হল-নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন প্রণয়নের প্রস্তাব। সংবিধানের সপ্তম ভাগে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে উল্লেখ আছে। এখানে অনুচ্ছেদ ১১৮(১) উল্লেখ আছে “প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশে একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোন আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।’’

জিএম কাদের বলেন, আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে বলেছি, একজন যোগ্য এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করতে। কিভাবে করা হবে সেটা নির্বাচন কমিশন আইনে সুষ্ঠু ভাবে ব্যাখ্যা থাকতে হবে। যাতে করে ওই গাইডলাইন নিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সে রকম ব্যক্তিকেই নির্বাচিত করতে পারেন।

তিনি বলেন, যারা যোগ্য এবং সবার কাছে মোটামুটি গ্রহণযোগ্য এমন মানুষ কে নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করলে আমরা আশা করছি, অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য একটি ভালো নির্বাচন কমিশন আমরা পেতে পারি।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, একই সঙ্গে আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে এটাও বলেছি নির্বাচন কমিশন গঠন করলেই হবে না, নির্বাচন কমিশনকে তাদের কর্তৃত্ব দিতে হবে। সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে হবে পরিষ্কার বলা আছে যে, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে। আমরা বলেছি যে এই বিষয়টি সংবিধানের থাকলেও বাস্তবে আমরা এর বাস্তবায়ন দেখছি না। এজন্য আমরা মনে করি সংবিধানের এই বিধানটি কে একটি আইনের আওতায় আনা উচিত। এরপর তারা যদি এ আইন না মানেন, তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা উচিত। তাদের কি ধরনের শাস্তি হবে সেটাও সুস্পষ্ট ভাবে সেখানে উল্লেখ থাকতে হবে। তাহলে নির্বাচন কমিশন এই শক্তির বলে নির্বাহী বিভাগ কে যেকোনো বিষয়ে বাধ্য করতে পারবে।

জিএম কাদের বলেন তারপরও আমরা বলেছি যেহেতু উনাদের সঙ্গে সময় সংক্ষিপ্ত তার একটা কথা আছে। অল্প সময়ের মধ্যে আইনটি করা উনাদের সম্ভব হবে কিনা। আইনটি করার দায়িত্ব সরকারের আমরা বলেছি সরকার যদি আইনটি করতে চান করতে পারেন। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা চান আমরা করতে পারি এমনকি সরকার যদি আমাদের আইনটি প্রণয়ন করতে বলেন আমরা তাতেও রাজি আছি।

সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশন আইন করা সম্ভব কি-না জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা মনে করি সম্ভব তবে সরকার যদি মনে করে সম্ভব নয়, তাহলে বিকল্প হিসাবে আমরা আরেকটি প্রস্তাব দিয়েছি। যে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংসদের আগেই এটিকে পাস করিয়ে নিতে পারেন। পরবর্তীতে সংসদ অধিবেশনে এটিকে অনুমোদন করা যেতে পারে। এটা নিয়ম আমাদের সংবিধানে আছে আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে প্রস্তাবে জানিয়েছি।

জিএম কাদের বলেন, আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে বলেছি, যেহেতু উনি আমাদের দলকে ডেকেছেন, যদি অধ্যাদেশের মাধ্যমে না করতে পারেন তাহলে যেটি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে করা হয়, সেটিও আপনারা করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সার্চ কমিটি গঠনের জন্য কিছু যোগ্য ও নিরপেক্ষ ব্যক্তির যাদের আমরা মনে করি, তাদের নামের তালিকা আমরা দিয়েছি। তবে সেটা আমরা প্রকাশ করব না।

সার্চ কমিটির কয়জনের নামের তালিকা দিয়েছেন জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা চার থেকে পাঁচ জনের নামের তালিকা দিয়েছি। তারপরও আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে বলেছি আপনি যদি যোগ্য ও নিরপেক্ষ ব্যক্তি কে নিজেই নিয়োগ করতে চান সে ক্ষেত্রে আমরা কিছু সাজেশন দিয়েছি।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি আমাদের প্রস্তাবগুলো শুনেছেন এবং সেগুলো বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি যাদেরই প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিবেন তাদের অধীনে আপনারা নির্বাচনে যাবেন কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা নির্বাচনে যাবো না’ এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।